Kripa's blog
Kripa's poems and views
Wednesday, 21 July 2021
বাঁশি
পথে হয়েছিল দেরি
Friday, 26 February 2021
অনুরাগ
Tuesday, 9 February 2021
দেখা
Friday, 29 January 2021
The Ventriloquist
Sunday, 22 November 2020
খোশগল্প
(১) কাকতালীয়?
Friday, 23 October 2020
স্বপ্ন
(১)
Saturday, 26 September 2020
কোভিডমাঝে অমরাবতী
করোনার দাবানলে বিশ্ব সন্ত্রস্ত। এর আঁচ সমগ্র মানবজাতিকে স্পর্শ করেছে। কেউ নিজে আক্রান্ত, কারো আত্মীয়-পরিজন-বন্ধু। কেউ আক্রমণের ভয়ে সন্ত্রস্ত। আবার কেউ এই দুর্ধর্ষ শত্রুর বিরুদ্ধে সংগ্রামে ব্রতী। স্বাস্থকর্মী, পুলিশ প্রভৃতি ঈশ্বরের প্রতিনিধিরা এই দুর্বিনীত মহাশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন মানুষের কল্যাণে, নিজের জীবন বিপন্ন করে । তেমনই চিত্র এক সরকারী হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ডে । পিপিই-বর্ম পরে অসংখ্য ডাক্তার, নার্স স্বাস্থ্যকর্মী ততোধিক রোগীর সেবায় আত্মনিয়োজিত প্রাণ।
ডঃ রিয়া বসু । এই সরকারী হাসপাতাল থেকেই সম্প্রতি সম্মানের সাথে এম.বি.বি.এস পাস করেছে । ভালো কোনো জায়গা থেকে এম.ডি. করার ইচ্ছে । কিন্তু এই পরিস্থিতি তাতে বাধ সেধেছে । এই কলেজ-হাসপাতালের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ভারী প্রিয় রিয়া । তাই কোভিড ওয়ার্ডে এই সংগ্রামের ডাক সে উপেক্ষা করতে পারে নি । তা ছাড়াও আর্তের কষ্টে চিরকালই তার প্রাণ কাঁদে । হয়তো সেই জন্যেই রিয়া ডাক্তারী পড়ার সিদ্ধান্ত নেয় । কৃতী ছাত্রী হওয়ায় সে পথও সুগম হয়েছে ।
এই ওয়ার্ডে কয়েকজন রোগীর ভার পড়েছে রিয়ার ওপর । তাদের মধ্যে অন্যতম স্বপ্নময় মিত্র । দিল্লি আই.আই.টি থেকে পিএইচডি করার পর আমেরিকায় পোস্ট ডক্টরাল রিসার্চ করছিলো । অসামান্য মেধাবী ছাত্র হওয়া ছাড়া স্বপ্নময়ের একটি মহৎ গুণ ছিল । সে ছিল মানব-দরদী । মানুষের বিপদ দেখলেই সে আর স্থির থাকতে পারে না । এবারেও তাই হলো । করোনার আগ্রাসনে বিপন্ন আমেরিকা থেকে ফিরেই সে দেশের মানুষের সেবায় আত্মনিয়োগ করলো । তারপর এলো আমফানের বজ্রথাবা । ত্রাণ সংগ্রহ এবং বিতরণের কাজে মজে গেলো স্বপ্নময় । কিন্তু করোনা নির্মম, বিবেকহীন । সাধু-অসাধুর তফাৎ করেনা, রেয়াত করেনা । হঠাৎ প্রচন্ড জ্বর, স্বাস কষ্টের ঢেউ তাকে আছড়ে ফেললো এই কোভিড ওয়ার্ডে ।
রিয়া অবশ্য স্বপ্নময়ের ব্যাপারে কিছুই জানে না । তার কাছে স্বপ্নময় আর একজন রোগী মাত্র । তবুও প্রথমবার স্বপ্নময়ের কষ্টে ম্লান মুখখানি দেখে মায়া হয়েছিল তার । মায়া অবশ্য রিয়ার অসুস্থ মানুষ দেখলেই হয় । কিন্তু এই মায়া বোধ হয় একটু অন্য রকম । কেন ? তা রিয়া বোধ হয় জানে না ।
একদিন স্বপ্নময়ের খুব জ্বর । ঘোরে ভুল বকছে
'মা ... মা ভালো আছে ? মা ..'
স্বপ্নময়ের মা-ই তার একমাত্র আশ্রয় । বেশ কিছুদিন হলো বাবাকে হারিয়েছে সে । মায়ের কোভিড টেস্ট নেগেটিভ । তাও তাঁকে সেলফ ক্যাণ্টিনে রাখা হয়েছে ।
রিয়া তখন স্বপ্নময়ের পাশে, সে বলে
'আপনার মা ভালো আছেন ..আপনি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুন ..ওনাকে দেখতে পাবেন '
স্বপ্নময় বলতে থাকে
'তপন ..বাপ্পা .. সুন্দরবনে ফুড প্যাকেট পাঠিয়েছে? ..ব্যাঙ্ক ট্রান্সফার করা হলো না। ...টাকা জোগাড় কি করতে পারবে ওরা ?'
বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়লো স্বপ্নময় । কথাগুলো দাগ কাটলো রিয়ার মনে ।
একমাসের ওপর হলো রিয়া বাড়ি ফেরেনি । সে তার কলিগ ললিতার সাথে হাসপাতালের কাছেই একটা বাড়ি ভাড়া করে থাকছে এ কদিন । রান্না বান্না তারাই কোনোরকমে করে চালাচ্ছে । কোনো কোনোদিন এমার্জেন্সি থাকলে হাসপাতালেই থেকে যেতে হয় । রিয়ার মা নেই, শৈশবেই গত হয়েছেন । বাবা আর বিয়ে করেননি । রিয়ার এক দাদা আছে । রক্তিম । ডাক নাম রুকু । সে লন্ডন-এ সেটলড । বাড়ি থেকে রিয়ার বিয়ের চিন্তা ভাবনা চলছিল । রিয়ার বাবার এক বাল্যবন্ধু অম্লান রায় । মস্ত ব্যবসাদার, কোটিপতি । তাঁর ছেলের সাথে বিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে রিয়ার বাবার সাথে কথা বলেছেন তিনি । এক ফ্যামিলি ফাঙ্কশন এ তাঁরা রিয়াকে দেখেন । রিয়া বেশ সুশ্রী। রুচিশিলা । মার্জিত নরম স্বভাব । কারো মুখের ওপর কথা বলতে পারে না । রিয়া তাই প্রথমে আপত্তি করেনি । তবে অম্লান বাবুর এই কথায় সে যেন বিদ্যুস্পৃষ্ট হয়ে পরে --
'আমার এতো ব্যবসা, এতো সম্পত্তি, বাড়ি গাড়ি সবই আমার ছেলে পাবে । একমাত্র ছেলে । বাড়ির বৌ আর অত লেখাপড়া, চাকরি বাকরি করে কি করবে ? ডাক্তারীতে অনেক ঝক্কি ! দিন নেই রাত নেই । রোগীর সবা করো । এটা একটা লাইফ হলো ? আমার বাড়িতে আরামে থাকবে, পায়ের ওপর পা তুলে..হা হা "।
বাল্যবন্ধু বলে রিয়ার বাবাও কিছু বলতে পারেননি । অম্লান বাবুর ছেলেটি ফরওয়ার্ড গোছের । প্রথম দেখার পর ফোন নম্বর চায়, তারপর কফি, সিনেমা ইত্যাদির প্রস্তাব । রিয়া নানা অজুহাতে এড়িয়ে গেছে নরম ভাবেই । কিন্তু ক্রমে রিয়ার দম বন্ধ হয়ে আসছিলো । স্বপ্নময়ের আবির্ভাব তার মনের জানলা আবার খুলে দিয়েছে ।
আর একদিন । স্বপ্নময়কে খুব অস্থির দেখে রিয়া তার কাছে গেলো । তখন স্বপময়ের বেশ জ্বর । অপ্রকৃতস্থ অবস্থা । তাকে দেখেই স্বপ্নময় বলে উঠলো
"দেখুন না ডক্টর এরা আমায় আমার মোবাইলটা দিচ্ছে না । মায়ের খবর পাচ্ছি না । মা নিশ্চই আমার চিন্তায় আহার নিদ্রা ত্যাগ করেছে।.."
বলেই কেশে উঠলো স্বপ্নময় । রিয়া তাকে বললো
"আপনি এতো উত্তেজিত হবেন না দয়া করে । আপনার মা ভালো আছেন । আমরা নিয়মিত খবর দিচ্ছি ওনাকে ।"
"আপনারা বুঝতে পারছেন না । কত লোকের বাড়ি ভেঙে গেছেন জানেন ? কত লোকের কাজ নেই, তারে খাবে কি? সরকারের ত্রাণ পৌঁছাতে পৌঁছাতে সবাই না খেয়ে মরে যাবে । ওরা টাকা জোগাড় করতে পারলো কিনা কে জানে ? এতগুলো অসহায় মানুষ । আর আমি কিনা বেডে শুয়ে আছি !"
বলে আবার কেশে উঠলো । একটু শ্বাসকষ্ট হচ্ছে স্বপ্নময়ের । রিয়া স্বপ্নময়ের পাশে বসলো । স্বপ্নময়ের চোখের চাহনিতে কি একটা ঔজ্জল্য রয়েছে, এই রুগ্ন চেহারাতেও তা স্পষ্ট । যেন অগ্নিশুদ্ধ সোনার মতো । কর্মযোগীর তেজোদীপ্তি যেন । রিয়া বললো
"দেখুন, আপনি যদি সুস্থ না হন তাহলে ওদের জন্যে কিছু করতে পারবেন কি ?"
স্বপ্নময় মাথা নিচু করলো । রিয়া বলে চললো
"আপনি খুব তাড়াতাড়ি সেরে উঠুন । অনেকে আপনার মুখের দিকে চেয়ে আছে ।"
রিয়া জানে অনেকের মধ্যে সেও একজন ।
স্বপ্নময়ের মুখে এবার হাসি ফুটে উঠলো । কি প্রশান্ত, কি পবিত্র সে হাসি যা রিয়ার মনে হাজার পারিজাতের সুবাস ছড়িয়ে দেয় ।
সেদিন রিয়া গিয়ে দেখে স্বপ্নময়ের বেড খালি । গতকালই বেশ অসুস্থ ছিল সে । বুকের ভেতরটা ছাঁত করে উঠলো রিয়ার । রাতের শিফ্টের কাউকে পেলো না । হঠাৎ শুনলো ওয়ার্ড বয় বলছে "বেড নং ৫ এমার্জেন্সিতে। ..অক্সিজেন লাগবে .."। স্বপ্নময়ের বেড নং ৫! তাকে জিজ্ঞেস করতে জানা গেলো হঠাৎ স্বপ্নময়ের অবস্থার অবনতি ঘটেছে । হঠাৎ প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হয় রাত ৩টে নাগাদ, অনেক জ্বর । তাকে এমার্জেন্সিতে ভেন্টিলেটর-এ রাখা হয়েছে । সম্প্রতি অনেক করোনা জনিত মৃত্যু দেখেছে রিয়া । বৃদ্ধ, তরুণ অনেকর মৃত্যু । কিন্তু স্বপ্নময়ের এ পরিস্থিতি যেন বুকের ভেতরটা তোলপাড় করে দিলো রিয়ার । সে ছুটে গেলো এমার্জেন্সিতে । দেখলো স্বপ্নময়ের নাকে-মুখে ভেন্টিলেটর, আরও লাইফ সাপোর্ট । পালস স্টেবল নয়, মাঝে মাঝে সিংক করছে । আর সিনিয়র ডাক্তার এই মুহূর্তে কেউ নেই । রিয়া চোখ বন্ধ করে স্নায়ু শক্ত করে নিলো । সামনে কঠিন যুদ্ধ । এ যুদ্ধ যেন সে নিজের জন্যেই লড়ছে ।
এই ভাবে ৫০ ঘন্টা কাটলো । রিয়া এমার্জেন্সি থেকে নড়েনি । অভিজ্ঞ ডাক্তার পরের দিকে এসেছিলেন । কিন্তু রিয়া তার আহৃত সমস্ত ডাক্তারি বিদ্যা উজাড় করে দিয়েছে । রিয়া খুবই মেধাবী ছাত্রী ছিল । সেই কারণেই সে তার ডাক্তার শিক্ষক শিক্ষিকাদের এতো প্রিয় । আজ তার শিক্ষা সার্থক । স্বপ্নময় চোখ খুলেছে । জ্বর নেই । মুখে সেই স্বপ্নময় হাসি ।
আজ স্বপ্নময় অনেকটাই সুস্থ । ১৫ দিন হয়ে গেলো । এবার তাকে তাড়াতাড়ি ছেড়ে দেওয়া হবে । রিয়া আজ আবার স্বপ্নময়কে দেখতে গেছে । স্বপ্নময়ের মুখে সেই হাসি ফুটে আছে । সে রিয়াকে বলে
"ড: বসু কি বলে যে আপনাকে কৃতজ্ঞতা জানাবো! "
পিপিই -তে মানুষ চেনা যায়না । রিয়ার বুকের কাছে তার আই ডি কার্ড ছিল । তাই দেখেই স্বপ্নময় তাকে চিনেছে ।
"..আমি শুনলাম আপনি আমায় যমের হাত থেকে বাঁচিয়ে এনেছেন। ..আপনার কাছে আমি চিরঋণী হয়ে গেলাম .."
রিয়ার মনে আজ হাজার পারিজাত ফুটে উঠেছে স্বপ্নময়কে সুস্থ পেয়ে, তার স্বপ্নময় হাসিতে । তার মনের ভাব হয়তো স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে তার ডাগর চোখে, সুশ্রী মুখে ফুটে উঠতো । কিন্তু পিপিই ভেদ করে তা অবলোকন করা স্বপ্নময়ের সাধ্য নয় । মনের ভাব গোপন করার আপ্রাণ চেষ্টা করে রিয়া বলে
"এ কি বলছেন ছি ছি । এতো আমাদের ডিউটি ।"
"ডিউটি আজকাল এতো নিপুণ ভাবে কজন পালন করে বলুন! তার জন্যে একটা একাগ্র মন থাকা চাই, নিষ্ঠা থাকা চাই । "
বলে স্বপ্নময়ের হাসি দ্বিগুণ হয়ে ওঠে ।
রিয়া ভাবে, ও কি তার মনের কথা বুঝে গেলো ? তারপরই মনে হলো কাল যদি ওকে ছেড়ে দেয় , যোগাযোগ হবে কি ভাবে ? যদি না হয় ? তাহলে কি করবে রিয়া ? কন্টাক্ট নাম্বার চাইবে ? কিন্তু সেটা কি করে চাইবে সে ? না না ! তা কিছুতেই পারবে না রিয়া ! রিয়ার নীরবতা ভেঙে স্বপ্নময় বলে
"সুন্দরবনে অনেক লোক খাবার জল, চাল, ডাল পেয়েছে জানেন । আমি কিছু টাকা ট্রান্সফার করলাম । আপনারা আমায় আমার ফোন ব্যবহার করতে দিয়েছেন বলে অনেক ধন্যবাদ । আরো অনেকে এগিয়ে এসেছে । এতদিনে সরকারের ত্রাণও এসেছে ।"
রিয়া কিছু না ভেবেই যেন বলে ফেললো
"আমার পরিচিত যদি কেউ ডোনেট করতে চান. . মানে করোনা বা এই ধরণের কাজে ..তাহলে?...আমি কি আপনাকে বলতে পারি ?"
স্বপ্নময় যেন আনন্দে লাফিয়ে উঠলো ! বললো
"বাঃ সে তো বেশ ভালো কথা ! আপনি আমার সাথে যোগাযোগ করুন । আপনার হোয়াটস্যাপ নম্বর বলুন ।"
রিয়া বলে । সঙ্গে তার মনের জানলা থেকে পারিজাতের সুবাস এসে তার মনটা ভরিয়ে দিলো ।
কিছুদিন কাটে । রিয়ার ধকল আরও বাড়ে । স্বপ্নময়ের সাথে আর যোগাযোগের সুযোগ হয়না । একদিন রাতে ঘরে ফিরে দেখে স্বপ্নময় হোয়াটসআপ করেছে
"সরি আপনার নম্বর তা সেদিন সেভ করলাম, কিন্তু আপনার সাথে যোগাযোগ করিনি । আজ মা সেদিনের ঘটনার কথা জেনে আপনাকে অনেক আশীর্বাদ জানাতে বললো । তাই জানালাম :-) ভালো আছেন তো ?"
রিয়ার সব ক্লান্তি নিমেষে মুছে গেলো, লিখলো
"আপনি ভালো আছেন তো ? এখন আর বেরোবেন না যেন। "
":-) সে দেখা যাবে"
"দেখা যাবে মানে? আবার অসুস্থ হলে ?"
"আপনি রয়েছেন তো । সামলে নেবেন :-)"
রিয়া চুপ করে গেলো । তার মুখে এক প্রশান্ত হাসি । এবারেও স্বপ্নময় তা দেখতে পেলো না । রিয়ার মন জুড়ে স্বপ্নময় স্বর্গের আবেশ, কোটি কোটি পারিজাত তাতে প্রস্ফুটিত । রিয়া ক্রমশঃ অবচেতনের গহীনে তলিয়ে যেতে লাগলো । হাত পা অবশ হয়ে এলো । ললিতা রান্না ঘরে ছিল । কি একটা শব্দ পেয়ে দৌড়ে এসে রিয়ার অচেতন দেহ দেখতে পেলো ।
রিয়া এবার চোখ খুলেছে । সে হাসপাতালের বেডে । নার্স পাশেই ছিল, বললো
"আপনি অনেকদিন অজ্ঞান ছিলেন । ব্রিদিং ট্রাবল । করোনা টেস্ট হলো । নেগেটিভ ।"
রিয়ার কিছু মনে নেই । শরীর খুব দুর্বল ।
ডাক্তার এলেন । ডঃ মুখার্জী । সিনিয়র সার্জন । রিয়ার প্রিয় মাস্টারমশাই । এনার অনুরোধেই রিয়া কোভিড ওয়ার্ড-এ আসে । ডঃ মুখার্জী রিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন
"ওভার ওয়ার্ক হয়ে গেছে মা । বাড়ি গিয়ে রেস্ট নাও । অনেক ধকল গেছে । "
রিয়ার বাবা এসে নিয়ে গেলেন রিয়া কে । রাস্তায় যেতে যেতে বললেন
"উফ ! কেন মা জেদ করে গেলি বল ! তোর কিছু হয়ে গেলে ?"
রিয়া চুপ করে মাথা নিচু করে রইলো । বাবা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন
"ও হ্যাঁ । স্বপ্নময়ের মায়ের সাথে কথা হলো । "
নামটা শুনেই রিয়ার মনে সেই পরিচিত সুবাস আবার অনুভূত হলো । সে বিষ্ফারিত চোখে বাবার দিকে চাইলো । বাবা মেয়ের মাথায় আলতো হাত বুলিয়ে বললেন
"এ এক অদ্ভুত যোগাযোগ জানিস । স্বপ্নময় রুকুর স্কুল ফ্রেন্ড । ফেসবুক এ কথা বলতে বলতে বেরিয়ে পরে তুই রুকুর বোন । তুই দাদাকে বলেছিলিস অম্লানের ছেলেকে তুই বিয়ে করতে চাসনা ?"
রিয়ার মাথা নিচু হয়ে গেলো ।
"আমিও ঠিক চাইছিলাম না জানিস । কিন্তু ওই তো জানিস আমার স্বভাব, মুখের ওপর না বলতে পারি না"
রিয়ার মুখে প্রশান্ত হাসি ফুটে উঠেছে ।
"ছেলেবেলার বন্ধু তো ..যাগগে ! রুকুর মাধ্যমে স্বপ্নময় ও ওর মা তোর ব্যাপারে আরও জেনেছে । উনিও স্বপ্নময়ের জন্যে পাত্রী দেখছিলেন ..আমিও জানলাম ওর ব্যাপারে।...হীরের টুকরো ছেলে ! আই.আই.টি খড়গপুরে ফ্যাকাল্টি পসিশন পেয়েছে জানিস! ও জয়েন করতেই ফিরেছিল আমেরিকা থেকে । "
রিয়ার মনে অমরাবতীর ঢেউ উথাল পাথাল করছে । সে বাবার হাত ধরে বাবার কাঁধে মাথা রেখেছে । খুব আনন্দ হলে সে তাই করে ।
বাড়ি ফিরে রিয়া হোয়াটসাপে টোন শুনে খুলে দেখে স্বপ্নময়
"কি ডোনেশন এর কি হলো ? :-)"
রিয়া উত্তরে স্মাইলি দিলো
"এই জন্যেই তো আমার নম্বর চেয়েছিলেন? নাকি?"
রিয়া চুপ করে রইলো । লজ্জায় অনুরাগে সে আবিষ্ট । অনেক কষ্টে সামলে নিয়ে লিখলো
"শুনলাম আপনি আই.আই.টি তে ফ্যাকাল্টি পসিশন পেয়েছেন । কৈ একবারের জন্যেও তো বলেননি আমায় !"
স্বপ্নময় লিখলো
":-) ওসব ছাড়ুন ...আপনাকে তো দেখতে গেছিলাম হাসপাতালে । আপনি সেন্সলেস ছিলেন । আমায় ললিতা বললো। মা কে বলি, মা তো কান্না কাটি করে একশা । যাক তারপর রুকুর থেকে জানলাম আপনি ওর বোন । এদিকে মায়ের নাকি আপনাকে ভারি পছন্দ ! হোয়াটস্যাপ, ফেসবুকে আপনার ছবি দেখে, আপনার কথা শুনে । আমি বললাম -- বোঝো কান্ড! এদিকে রুকুও বলে -- তুই ছিলি কোথায় ভাই! এদিকে আমার বোনটা তো অপাত্রে দান হয়ে যাচ্ছিলো :-) :-)
কি হলো? আছেন তো?"
রিয়া তখন যেন স্বপ্নাচ্ছন্ন । স্বপ্নময়ের প্রশ্নে সম্বিৎ ফিরলো । লিখলো
"হ্যাঁ "
"যাক ! রুকু আর আমার মা মিলে তো সেমিফাইনাল করে ফেলাইছে । কিন্তু ফাইনাল রাউন্ডটা বাকি, বুঝলেন তো ।"
রিয়া অবাক হয়ে লিখলো
"মানে?"
"মানে পাত্র পাত্রীর মত তো চাই নাকি ?? :-)"
রিয়া এতক্ষণে লজ্জায় আরক্ত হয়ে গেছে । অনেক কষ্টে একটা স্মাইলি দিলো । স্বপ্নময় বললো
"মানে শুধু আপনার মত পাওয়াই বাকি আর কি :-)"
রিয়ার দেহে মনে সেই সুবাস হিল্লোলিত । এবার সে জ্ঞান হারাবে না । কিন্তু সে কি হারিয়েছে তা সে প্রথম দিন থেকেই জানে ।