Monday 6 April 2015

'ইয়ে'র দোষ

সকাল বেলা । নগেন বাবুর সাথে তপেন বাবুর সাক্ষাত ।

নগেন বাবু :    আরে তপেন বাবু যে ! প্রাতঃ ভ্রমন? নাকি বাজার ?
                  কিন্তু  সাতসকালে মুখখানি কেন এমন ব্যাজার ?

তপেন বাবু :   বলব কি আর মুখ ফুটিয়ে আমার ইয়ের কথা !
                  গত রাতে ইয়ের মাঝে লাগলো বেদম ব্যথা !      

নগেন বাবু :     আহা ! ব্যথায় বুঝি গুলিয়েছে সাতসকালে মাথা ?
                   চলুন বসে, চা খেতে খেতে বলবেন মনের কথা ?

দুজনের পাশের চাযের দোকানে প্রবেশ । এবার চায়ে চুমুক দিতে দিতে আবার কথোপকথন ।

নগেন বাবু  :  এবার  মশাই দুঃখ টুকু  করে ফেলুন শেয়ার,
                  দেখবেন কেমন হৃদয় খানি হয়ে যাবে ক্লিয়ার !

তপেন  বাবু  : বিয়ে করা ইয়ে আমার দিচ্ছে  ইয়ের ছেঁকা !
                  ইয়ে-জ্বালানো কথা তার দারুন ব্যাঁকা ব্যাঁকা !

নগেন  বাবু  : আহা  দাদা ! দিবারাত্র  গিন্নি  কেবল  দিচ্ছে  বুঝি  খোঁটা ?
                  বিনা  কারণে  প্রেস্টিজেতে মারছে বুঝি  ঝেঁটা ?

তপেন  বাবু  :    কারণ  একটি  আছে  মশাই ! সে তো নহে কম !
                    বুড়ো বয়সে কমেছে  যে আমার ইয়ের দম !

নগেন  বাবু  (একটু লজ্জিত  হয়ে, গলা  খাকরে, লঘু স্বরে ) :
                           
                   সে  মশাই এই  বয়সে একটু কমে যায় !
                এখন কি আর আগের মত তেমন ভালো হয় ?

তপেন  বাবু  (উত্তেজিত  হয়ে ) :

                        না না  মশাই ! এখনো আমার ভালই ইয়ের তেজ !
                        লেডিস কিটি পার্টিতে আমার ইয়ের দারুন ক্রেজ !

নগেন  বাবু  (উত্তেজিত  হয়ে ) : 
 
             বলেন কি মশাই ! হৃদয় আমার কাঁপচে শুনে যে !
                 পরস্ত্রীদের  সাথেও বুঝি করতে হবে ইয়ে ??

তপেন  বাবু  (নিজের মনে, নিরাশ  হয়ে) :           

                         একদিন, আমার ইয়ের গুণে কত সুন্দরী হয়েছে ফ্ল্যাট !
                         যেন প্রতি বলেই গ্লেন ম্যাকগ্রা বলেন  "হাউ ইস দ্যাট ?"

নগেন বাবু :             তখন মশাই আপনার কি হয়েছিল বিয়ে ?
                           ঘরে কি তখন অবস্থিতা বিয়ে করা ইয়ে ?

তপেন  বাবু :             
                      না মশাই ! তখন সুখে ইয়ে আমার দারুন ভালো  ছিল
                              
                          কেন মরতে ইয়ে করে  বিয়ে করতে  হলো !

                   তবে, তখন আমার জাঁদরেল ইয়েও আমার ইয়ের গুণে কাবু
                             ইয়ের সময় মুগ্ধ সেও বুঝলেন ইয়ে বাবু ?
 
নগেন  বাবু  লজ্জিত  হয়ে  নিরব । তপেন বাবু  ভাবের  ঘরে  বলে  চলেন :

                              মনে পরে আজও সেই মধুর ইয়ের রাত
                              ইয়ের সাথে ইয়ের সুখে হয়েছিল প্রভাত !

মধুর স্মৃতির চাপা আনন্দে তপেন  বাবু স্তব্ধ হলেন । মুখে মিটিমিটি হাসি । নগেন বাবু  কিছু বলতে ইতস্তত করছেন । অচিরে  তপেন  বাবুর সেই  বিরস বদন ফিরে এলো । তিনি  আবার  বলতে  লাগলেন :

                          গত রাতে ছিল মশাই আমাদের ইয়ের এনিভার্সারী
                            ঢাকায় টাঙ্গাইল কত রকম কিনে দিলাম  সাড়ি ।

                           খুশি হয়ে ইয়ে আমার করেন সেই আবদার
                           ফিরে আসুক পুরনো সেই ইয়ের পুষ্পহার !

                             বিয়ের রাতে সারা রাত করেছিলেম ইয়ে
                          প্রেমের দোলায় মজেছিল সে, ঘোমটা খুলে দিয়ে !
 
                            পুরানো সেই ইয়ের মজায় মজতে চায় আবার
                              আবার যেন রাত্রি খানি হয়ে যায় কাবার !

এবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে তপেন বাবু  বলেন :

                          কিন্তু হায় ! তেমন ইয়ের গুণ আমার নাই কো আর
                                সাধের  মধুর ইয়ে খানি হয়েছে অসার !

নগেন বাবু চরম লজ্জিত, ইষৎ বিব্রত হয়ে তপেন বাবুকে  সান্তনা দেওয়ার  চেষ্টা করছেন । তপেন বাবু  বলে চলেন :

                       এই সেদিন ওনার বাড়িতে, মিসেস মল্লিকের সাথেও করেছিলাম ইয়ে
                             মিস্টার মল্লিকও এসে দিলেন যোগ, হলো মিলিত-ইয়ে !

নগেন বাবুর আতঙ্কে প্রায় ওষ্ঠগত প্রাণ । সেদিনে দৃকপাত না করে তপেন বাবু বলে চলেন :
 
                          আমার  ইয়েতে মুদ্ঘ মিসেস মল্লিক হলেন ফ্যান
                            বললেন প্রতি  উইকেই  যদি ইয়ে করে  যান ..


নগেন বাবু  পালাবার পথ দেখেন । এমন সময় রেডিওতে  হেমন্তের গান ভেসে আসে  "এই  রাত তোমার আমার .. শুধু  দুজনে .." । শুনে তপেন বাবু চমকে ওঠেন । অকস্মাত তাঁর  চোখে জল, মুখে হাসি ফুটে ওঠে ..তিনি বললেন :

                              এই ইয়ে খানি..বিয়ের রাতে করেছিলাম ইয়ে
                              এই ইয়েতেই আমার গিন্নি হয়েছিলেন ইয়ে !
 
চরম বিস্ময়ে, নগেন বাবু বললেন

নগেন  বাবু  :        এত  ইয়ের গোলমালেতে আমার উড়ে গেছে ইয়ে !
                         গানই বুঝি আপনার সেই পুরনো দিনের ইয়ে ?
 
তপেন বাবু (মুখে ঐশ্বরিক আনন্দ) :

                              
                                  সংসার যদি না করতাম, করতাম শুধু ইয়ে
                               রেডিও জুড়ে  বাজতো শুধু আমারি গাওয়া ইয়ে !

                                                               
নগেন  বাবু  (বিশ্বয়ে , আনন্দে  ও  স্বস্তিতে ) :  

                                              ধন্য আপনার ইয়ে মশাই, ধন্য আপনার ইয়ে !
                                        তাহলে, আরেক পেয়ালা চায়ের সাথে হোক জমিয়ে  ইয়ে ?


বহু  অনুরোধের  পর  তপেন  বাবু  ইয়ে ধরলেন "নব আনন্দে জাগো .. জাগো .." । ওনার ইয়েতে ইয়ে হয়ে চায়ের দোকানে সমবেত  শ্রোতা মন্ডলী  ইয়ে ইয়ে করতে  লাগলেন ।

সমাপ্ত ।।
 
পুনশ্চ : উক্ত নাটিকায়, সব 'ইয়ে ' এক ইয়ে নয়, অনেক ক্ষেত্রেই এক মনে হলেও, কোনো কোনো ক্ষেত্রে  'ইয়ে' গুলি আলাদা আলাদা  ইয়ে । ভুল ত্রুটি হলে নিজ গুণে ইয়ে করে দেবেন কেমন ?
    
--

কৃপা