গতকাল CIKM এ আমার পোস্টার প্রেসেন্টেশন ছিল | আমার থেকে এক পোস্টার দূরে যে ছেলেটি দাঁড়িয়ে ছিল তার নাম আশিকুর খুদাবক্স | খুদা গবাহ ছবিতে ড্যানি ডেনজংপার চরিত্রের নাম ছিল খুদাবক্স | সে ছিল দোর্দণ্ড প্রতাপ আফগান পাঠান ! আমার প্রতিবেশীকে দেখে অবস্য আফগান মনে হয়না | ছিমছাম, শান্ত, ছিপছিপে চেহারা, বুদ্ধি-দীপ্ত চোখ | কি একটা জটিল ক্লাসিফিকেশন নিয়ে কাজ করেছে | আমাদের প্রায়ই চোখাচোখি হচ্ছিল | আমি এমন অবস্থায় নিজেই আগে কথা বলি | তবে এক্ষেত্রে নামের নিচে এফিলিয়েশন - CMU, কম্পিউটার সায়ান্স ডিপার্টমেন্ট দেখে আর সাহস করে এগোচ্ছিলাম না ! পোস্টার হাটে লোক জমছিল | কৌতূহলী কয়েকজন শ্রোতাকে আমার কাজ বোঝালাম | মাঝে অস্ট্রলিয়ান আঞ্চলিক অনুষ্টান হলো | আদিবাসীদের অদ্ভুত গানে ও দিদগেরিদুর বিকট আওয়াজে কনফারেন্সের শান্ত পরিবেশ শব্দময় হয়ে গেছিল প্রায় ১৫ মিনিট ! পোস্টার পর্ব ঘন্টা দুএক চললো | হাট ভাঙ্গার সময় হয়ে এলো | আমি পাত্তারি, মানে, পোস্টার গোটাব কিনা ভাবছি এমন সময় মাতৃ-ভাষা শুনতে পেলাম "কলকাতা থেকে তো ?" অবাক বিস্ময়ে দেখি আমার ঠিক পাশেই আশিকুর দন্ডায়মান ! আফগান পরিষ্কার বাংলা বলছে? আমি উত্তর দিলাম "হ্যান কলকাতায় বাড়ি ..এখন আসছি বেলজিয়াম থেকে" খুদাবক্স বললো "আমার বাড়ি কাল্যানিতে..CMU থেকে পিএইচডি করছি" | কমলেস্বরের চাঁদের পাহাড় ছবিতে খোদ পর্তুগিজ দিয়েগো আলভারেজ বাংলা বলেছিল | যদি পর্তুগিজ পারে তাহলে আফগান পারবে না কেন ? যদি তার জন্ম কাল্যানিতে হয় তাহলে হতেই পারে ! এইভাবে আমাদের কথাবার্তা শুরু হলো আর দেখতে দেখতে দিব্বি বন্ধুত্ব জমে উঠলো | পরে জানলাম খুদাবক্স হলেও আশিকুর আসলে বাঙালি | তার ওপর মা বিয়ের আগে ঘোষ ছিলেন ! বাবা কোনো ভাবে আফগান ছিলেন কিনা সেটা অবস্য জানা হয়নি | আর রবি ঠাকুরের গোরা যদি আইরিশ মাতার সন্তান হয়েও বাঙালি হতে পারে, তাহলে আফগান সন্তান পারবে না কেন?
এর পর আমরা একসাথে ডিনার করলাম এক মেক্সিকান রেস্তোরায় | জানলাম আশিকুরের ব্যাচেলর্স কল্যানী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে | তারপর GRE দিয়ে ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিটিশ কলম্বিয়াই মাস্টার্স | আরও জানলাম ইনি নিজে কবিতা গান উপন্যাস লেখেন | গানে সুর করেন আর নিজেই গান ! আর সেই গান নাকি আমায় শোনাবেন ! আমার হোটেলে wifi কিনতে হয় | আমার কিছু দরকারী মেল চেক করার ছিল | সেটা ওকে বলায় ও বললো "আমার হোটেলে আমার নেট ব্যবহার করবে চল" | শেষে ওর প্রস্তাবে রাজি হতে হলো | আমার হোটেলের কাছেই ওর হোটেল | ওর ঘরে নিয়ে গিয়ে আমায় নেট করতে দিলো | আর বললো "আমি একটু সাঁতার কেটে আসি, তুমি ততক্ষণ কাজ করে নাও..আমি এসে গান শোনাব" | বাবু সাঁতারও কাটেন ! আমি রাজি হলাম | নেট জলের মত, যা ছাড়া জীবন চলে না ! এই মরুভূমির দেশে যে আদর করে নেটের তৃষ্ণা মেটাচ্ছে তার অনুরোধ ফেলি কি করে ! কাজেই আশিকুর গেলো জলে, আমি স্থলে নেট সমুদ্রে সাঁতার কাটলাম | ঘন্টা আধেক পর সাঁতারু ফিরে এলেন | সাধারণত নাকি ইনি ৪৫ মিনিটের মত সাঁতার কাটেন | কিন্তু আজ বোধ হয় শ্রোতাকে গান শোনাবার উত্তেজনায় তাড়াতাড়ি চলে এসেছে ! এবার গানের পালা | আমি প্রস্তুত হলাম | আশিকুর গিটার টিউন করতে করতে গান ধরল | পর পর দুটো গান | একটা বাংলা, একটা হিন্দি | শুনে চমকে গেলাম ! বেশ ভালো ! বিশেষ করে হিন্দিটা | লেখা সুর গায়কী তিনটেই চমত্কার ! জানলাম শিল্পী ছোট থেকেই গান শিখেছেন -- রবীন্দ্র, নজরুল, ক্লাসিকাল | গিটারও শিখেছেন ! একটা বাংলা সিনেমায় নাকি সুর দেওয়ার কথা অনেক দূর এগিয়েছিল | শেষে নাকি তার জায়গায় স্বনামধন্য প্রিতমকে নেওয়া হয় | তাতে শিল্পীর খুব দুঃখ ! এর পর কবিতার পালা | সেটাও বেশ চমকপ্রদ ! বেশ হালের স্টাইলএ লেখা | ভাবের গভীরতা রয়েছে, পরিপক্কতা রয়েছে | কবির কবিতা নিয়ে বিস্তর পড়াশোনা ! নিয়মিত কিছু পত্রিকায় তাঁর লেখা বেরোয় | আমি এই কবিতা থেকে বুঝলাম আমি কবিতার জগতে অনেক যুগ পেছনে পরে আছি ! আমার কবিতা পরে আশিকুর বললো সেই একই কথা ! বললো কনটেম্পরারী কবিতা পড়তে হবে | আর বিভিন্য যুগের কবিতা পড়তে হবে | তাহলে কবিতার বিবর্তনটা বোঝা যাবে | সঙ্গে আমার লেখাতেও সেই বিবর্তন আসবে | বেশ কিছু কবির নাম জানলাম -- এদেশের ও বিদেশের, যাদের লেখা পড়লে এই আধুনিকতার দিকে যাত্রা করা যাবে | এছাড়া আশিকুর উপন্যাসও লেখে | এর খোরাক যোগার করতে নাকি রেড লাইট চত্তরের দালাল দের সাথে বন্ধুত্ব করেছে, ভিখারীদের জীবন সম্বন্ধে জানতে তাদের পাশে বসে তাদের লক্ষ্য করেছে | এছাড়া নাকি একা একাই বাইকে চড়ে কলকাতা থেকে বারানসী গেছে ! মাস্টার্সের পর বিদেশে Microsoftএ চাকরি করতো | তারপর CMUতে পাওয়ার পর চাকরি ছেড়ে দিয়ে বছর দের পর CMU যায় | এই দেড় বছর নাকি দেশ দেশান্তর ঘুরে বেরিয়েছে !
শুনেছি মাঝে মাঝে নির্বোধ মূর্খ ক্ষুদ্রবুদ্ধি মানুষের উদ্ধারে ঈস্বর দূত পাঠান | আমার মনের অজানা কোণে গোপন সিন্ধুকে বোধ হয় কিঞ্চিত অহংকার জন্মেছিল নিজের যোগ্যতা ও ক্ষমতা নিয়ে | আজ তা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেলো ! মহাবিশ্বের বুকে আমার অকিঞ্চিত্কর অবস্থান ও তুচ্ছতা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার জন্যই যেন বিধাতার এই খেলা ! তবে অন্যভাবে দেখলে এটা আত্মসুদ্ধি ও চেতনার মার্গও বটে ! এই ঘটনায় অবশ্য আমার একটুও আহত মনে হচ্ছে না | বরং অসীম প্রশান্তি খুঁজে পাচ্ছি নিজের মধ্যে | আশা করি বড় হওয়ার পথে এই শিক্ষা আমার পাথেও হয়ে থাকবে | এই জন্যে আমার ভাগ্যের কাছে আমি কৃতজ্ঞ |
এর পর আমরা একসাথে ডিনার করলাম এক মেক্সিকান রেস্তোরায় | জানলাম আশিকুরের ব্যাচেলর্স কল্যানী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে | তারপর GRE দিয়ে ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিটিশ কলম্বিয়াই মাস্টার্স | আরও জানলাম ইনি নিজে কবিতা গান উপন্যাস লেখেন | গানে সুর করেন আর নিজেই গান ! আর সেই গান নাকি আমায় শোনাবেন ! আমার হোটেলে wifi কিনতে হয় | আমার কিছু দরকারী মেল চেক করার ছিল | সেটা ওকে বলায় ও বললো "আমার হোটেলে আমার নেট ব্যবহার করবে চল" | শেষে ওর প্রস্তাবে রাজি হতে হলো | আমার হোটেলের কাছেই ওর হোটেল | ওর ঘরে নিয়ে গিয়ে আমায় নেট করতে দিলো | আর বললো "আমি একটু সাঁতার কেটে আসি, তুমি ততক্ষণ কাজ করে নাও..আমি এসে গান শোনাব" | বাবু সাঁতারও কাটেন ! আমি রাজি হলাম | নেট জলের মত, যা ছাড়া জীবন চলে না ! এই মরুভূমির দেশে যে আদর করে নেটের তৃষ্ণা মেটাচ্ছে তার অনুরোধ ফেলি কি করে ! কাজেই আশিকুর গেলো জলে, আমি স্থলে নেট সমুদ্রে সাঁতার কাটলাম | ঘন্টা আধেক পর সাঁতারু ফিরে এলেন | সাধারণত নাকি ইনি ৪৫ মিনিটের মত সাঁতার কাটেন | কিন্তু আজ বোধ হয় শ্রোতাকে গান শোনাবার উত্তেজনায় তাড়াতাড়ি চলে এসেছে ! এবার গানের পালা | আমি প্রস্তুত হলাম | আশিকুর গিটার টিউন করতে করতে গান ধরল | পর পর দুটো গান | একটা বাংলা, একটা হিন্দি | শুনে চমকে গেলাম ! বেশ ভালো ! বিশেষ করে হিন্দিটা | লেখা সুর গায়কী তিনটেই চমত্কার ! জানলাম শিল্পী ছোট থেকেই গান শিখেছেন -- রবীন্দ্র, নজরুল, ক্লাসিকাল | গিটারও শিখেছেন ! একটা বাংলা সিনেমায় নাকি সুর দেওয়ার কথা অনেক দূর এগিয়েছিল | শেষে নাকি তার জায়গায় স্বনামধন্য প্রিতমকে নেওয়া হয় | তাতে শিল্পীর খুব দুঃখ ! এর পর কবিতার পালা | সেটাও বেশ চমকপ্রদ ! বেশ হালের স্টাইলএ লেখা | ভাবের গভীরতা রয়েছে, পরিপক্কতা রয়েছে | কবির কবিতা নিয়ে বিস্তর পড়াশোনা ! নিয়মিত কিছু পত্রিকায় তাঁর লেখা বেরোয় | আমি এই কবিতা থেকে বুঝলাম আমি কবিতার জগতে অনেক যুগ পেছনে পরে আছি ! আমার কবিতা পরে আশিকুর বললো সেই একই কথা ! বললো কনটেম্পরারী কবিতা পড়তে হবে | আর বিভিন্য যুগের কবিতা পড়তে হবে | তাহলে কবিতার বিবর্তনটা বোঝা যাবে | সঙ্গে আমার লেখাতেও সেই বিবর্তন আসবে | বেশ কিছু কবির নাম জানলাম -- এদেশের ও বিদেশের, যাদের লেখা পড়লে এই আধুনিকতার দিকে যাত্রা করা যাবে | এছাড়া আশিকুর উপন্যাসও লেখে | এর খোরাক যোগার করতে নাকি রেড লাইট চত্তরের দালাল দের সাথে বন্ধুত্ব করেছে, ভিখারীদের জীবন সম্বন্ধে জানতে তাদের পাশে বসে তাদের লক্ষ্য করেছে | এছাড়া নাকি একা একাই বাইকে চড়ে কলকাতা থেকে বারানসী গেছে ! মাস্টার্সের পর বিদেশে Microsoftএ চাকরি করতো | তারপর CMUতে পাওয়ার পর চাকরি ছেড়ে দিয়ে বছর দের পর CMU যায় | এই দেড় বছর নাকি দেশ দেশান্তর ঘুরে বেরিয়েছে !
শুনেছি মাঝে মাঝে নির্বোধ মূর্খ ক্ষুদ্রবুদ্ধি মানুষের উদ্ধারে ঈস্বর দূত পাঠান | আমার মনের অজানা কোণে গোপন সিন্ধুকে বোধ হয় কিঞ্চিত অহংকার জন্মেছিল নিজের যোগ্যতা ও ক্ষমতা নিয়ে | আজ তা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেলো ! মহাবিশ্বের বুকে আমার অকিঞ্চিত্কর অবস্থান ও তুচ্ছতা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার জন্যই যেন বিধাতার এই খেলা ! তবে অন্যভাবে দেখলে এটা আত্মসুদ্ধি ও চেতনার মার্গও বটে ! এই ঘটনায় অবশ্য আমার একটুও আহত মনে হচ্ছে না | বরং অসীম প্রশান্তি খুঁজে পাচ্ছি নিজের মধ্যে | আশা করি বড় হওয়ার পথে এই শিক্ষা আমার পাথেও হয়ে থাকবে | এই জন্যে আমার ভাগ্যের কাছে আমি কৃতজ্ঞ |
No comments:
Post a Comment