Thursday 11 December 2014

মিষ্টি সখী

মিষ্টি সখী দুষ্টু সখী
পাখির সাথে খেলা করো ;
খিলখিলিয়ে মন দুলিয়ে
ফুলের হাসি ফুটিয়ে তোলো ।

তোমার কোমল ছওয়া পেয়ে
পাথরে জাগে গো প্রাণ ;
তোমার হাসিতে হয় গো প্রিয়ে
সকল ব্যথার অবসান ।

কত সাধনার ফল গো তুমি
কত কৃপার দান ;
তোমায় পেয়ে গেয়েছি সখী
পরম সুখের গান ।।

দ্বইয়ের আইবুড়ো ভাত

আজি শুক্তি হৃদয়ে
মুক্ত ধারায়
প্রেমও সুধা কণা বহে ;
ফুলেরো কাননে
মনেরও মিলনে
প্রণয় ভ্রমর গাহে ।

একি মোহ ওগো !
পারিনা সহিতে
জীবন ভরিয়া যায় ;
না বলা কথা
কহিতে  প্রিয়ে
মরমে মরিয়া যাই !

তাই সখী ওগো
মিলিবো তোমাতে
সকল দুয়ার মেলিয়া ;
না বলা কথা
বলিতে তোমারে
আপন হৃদয় খুলিয়া  ।

--

দুএ মিলে কোরো
সাধের সাধনা
নয়নে নয়ন রাখিয়া ;
সুখ দুখ সব
ভাগা ভাগি কোরো
জ্যোত্স্না কিরণ মাখিয়া ।


--

লহ মোর
স্নেহাসিশ মাখা কামনা ;
ঈশ্বরের কাছে করি
তোমাদের অশেষ সুখের প্রার্থনা ।।

Monday 10 November 2014

শুভ জন্মদিন : অনির্বাণ

আরও  কত  আলোকবর্ষ  গেলে 
পাবে  সেই  স্বপ্নে  দেখা  আলোর  নিহারিকা ?
আরও কত নিদ্রাহীন রাত্রি শেষে মিলবে
ব্যথার  ব্যাথিনি ?
প্রশ্ন  কোরো  না  !
উত্তর  মিলবে  না !
শুধু  হাহাকার  হয়ে  ফিরে  আসবে 
সহস্র  নক্ষত্রের ধিক্কার নিয়ে !
থমকে  দাঁড়িও  না !
কোটি  কোটি  জ্বলন্ত  উল্কায় 
জ্বলে  যাবে, পুড়ে যাবে !
একটি  মৃত  তারার  মত,
আলোর  বেগে  আছড়ে  পড়বে
পৃথিবীর বুকে,
চুরমার হয়ে, ছারখার হয়ে !
ফেলো না চোখের জল !
বাস্পায়িত, ধূমায়িত হবে
প্রকান্ড নেবুলার মত !
বৃথা রক্ত ঝরিও না !
সব শুষে নেবে তৃষ্ণার্ত black holes 
বিনিময়ে দেবে শুধু 
পথ হারানো জমাট নিশ্ছিদ্র অন্ধকার !

তাই এগিয়ে যেও তুমি, নির্দিষ্ট গতিপথ ধরে
দুর্দম দুনির্বার ধুমকেতুর মত !
হাজার হাজার asteroid এর  বাধা অতিক্রম করে,
অশুভ গ্রহের মাধ্যাকর্ষ হেলায় ছিঁড়ে ফেলে !

জৌলুসের ঝলমলে ছায়াপথ ফেলে
মহাজ্ঞান, মহাত্যাগের আলোক পথে ;
কত সৌর ঝড়  ,
কত supernova পার করে,
দেখবে নির্মল আকাশ গঙ্গা তীরে
বসে আসে সে !!
হাতে তারার মালা নিয়ে,
তোমায় পরাবে বলে !
ফুরিয়ে যাবে সে ক্ষণে 
রাত জাগার দিন,
রক্ত ঝরার দিন ।
হবে উত্তরণ 
শৈশব থেকে
যৌবনের পথে ;
নৈরাশ্য থেকে 
প্রাপ্তির পথে !
হাসবে আলোর নিহারিকা 
স্বপ্নের নিহারিকা 
তোমার ভাগ্যাকাশে !

শুভ জন্মদিন : মোহনা

স্বপ্নের মোহনায়,
ঝিলমিল সৈকতে,
আধো -আলো জোছনায়
জীবনের ঘুর পথে ।
আবার এসেছে সে দিন --
যেদিন তোমার চাঁদ মাখা হাসিতে
ফুটেছিল পারিজাত শত শত ;
গেয়েছিল পরীরা
চেরুবিম কতো কতো ।
নরম কাপাশ ছওয়া হাতে
বুনেছিলে কত মায়া,
একাকি স্বপনে ;
রচেছিলে মোহ-মোড়া কায়া ,
মনের নিবিড় গোপনে ।
 

আজ আবার এদিনে --
প্রিয়ের হাত ধরে
ভেসে যেও তুমি,
অমরাবতীর পারে পারে ;
ফুটিয়ে নতুন কুঁড়ি
উড়িয়ে রঙিন ঘুড়ি,
বেলাভূমির তীরে তীরে ;
ভেসে যেও তুমি
অসীম সুখের নীড়ে ।

খুঁজে পাবে তাকে
মনের আকূল ডাকে ;
আঁকড়ে নিও তারে
স্নেহে, আপন করে ।।

আমার চোখে রোম



২০১৪ এর অক্টোবর মাসে রোম যাত্রার সুযোগ হয়েছিল । উপলক্ষ এক কনফারেন্সে একটি গবেষনার কাজ পেশ করা । অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল ইতালির এই কাব্যময়, শিল্পময় শহর দেখার । অপ্রত্যাশিত ভাবেই সুযোগটি হয় । অচিরেই আমার স্বপ্ন বাস্তবের ডানা মেলে উড়ে যায় এই প্রাচীন সাম্রাজ্যর কেন্দ্রস্থলে । সন্ধ্যেবেলায় রোমের Fiumicino বিমানবন্দর পৌঁছালাম । Hello Roma নামক এক চোট হোটেলে আগেই বুকিং করা ছিলো । হোটেল ম্যানেজার Aldo খুব আপ্যায়ন করে বিমানবন্দর থেকে আমায় নিজের গাড়ি করে নিজের হোটেলে নিয়ে গেল । তার আন্তরিকতায় এবং রোমের স্নিগ্ধ সান্ধ্য রূপে মন ভরে গেল |
()

রোমে যে জায়গায় থাকতাম তার নাম Viale Lionardo da Vinci | অর্থাত, লীয়নার্দ দা ভিন্চি সারণী । মহান ইতালিয়ান শিল্পীর নামে নামকরণ | প্রাচীন শিল্পের নিদর্শন তেমন দেখা যায়না । কিন্তু অনেক graphiti দেখা যায় । Graphiti অর্থে আধুনিক শিল্প যেখানে বিশেষ spray রং ব্যাবহার করে লেখা আর আঁকা হয় | এই জিনিস দিয়ে অনেক দেয়ালে, দোকানের shutter এ সুন্দর ছবি আঁকা হয়েছে | আবার এইটে কখনো প্রতিবাদ বা মতামত প্রকাশের ভাষা | এখানে অনেক জায়গায় বড় বড় অক্ষরে অনেক লেখা আর আঁকি বুঁকি দেখা যায় । ইংরিজিতে দেখলাম “free food”, “education” এইসব লেখা আছে । অনেক রাজনৈতিক বক্তব্য বোধ হয় লেখা ছিল | ভাষাটা অজানা বলে বুঝতে পারিনি ।
পথ চলতে দু ধরনের ভাষা শোনা যায় | প্রথমটা বোধ হয় ইতালিয়ান । অবশ্য অন্য কিছুও হতে পারে । দ্বিতীয়টি হলো বাংলা ! আজ্ঞে হ্যা ! আমিও এই ভাবেই অবাক হয়েছিলাম প্রথমে । এখানে এসেই রাস্তায় চলতে চলতে চেনা শব্দ শুনে থমকে গেলাম ! ভাবলাম রাতে ভালো ঘুম হয়নি , এত jet lag, তাই হয়ত ভুল শুনছি ! আদরের সোনার বাংলা হয়ত আমার মনের অন্দরমহলে গুমরে মরচে ! তাই কান খাড়া করে শুনলাম | হ্যা, সত্যি বাংলা বলছে ! অবশ্য বাংলাদেশী কায়দায় । তারপর মনে পড়ল আমার এই হোটেল এর ম্যানেজার Aldo আগেই বলেছিল এখানে অনেক বাংলাদেশী থাকে । দেশে নিজের প্রতিবেশীকে সব সময় আপন মনে হয়না । কিন্তু বিদেশ বিভুই এ - যেখানে সবাই অচেনা, অচেনা পথ ঘাট, অচেনা ভাষা সংস্কৃতি - সেখানে একজন, যে আমার মাতৃভাষায় কথা বলে, তাকে যেন কত কালের পরিচিত মনে হয় ! মনে হয় প্রবাসে নিজের ঘরের উষ্ণতা অনুভব করছি | এই বাংলাদেশী বান্ধবদের কাছে উপকারও পেয়েছি এ ক'দিনেই | যাদের সাথে আলাপ হলো তারা সবাই দোকানদার বা কর্মচারী । ২০ তারিখ রাতে পৌছে রাতের খাবার খুঁজছি । এক mini super market এ ঢুকলাম । সেখানে বিবিধ জিনিস পাওয়া যায় । কিন্তু ঠিক dinner এর উপযুক্ত সেগুলো নয় । সেখানকার দোকানদার বাংলাদেশী | তিনি সঠিক খাবার দোকানের সন্ধান দিলেন । কনফারেন্স শুরুর দিন সকালে ফুটপাতে ঘোরা ফেরা করছি | লোকজনকে জিগ্গেস করছি কোন দিকে গেলে কনফারেন্স এর জায়গায় পৌছানো যায় | আমার Nokia ফোনের GPS টায় তখন ঠিক ভরসা পাচ্ছিলাম না | এক জায়গায় হঠাত বলল "turn right" । সেখানে ডান দিকে তাকিয়ে দেখি এক মস্ত গ্যারেজ ! তাই লোক জনকে একটু জিজ্ঞাসা করছিলাম | ফুটপাথে বিবিধ জিনিস নিয়ে দুজন লোককে দেখেই মনে হলো এনারা ইতালিয়ান নন | ওনাদের জিগ্গেস করাতে ওনারা যেমন উচ্চারণে ইংরেজি বললেন তাতে সহজেই বোঝা যায় যে এনারা বাঙালি না হয়ে জাননা ! তাই সটান বাংলায় জিগ্গেস করলাম | তাঁরা তখন হেসে সঠিক রাস্তারই সন্ধান দিলেন । আবার একদিন রাতে আইস-ক্রিম, কেকের দোকানে গেছি রাতের খাবার কিনতে । এক কৃষ্ণাঙ্গ কর্মচারী আমায় সম্ভবত ইতালিয়ান ভাষায় জিগ্গেস করলো কি চাই | আমি ইংরেজিতে বলাতে সে জিগ্গেস করলো "Indian?” আমি বললাম “Yes” | সে তখন ভেতর থেকে আর একজন কর্মচারী কে ডেকে আনলো | সেই কর্মচারী বিনা কাল ব্যয় করে বাংলায় জিগ্গেস করলো “বাংলাদেশ থেকে আসছেন ?” আমি হেসে বললাম না “কলকাতা” । তারপর সে যত্ন করে পাওরুটির মধ্যে gelato আইসক্রিম দিয়ে দিল | চার রকম স্বাদের আইস-ক্রিম : cranberry, coconut, mango আর strawberry । ধন্যবাদ বলে বিদায় নিলাম ।

অবশ্য খোদ ইতালিয়ানরাও বেশ উপকারী | রাস্তা ঘটে যখনই Nokia GPS কে সন্দেহ হচ্ছিল, তখনই জিগ্গেস করতে হচ্ছিল । মুশকিল হচ্ছে প্রায় কেউই ইংলিশ বোঝেনা ! যারা বোঝেন তাঁরা শুধু কয়েকটা শব্দ বোঝেন ব্যাস ! তাতে মনের ভাব পুরোটা বোঝানো যায়না । তবে তাঁরা আপ্রাণ চেষ্টা করছিলেন আমায় সাহায্যার্থে , সে বিষয়ে সন্দেহ নেই | এখান থেকে যাবার সময় আমি কিছু ইতালিয়ান শব্দ শিখেছিলাম | কিন্তু এখন হাড়ে হাড়ে বুঝেছি, অল্প বিদ্যা জাহির করতে যাওয়াটা কতটা বিপদজনক হতে পারে ! আমি একবার বাহাদুরি করে এক ভদ্রলোককে জিগ্গেস করলাম “albergo Barcelo Aran Mantegna?” অর্থাত হোটেল Barcelo Aran Mantegna, যেখানে কনফারেন্স হচ্ছিল, সেইটির ডাইরেকশন চাইছিলাম আর কি । উত্তরে ভদ্রলোক এমন গরগর করে ইতালিয়ান বলে গেলেন যে আমার নিজের ওপরই চরম রাগ আর বিতৃষ্ণা জন্মে গেল ! কেন বাবা যেচে অপদস্থ হওয়া ! এখানে বলে রাখি সাধারণত ইতালিয়ানরা বাঙালিদের তুলনায় তাড়াতাড়ি কথা বলেন | অর্থাত প্রতি মিনিটে গড়ে আমাদের চেয়ে বেশি শব্দ বলেন । এবং সব শব্দ শেষ হয় এক বিশেষ ইতালিয়ান সুরে | কিন্তু পুরোটাই যদি দুর্বোধ্য হয়, তাহলে সেই সুর রীতিমত আসুরিক যন্ত্রণা দিতে পারে ! বাইরে অবশ্য ভদ্রলোককে খুব নম্র ভাবে "thank you" বলে পথ চলা শুরু করলাম, ভাবখানা এই যে , সবিই বুঝে গেছি ! এর পরের জনকে সটান ইংলিশেই জিগ্গেস করলাম | তিনি ইংলিশ বোঝেন জেনে ধরে প্রাণ এলো ! তার নির্দেশেই আমার হোটেল - প্রাপ্তি ঘটল ! কনফারেন্স ভেন্যু থেকে আমার বাসস্থান ফিরতে একদিন ১৫ - ২০ মিনিটের জন্যে হারিয়ে গেছিলাম | তখনও পরিত্রাতা কয়েকজন ইতালিয়ান !
কিন্তু কয়েকটা ইতালিয়ান শব্দ ধরতে পেরেছি | পরে এসে google translate এ মিলিয়ে নিয়েছি | যেমন “dritto” মানে সোজা যাও, “sinistra” মানে বাম দিকে , আর “diritto” মানে ডান দিক | আর হ্যান, “la strada” মানে রাস্তা, এটা আগেই জানতাম | এই নামে ফেদেরিকো ফেল্লিনির এক বিখ্যাত সিনেমা আছে, ইতালিয়ান ছবি । আমার সংগ্রহে আছে, যদিও এখনো দেখা হয়নি ।
()

কনফারেন্স এ আমার talk ছিল প্রথম দিনই । তারপর আমি মুক্ত বিহঙ্গ ! ভাবলাম এইবার রোম সফরে বেরোনো যাক । ঠিক করলাম পরদিন কলোসিয়াম দেখব । যেমন ভাবা তেমনি কাজ । পরেরদিন সক্কাল সক্কাল বেরিয়ে পরলাম মনে অসীম উত্সাহ নিয়ে । মেট্রো করে "কলস্সেও" নামক গন্তব্যে পৌছালাম । মেট্রো স্টেশন থেকে বেরোতেই দেখতে পেলাম সেই গগনজোড়া, একমেবদ্বিতিয়ম স্থাপত্য - কলোসিয়াম ! দেখে মুগ্ধ, বিস্মিত হয়ে গেলাম ! এত বড় আর এত সুন্দর জিনিস চোখের সামনে এর আগে কখনো দেখিনি ! ছবিতে অনেকবার দেখেছি বটে, আমার talk এর শেষে "Thank You" slide এও কলিসীয়াম এর ছবি দিয়েছি | কিন্তু সেটি এত বড় হবে তা স্বপ্নেও ভাবিনি ! চোখের আন্দাজে মনে হলো ব্যাপ্তিতে ISI কলকাতার পুরো ক্যাম্পাসটির মত হবে ! আর উচ্চতায় আমাদের S.N. Bose Bhaban এর ১.৫ গুন হবে ! মানে প্রায় ১৬ তলা বাড়ি ! আর অদ্ভুত সুন্দর তার কলাকীর্তি ! যেমন প্রকান্ড, তেমনি সুক্ষ | দেখে মনে হয় এক বিশাল শ্বেত বর্ণের অপরুপা দেবী, আপন খেয়ালে, নীল আকাশের সাথে কথা বলছে |
ভেতরে ঢুকতে গেলে ১২ ইউরোর টিকেট কাটতে হয় | একা একাও ঢোকা যায়, আবার বিভিন্য ভাষায় "guided tour" ও নেওয়া যায় | আমি একা একাই ঢুকলাম প্রাচীন বিশালকায় পাথরের খিলানের ভেতর দিয়ে | ভেতরে ঢুকে জানলাম এটা আসলে ৩ তলার | উঁচু উঁচু সিঁড়ি দিয়ে ওঠার ব্যবস্থা আছে | বাইরের সৌন্দর্যের মোহ নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই, এই আচলোযতনের ভয়ংকর অমানবিক ইতিহাস চোখে ভেসে ওঠে ! নিচের তলায় পেল্লাই পেল্লাই অন্ধকারময় সুরঙ্গ | এখানেই হিংস্র জন্তুদের বেঁধে রাখা হত | আর রাখা হত গ্ল্যাডিয়েটরদের ! সম্রাটের নির্দেশ পেলেই এই সুরঙ্গের দ্বার খুলে দেওয়া হত | সঙ্গে সঙ্গে এক দিক থেকে রক্ত পিপাসু বাঘ সিংহের দল, আর অন্য দিক থেকে অসহায়, নিরস্ত্র বন্দিরা গিয়ে পরত সামনের arena তে | এই arena তেই হত নৃশংস রক্ত লীলা | হত গ্ল্যাডিয়েটরদের নিশ্চিত মৃত্যুর সাথে দ্বন্দযুদ্ধ | বেশির ভাগ সময়েই রোমাঞ্চকর প্রতিরোধ আর পরাক্রম প্রদর্শনের পর এই যোদ্ধারা পাশবিক শক্তির কাছে পরাভূত হত ! আর এই কলোসিয়ামে বসে থাকা প্রায় ৮০,০০০ দর্শক তা বিপুল আনন্দ ও উদ্দীপনায় উপভোগ করত ! অবশ্য এই মরণ খেলা ছাড়া আরও অন্য খেলাও হত এখানে যেমন, জাগ্লেরি, আগুনের খেলা ইত্যাদি | কিন্তু বন্দিদের রক্তক্ষরণই ছিল ক্রীড়ার প্রধান আকর্ষণ !
সিঁড়ি দিয়ে উঠে দোতলায় গেলাম | সেখানে এই স্তাপত্যের কাহিনী ও অসাধারণ ভাস্কর্যের নিদর্শন যত্ন সহকারে রক্ষিত আছে | সবই শ্বেত পাথরের ওপর কাজ | প্রাচীন রোমান বোদ্ধাদের আবক্ষ মূর্তি, ও অন্যান্য প্রস্তর মূর্তি , তাদের সুক্ষাতিসুক্ষ কারুকার্য শিল্পীর অসীম অধ্যাবসায় ও নৈপুন্যের সাক্ষ্য রেখে গেছে | এবার আসতে আসতে সিঁড়ি দিয়ে ৩ তলায় পৌছালাম | সেখানকার বিশাল গোল ব্যালকনিতে গেলাম | সেখান থেকেই হাজার হাজার রোমান জনগণ নিচে গ্ল্যাডিয়েটর এর খেলা দেখত ! এখান থেকে পুরো ampitheatre এর বিশাল elliptical আকারটা বোঝা যায় | রোমান সম্রাট ও তাঁর বিশেষ অতিথি, মন্ত্রী আমলাদের বসার জায়গা আলাদা, এবং তাঁদের প্রবেশ পথও স্বতন্ত্র | এই ব্যালকনি থেকে সুরঙ্গগুলোর ভগ্নাংশ ও ক্রীড়া - ক্ষেত্র স্পষ্ট দেখা যায় | পরিস্কার বোঝা যায় কোন পথে এই সুরঙ্গ থেকে পশু ও মানুষ arena তে প্রবেশ করত | আমার চোখে "Gladiator" ছবির সেই দৃশ্য চোখে ভাসছিল যখন মাক্সিমাসের দল নির্ভিক বীরত্বে সিংহ ও সম্রাট পক্ষের রথীদের সঙ্গে সংঘর্ষ করেছিল ! যেন চোখের সামনে দেখতে পেলাম প্রায় ২০০০ বছর আগেকার কলিসিউমের রোমহর্ষক ঘটনা । নিচে arena তে রক্তাত্ত গ্ল্যাডিয়েটর এর সাথে সিংহের লড়াই চলছে । আর হাজার হাজার দর্শকের কলরব এই বিশাল স্থাপত্যের দেয়ালে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে !
ভাবে, উত্তেজনায় বিভোর হয়ে অবশেষে কলোসিয়াম থেকে বেরিয়ে এলাম | একবার পিছন ফিরে দেখলাম এই অসাধারণ শিল্প সৃষ্টির দিকে | যেন পুরো আকাশকে আপন আলিঙ্গনে বেঁধে রেখেছে ! পরাক্রমী রোমান সাম্রাজ্যের অহংকার বুকে নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে এই স্থাপত্য যুগ যুগ ধরে, কত ঝড় ঝাপটা মাথায় নিয়ে । ভূমিকম্পে মাথার খানিকটা অংশ ভেঙ্গে গেছে | কিন্তু মান এক চুলো কমেনি ! আজও এই কলোসিয়াম পৃথিবীর অন্যতম সেরা শিল্প ও বিস্বয় ! কিন্তু ভাবতে অবাক লাগে, যে রোমান সভ্যতা এত মহান কালজয়ী শিল্পী, পন্ডিত, জ্ঞানী, গুনী মানুষের চারণ ভূমি দিয়েছে, সেই একই সভ্যতার মানুষ কি ভাবে এই রক্তাত্ত বিনাশ লীলায় আনন্দ খুঁজে পেত ? হে কলোসিয়াম এত নির্মমতা লুকিয়ে রেখেছ তোমার গর্ভে ? কেন তুমি নির্মল সুন্দর হতে পারনা ? এত রূপ বাইরে নিয়ে কেন অন্তরে অন্তরে বিষ পান কর ? তাই বুঝি মহান রোমান সাম্রাজ্যের পতন হলো ? এত অসহায় মানুষের দক্তের দাম দিতে নিলাম হয়ে গেল তার মান, তার সব ঐশ্বর্য !!
আশে পাশে Forum তথা আরও কিছু স্তাপত্যের ভগ্নাবশেষ ছিল | সেগুলোও কিছুক্ষণ দেখলাম | কিন্তু কলোসিয়াম অনায়াসেই তাদের সবাইকে ছাপিয়ে গেছে, নিজ রূপে , নিজ গুণে ; আকারে ও ঐতিহ্যে !
বিকেল বিকেল হোটেল ফিরে এলাম, এই অবিস্বরনীয় অভিজ্ঞতা বুকে নিয়ে | এখানে বলে রাখা ভালো, ইতালিয়ান পকেটমারির বিশ্বজোড়া খ্যাতি ! তবে সুখ্যাতি না কুখ্যাতি সেটা বলা মুশকিল ! আমার এক স্যার এর মুখে শুনেছি এরা নাকি পকেটমারিকে রীতিমত শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছে ! ভিড়ের অবকাশে এদের শৈল্পিক অঙ্গুলি সঞ্চালনে কখন আপনার পকেটটি হালকা হয়ে যাবে, আপনি টেরই পাবেন না ! এটি রাগের কারণ অবশ্যই । কিন্তু মাল খুইয়েও নাকি মনে মনে তাদের হস্ত শিল্পের তারিফ না করে থাকা যায়না ! তাই আমি ওয়ালেট ও মোবাইল হ্যান্ড বাগের ভেতরে রেখেছিলাম, বাইরে শুধু কিছু খুচরো পয়সা ছিল , মেট্রো ভাড়া বাবদ | কাজেই হস্ত শিল্পীরা তাদের কেরামতি দেখাবার সুযোগ পায়নি !
()

২৫ শে অক্টোবর, মানে যেদিন রাতে রোম থেকে ভারতে ফেরার প্লেন, সেদিন ভ্যাটিকান সিটি ঘুরতে গেছিলাম | প্রথমে ভাবছিলাম যাব কিনা | কারণ কতক্ষণ লাগবে দেখতে, সময়ে ফিরতে পারব কিনা - এইসব ভেবে দোনোমোনো করছিলাম | কিন্তু অনেকেই যখন বলল “রোমে এসেছ আর ভ্যাটিকান দেখবে না ? লোকে হাসবে যে শুনলে !” তখন "জয় মা" বলে বেরিয়ে পরলাম | মেট্রো করে অত্তাভিয়ানো স্টেশন পৌছালাম | সেখানে একটু হাঁটা হাঁটি করছি, এমন সময় শুনলাম “ভাই সাহাব ! আপ ভ্যাটিকান দেখনে আয়ে হ্যায় ? হিন্দুস্তান সে হো না ?” আমি পেছন ফিরে দেখলাম , এক সুশ্রী , মার্জিত চেহারার মাঝ বয়সী ভদ্রলোক আমাকেই বলছেন | “জনাব, উস তরফ নাহি ইস তরফ যাইয়ে ” বলে যেদিকে হাঁটছিলাম, তার ঠিক ৯০ ডিগ্রী বরাবর আরেকটা রাস্তা দেখিয়ে দিলেন | বুঝলাম ওনার কোনো স্বার্থ আছে, না হলে এত খাতির কেন ! কথা বলে জানতাম ভদ্রলোক পাকিস্তানি, আর একটি guided tour সংস্থা “Maya” এর সাথে যুক্ত | ওনার সাথে কথা বলে বুঝলাম আমি একা গেলে টিকেট এর লাইনে অনেকটা সময় যাবে ! এই অভিজ্ঞতা কলোসিয়াম দেখতে গিয়ে হয়েছে ! আর এখানে কোথায় কি দেখব সেটাও জানিনা | হাতে সময় বড় অল্প | আর এনাদের মাধ্যমে গেলে ২.৫ ঘন্টায় সব দেখা হয়ে যাবে | টিকিটের লাইন দিতে হবে না, আর অনেক তথ্য পাওয়া যাবে | সব দেখা বলতে – ভ্যাটিকান মিউসিয়াম, সিস্টিন চ্যাপেল এবং সেইন্ট পিটার বাসিলিকা - এইগুলি দেখাবেন এনারা | এইগুলি নাকি এখানকার মূল আকর্ষণ | কাজেই “Maaya” এর বন্ধনে ধরা দিলাম ৪৫ ইউরোর বিনিময়ে |

গাইড মহিলাটি বেশ প্রানবন্ত এবং রসিক | এবং ভ্যাটিকান সিটি নিয়ে অনেক পড়াশোনাও আছে মনে হলো ! ইনি ইংলিশ ভাষায় ভ্রমণের নির্দেশ দ্যান | এছাড়া স্প্যানিশ, জার্মান প্রভৃতি ভাষায়ও টুর হয় | সেগুলোর গাইড আলাদা | আমাদের গাইড এর পথনির্দেশে আমরা মোট ২৫- ২৬ জন রওনা হলাম ভ্যাটিকান পরিক্রমায় | প্রথম গন্তব্য ভ্যাটিকান মিউসিয়াম বা “Musei Vaticani” | ঢুকেই আমরা হাতে একটি করে প্রবেশ টিকেট পেয়ে গেলাম | আর একটি ওয়্যারলেস ইআর-ফোন যাতে করে গাইড মহিলা ধ্রষ্টব্যের বিষয়ে যা যা কথা বলবেন তা পরিস্কার শোনা যাবে | প্রচুর লোকের ভিড়, আর একই সাথে অনেক গাইড তাদের মক্কেল দের জ্ঞান দিচ্ছে | ওনার কথা যাতে তার দলের সব্বাই শুনতে পান তাই এই ব্যবস্থা ! আর এই ভিড়ে যাতে তাঁকে আমরা হারিয়ে না ফেলি সেই জন্যে তাঁর হাতে একটি কালো ছাতা, যেটি পতাকার মত উঁচিয়ে উনি হেঁটে চলেন, আর দূর থেকেও জনসমুদ্রে সেটি লাইট হাউসের মত আমাদের পথ দেখায় ! এই মিউসিয়ামে বহু সময় ধরে রোমান ক্যাথলিক চার্চ দ্বারা সযত্নে রক্ষিত বহু মূল্যবান ও শিল্প নৈপুন্যে অসাধারণ অনেক জিনিস রয়েছে | রোমান সাম্রাজ্যের অধীনে থাকা বহু দেশের অতুলনীয় শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে এখানে | যেমন গ্রীস এর শ্বেত পাথরের ভাস্কর্য এবং মিশরের ব্রোঞ্জের কলা কীর্তি | অর্থাত, নিজ সাম্রাজ্যের যে কোনো জিনিস পছন্দ হলেই সেটি নিজের মনে করে, সেটিকে তুলে এনে নিজের ঘরে সাজিয়ে রাখার শখ সুধু ব্রিটিশদেরী ছিলনা, তার আরও নজির রয়েছে ! গ্রীস এর মূর্তি গুলোর মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য হলো “Laocoon and his Sons” | Laocoon হলেন ট্রয়ের পুরোহিত যিনি ট্রয়বাসীদের সাবধান করেছিলেন সেই কুখ্যাত ট্রোজান হর্স এর বিষয়ে | গ্রিক সেনাবাহিনী ১০ বছর যুদ্ধের পর যখন ট্রয় এর দুর্গ ভেদ করতে পারল না, তখন তারা এই বিশাল ঘোড়া - ট্রোজান হর্স ট্রয় এর দুর্গের বাইরে রেখে চলে যায় | এই পুরোহিত মিনতি করেছিলেন ট্রয় এর রাজাকে , যেন এই ঘোড়া পুড়িয়ে দেওয়া হয় | এতে গ্রিকদের দুরভিসন্ধি রয়েছে ! ট্রয়বাসীরা তাঁর কথায় আমল না দিয়ে মহা ফুর্তিতে ঘোড়াটিকে শহরের ভেতরে নিয়ে যায় | এই ঘোরার মধ্যেই লুকিয়ে ছিল একদল রণকুশলী গ্রিক যোদ্ধা, যারা রাতের অন্ধকারে ঘোড়া থেকে বেরিয়ে ট্রয় শহরে আগুন লাগিয়ে দেয় এবং ভেতর থেকে ট্রয় এর দুর্গের দুয়ার খুলে দেয় ! গ্রিক সৈন্যদল রাতের বেলায় ট্রয় প্রবেশ করে এবং ট্রয় ধ্বংস করে দেয় ! এই মূর্তির মাহাত্ব হলো, কিম্বদন্তী শিল্পী মাইকেলএঞ্জেলো এই ভাস্কর্য দেখে এমন ভাবে প্রভাবিত হন যে উনি এই আদলেই সিস্টিন চ্যাপেলের ছাদে অসাধারণ ছবিগুলি আঁকেন ! পরবর্তীকালে এই ছবিগুলি বিশ্ব শিল্পের ইতিহাসে অমর কীর্তি হয়ে গেছে ! মিশরের বহু ব্রোঞ্জের মূর্তি, যেমন হারকুলিস , স্ফিনিক্স প্রভৃতি নজর কাড়ে | মিউসিয়ামটির স্তাপত্য অসাসারণ, শিল্পী লুকা বেল্ত্রামি | মিউসিয়ামের একটা উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, একটি ঘরের দুপাশের দেয়ালে ভাগ ভাগ করে পুরো ইতালির মানচিত্র আঁকা রয়েছে | এবং প্রতিটি মানচিত্র সঠিক | একটি যিশুর তৈলচিত্র দেখলাম যেটার বৈশিষ্ট হলো, যে দিক থেকেই দেখা যাক না কেন , সব সময়ই মনে হবে যিশু আপনার দিকেই তাকিয়ে আছেন ! আর মিউসিয়ামের খিলান করা ছাদে আঁকা তৈলচিত্র ও ভাস্কর্য অপরূপ সুন্দর !
এর পর গেলাম সিস্টিন চ্যাপেলের ভেতর | এরই সারা ছাদ জুড়ে মহান শিল্পী মাইকেলএঞ্জেলোর হাতে আঁকা চিত্র | আগেই বলেছি Laocoon এর ভাস্কর্যে মুগ্ধ হয়ে শিল্পী এই ছবিগুলো আঁকেন | ভ্যাটিকান এর বাকি চিত্রগুলো দেখলে বোঝা যাবে কেন মাইকেলএঞ্জেলোর আঁকা ছবি গুলো এক্কেবারে আলাদা | এই ছবি গুলোয় বেশ তেজস্বী, পেশীবহুল পুরুষ দেহ দেখানো হয়েছে | ঠিক যেমন “Laacoon and his Sons” এর ক্ষেত্রে দেখা যায় | রাফাএল আর অন্য শিল্পীদের আঁকা ছবিগুলোতে পুরুষ দেহে এত দৃপ্ততা দেখানো হয়নি | এবং Laocooner এর ভাস্কর্যের মত এই ছবিগুলো নগ্ন ! তবে মাইকেলএঞ্জেলোর ছবিগুলো যেমন ভাবে মুগ্ধ করে , যেমন সৌন্দর্যের অনুভূতিতে মনকে আপ্লুত করে, উজ্জীবিত করে, বাকি চিত্রগুলো মনে তেমন রেখাপাত করতে পারে না | তাই মাইকেলএঞ্জেলো সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পী ! সিস্টিন চ্যাপেলে ঢুকতে ডান দিকের দেয়ালে বিভিন্য শিল্পীর আঁকা মোসেসের এর চিত্র বা "ফ্রেস্কো" | অর্থাত যিশুর জন্মের আগেকার কথা চিত্রায়িত আছে এখানে | বাম দিকের দেয়ালে রয়েছে যিশু কথার চিত্রায়ন | এবং উপরে, ছাদে মাইকেলএঞ্জেলোর ফ্রেস্কো | “আদম এর জন্ম ” ছবিটিতে মাইকেলএঞ্জেলো দেখিয়েছেন ঈশ্বর পৃথিবীর আদি পুরুষ আদমে প্রাণ স্থাপন করছেন | আরও অনেক অসাধারণ ছবি রয়েছে যেগুলো প্রত্যেকটি একটি কাহিনী বয়ান করে | কিন্তু সব চেয়ে বিখ্যাত ছবিখানি হলো “The Last Judgement” | এই অসাধারণ চিত্রকলায় অমর শিল্পী জীবন মরণের অদ্ভুত খেলা ব্যক্ত করেছেন অসাধারণ দক্ষতা ও কল্পনাশক্তির মাধ্যমে | এই ছবিতে, একদিকে যিশু নতুন প্রানের জন্ম দিচ্ছেন, আবার অন্য দিকে তাদের প্রাণ হরণ করছেন | দুষ্টরা দলে দলে নরকে নিপতিত হচ্ছে | এবং মানুষের অনাবিল সুখ ও মিলনের ছবিও ফুটে উঠেছে প্রাঞ্জল হয়ে | এই ছবি দেখলে গায়ে রীতিমত কাঁটা দেয় ! যেন জীবন বোধের প্রতিটি রসে, প্রতিটি রূপে চেতনা পূর্ণতা লাভ করে | শোনা যায় মাইকেলএঞ্জেলো ভাস্কর শিল্পী ছিলেন, ছবি আঁকা পছন্দ করতেন না | পোপ পল III এর অনুরোধে বহু অনিচ্ছা সত্তেও সিস্টিন চ্যাপেলের ছাদে ছবি আঁকতে সম্মত হন | ঐশী শিল্প রচনায় তন্ময় শিল্পী প্রায় ৪ বছর ধরে একা হাতে এত ছবি এঁকেছিলেন ! ওপরে তাকিয়ে ছবি আঁকতে আঁকতে রঙের বিষাক্ত কেমিকাল শিল্পীর চোখে পড়তে থাকে | ফলে শেষ বয়সে তিনি অন্ধ হয়ে যান ! মনে মনে মহান শিল্পীকে হৃদয়ের অর্ঘ্য নিবেদন করে সিস্টিন চ্যাপেল থেকে বেরোলাম |

অবশেষে সেইন্ট পিটার বাসিলিকা । এটি পৃথিবীর অন্যতম বৃহত ক্যাথলিক চার্চ এবং শিল্প সম্পদে অনবদ্য | এইটির রুপাযনেও মাইকেলএঞ্জেলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে | এটির নামকরণ করা হয় সেইন্ট পিটারের নামে যিনি হলেন ইতিহাসের প্রথম পোপ | এখানেই সেইন্ট পিটারের কবরটি অবস্থিত | রেনেসা যুগের অন্যতম শ্রেষ্ট শিল্পকীর্তির সাক্ষ্য বহন করে রয়েছে এই স্থাপত্য | মাইকেলএঞ্জেলো এবং বহু মহান শিল্পীর শ্বেত পাথরের ভাস্কর্য মুগ্ধ করে বার বার ! এই বাসিলিকা, তার সামনে বিশাল গোল প্রান্তর যার কেন্দ্রস্থলে একটি বিশাল ওবেলিস্ক – এগুলি একসাথে "St . Peter’s Square" বা "St. Peter’s Piazza " নামে বিশ্বখ্যাত | রোজ এখানে দেশ বিদেশ থেকে শয়ে শয়ে লোক আসেন এই চূড়ান্ত শিল্পকীর্তির দর্শন লাভ করতে | অবশ্য ক্যাথলিক খ্রীষ্টানদের কাছে এটি তীর্থক্ষেত্রও বটে | আপন গরিমায় এবং শিল্পের উত্কর্ষে ভ্যাটিকান সিটি অনন্ত মহিমার মূর্ত প্রতীক | এটি শিল্প ও সৌন্দর্যপ্রেমী মানুষের স্বপ্নের স্বর্গধাম, পরম দর্শনসুখ ও তৃপ্তির পীঠস্থান |
আবার মুগ্ধ হয়ে মেট্রো করে আমার হোটেল পৌছালাম | কলোসিয়াম আর ভাটিকানের উজ্জল ছবি মনের পটে এঁকে স্বদেশ পাড়ি দিলাম | হে সুন্দর রোম, আদ্দিও !

Friday 26 September 2014

মিলন যামিনী

মধু সমীরনো শোভিত যামিনী,
প্রেমেরো কুসুমে গাঁথা ;
ঘন সুনিবিড়ো কোমলো অবণী,
সুখো হিল্লোলো গাথা ।
মিলনো অখিলে দুজনে গোপনে,
ক্ষীরো সুধারসে মাখা;
আপনো হৃদয়ো দোদুলো দোলায়ে
প্রণয়ো রেণুতে ঢাকা ।
পুষ্প ভ্রমর গুন্গুন সুরে
মায়ারো ছন্দে গাহে,
পাখিরো কুজনে কুহু কুহু রাগে
সুর নির্ঝরো বহে ।
ইতি-উতি ধায় ফুলেরো সুরভি
কাহারো নূপুরো বাজে,
চিত্ত পুলকে ময়ূরো নাচে
নবীনো নৃত্য সাজে ।
সুখো পারিজাত কেশরো ছোঁওয়াতে
প্রেমো মুকুলিত লাজে,
বাজে বীণা আজি অজানা ছন্দে
কিশোরো চেতনা মাঝে ।
আকাশো অনিলে সুরেরো সলিলে
প্রনয়ো তরণী ভাসে,
দুটি ব্যাকুলিত হৃদয়ো মিলিছে
মিলনো তৃপ্তি আশে !

ভুল ভাঙ্গানি গান

ফাগুনে ফুলের মেলা
Full of fun ;
ভন্ভনিয়ে ভ্রমর এলো
In a very big van !

Monday 1 September 2014

শুভ জন্মদিন : দ্বৈপায়ন

একেলে শহুরে আঁতলামি,
                             ফিচেল joke এর ফাজলামি ;
খুউউব খিদেতে খেতে যাওয়ায়
                             
                                     যুক্তিবাদী আলসেমি ;
পূজোর বাজারে কেস জন্ডিস
                                       গৃহবন্দী আসামী !
ব্যাজার মুখে ভালো-না-লাগার
                                       চিঁচ্ কাঁদুনে গাহনি ;
জার্মান-আইরিশ জয়েন্ট আঁতাতে
                                   যমে-মানুষে টানাটানি !
প্রনয় কাননে পিরিত ভ্রমর
                                 করছে বুঝি কানাকানি ?
এদিকে বিয়ের বেলতলাতে 
                               নেড়ার ট্যাঁকে রাহাজানি !


Puncture জীবন-টায়ার তোমার
                                   Pঅথে Hওলো Dএরি ;
সকল ব্যথা ভুলে চাখো 
                                      অমৃত রসের হাঁড়ি ।

বিশ্ব সভায় বন্দিত হউক
                                     তোমার রচিত গান ;
মহাযোগী হয়ে করো
                                   জ্ঞানের সাগরে স্নান ।
পুণ্য প্রনয় কাননে ফুটিও
                                     নতুন দিনের কুঁড়ি ;
সুখের আশীষে ভরে থাকুক
                                 তোমাদের জীবন তরী ;
সকল বাধা চূর্ণ করে
                                    এগিয়ে যেও তুমি,
তোমার আলোকে আলোকিত হোক
                                  তোমার মাতৃভূমি ।
বিজয় রথে চড়ো হয়ে
                                       দিগ্বিজয়ী বীর ;
সকল চূড়ার উর্ধে উঠুক
                                তোমার নবীন শির ।

Tuesday 5 August 2014

ঝরা পাতা

ঝরে পরে জীর্ণ পাতা
মৌসুমী ঝড়ে ;
একা একা --
শুকনো মাটি ওপরে ।
এই পরা তার শেষ পরা !  
হাজার মৃতের মাঝে 
নিঃশব্দ তিমিরে ।
 
আর বসন্ত পূবালী দোলে 
দুলবে না সে 
গাইবে না গান 
শন শন বোলে।
তাকে ঘিরে ফুটবে না 
সুরভিত শৈশব ।
সবুজ বসন্তের 
ঘন লাল উত্সব ।
দেখবে না  মুকুলের 
চোখ ফোটা বিস্ময়;
পাখিদের সুরে গানে 
হবে না সে তন্ময় ।
 
দেখবে না কিছুই 
দেখবে না সে !
শুধু হাজার ব্রাত্যের দলে 
হবে নির্মম পদ-পিষ্ট ;
গাইবে কাতর সুরে 
মর্ম-চেরা মর্মর কলি ।
যা শুনবে না কেউই 
অবহেলার অবকাশে ।
 
 

প্রেম

তোমার সব রূপ আমায় ঝরিয়ে দাও,
তোমার গন্ধে আমায় ভরিয়ে দাও ।
নিয়ে আমার অখিল মন-ভূমি
আপন অঙ্গ আমায় পরিয়ে দাও ।
 

চাঁদ

ওই দূর আকাশের চাঁদ বাঁকা;
আমার বুক ভরা চাপা কথা ।
ডাকি তাকে চুপি চুপি 
মনের দুঃখ শোনাবো বলে,
জমা কথা মন খুলে ।
কিন্তু
আসেনা সে নেমে,
আমার ডাক শুনে,
বসে কাঁদি একা একা ।  

Tuesday 22 July 2014

আন্দামান

তোমার স্বর্ণালী সৈকতে
                 করেছি গো স্নান,
নারকেল গাছের দোলায়
                 দুলেছে মন-প্রাণ,
পাখিদের সুরে সুরে
                 বেঁধেছি সুখের গান,
তোমার রঙিন স্মৃতি
                থাকবে অক্ষয়-অম্লান ।

হে আন্দামান ! !  

বর্ষা

ভিজে আলো জোছনায়,
শ্রাবন রাতের রচনায়;
আলো ঝলমল গলা মায়া,
আলতো কুয়াশার আবছায়া ।
ঝরে বৃষ্টি ঝিরিঝিরি
নূপুরের গুঞ্জরণে ;
রূপকথার কাব্য ঝরে
মোহময় বিস্মরণে ।

Sunday 8 June 2014

शायरी

(१ )

तेरी होंटो की ज़ुबान,
कही चुरा न ले मेरी जान ।
दिल की धड़कनो में तेरा नाम,
तेरे प्यार में रंगीन हर एक शाम ।

(२ )

तेरी हर अदा ने मुझे मारा !
तेरा मुस्कुराना,
रूठना, बलखाना,
मचलना, सवर्ना ;


शर्माके क़ातिल नज़रो का इशारा !
तेरी हर अदा  ने मुझे मारा ।

लूट गया बर्बाद हुआ बदनाम हुआ ;
दिल से बेबस, दुनिया से बेगाना हुआ;
तेरे लीए मेरे यारा !

बेपनाह मुसाफिर होके
भटकता रहा होके बेचैन ;
नींद न आई,
तेरे दीदार को तरसी मेरे नैन ।

तेरे पलकों की छाओं में सुकून ढूंढे दिल
अँधेरी दुनिया में ढूंढे तेरे प्यार का महफ़िल ।


अब बस देदे मुझे तेरे हुस्न का नज़ारा,
बस देदे मुझे तेरे नर्म ज़ुल्फो का सहारा ।  
 

Saturday 31 May 2014

আহ্বান

হে প্রানেস্বর !
জানিনা তোমার নাম !
তবু জানি ওগো,
তোমারি জন্যে
গড়েছি নিভৃতে
প্রেমেরো অমৃতধাম ।

ওগো হৃদয়নাথ !
শুনে আমারো ব্যাকূল বাণী ;
সাড়া দিও ওগো তুমি !
তোমারি জন্যে
রেখেছি যতনে
আপন হৃদয় খানি ।

আবার বৃষ্টি

প্রতিটি বারি কণা,
যেন কত দিনের চেনা !
যেন কত যুগ কত কাল পর
হয়েছে দেখা এই অচেনা রুক্ষ পৃথিবীতে !
যেন কত দিনের ভোলা সুখ
আবার জেগেছে রন্ধ্রে রন্ধ্রে শিরায় শিরায়;
অন্তরের চেতনাতে ;
এই অকস্বাত সাক্ষাতে ।

তোমার প্রেম গো সখী

তোমার প্রেম গো সখী --
যেন সুবাস মাখা চন্দ্রমুখী !

যেন ফুলের কন্ঠ ভরা মধূ,
জ্যোত্স্না রাতে সুধা ঝরা বিধু ।

যেন আশাপূর্না স্বপন,
সোহাগের তৃপ্তিমাখা সমীরন ।

যেন শরত প্রভাতে দুধেল মেঘলা আকাশ,
তপ্ত রুদ্র তেজে প্রথম বরষার আশ্বাস ।

যেন রিক্ত মরু বক্ষে প্রথম ফুলের কুঁড়ি,
একলা বাতায়নে অমল সুখের মঞ্জরী ।

তোমার প্রেম গো সখী --
যেন সুধা ভরা অমরাবতী ।

যখন আমি হই গো দুখী,
দিয়ে তোমার স্নেহের পরশ;
জাগাও জীবন বোধের ভাষা;
জাগে দীপ্তি কাটে আঁধার,
জাগে আলোর অভিলাষা ।
হৃদয় সরোবরে ফোটে
আবার আশার তমরস ।।
 

প্রণয় সফর

ঘুম কেন তোমার চোখে ?
ঘুমিয়ে না ওগো,
ওঠো সখী ওঠো !
চেয়ে দেখো বাতায়ন মেলে;
কি মনোরম মধুক্ষণ গড়েছে প্রকৃতি !
দেখো তীব্র রুদ্র প্রবাহ আর নেই !
কি অপূর্ব মন ভোলানো, সোহাগ বোলানো সমীরণ বইছে ।
কত পাখি ধরেছে মধুর রাগিনী;
কত ফুল বৃষ্টিতে স্নান করে
শৃঙ্গার করেছে ভ্রমরের পথ চেয়ে ।

সাধ বুঝি হয়না ?
এ মধুবেলায়
প্রেমেরো দোলায়
রচিতে মিলন খেলা ?

ওঠো সখী ওঠো !
চেয়ে দেখো বাতায়ন মেলে ।
দাঁড়িয়ে আছি আমি
তোমার হাত ধরে
নিয়ে যেতে তোমায়
প্রণয় সফরে ।

Thursday 15 May 2014

শুভ জন্মদিন : মন্দার স্যার

এসো হে দ্যুতিমান !
নিয়ে তোমার আলোক সোপান,
নতুন দিনের অরুণ হয়ে
নতুন ভাবে উঠো ।
নিয়ে তোমার আলোক কণা,
দৃপ্ত তোমার তেজের ফণা,
নতুন গাছের পাতায় পাতায়
মুকুল হয়ে ফোটো ।
এসো হে দ্যুতিমান !


এসো হে আয়ুষ্মান !
গেয়ে তোমার বিজয় গান,
নতুন ভোরের তৃপ্তি নিয়ে,
নতুন করে হেঁটো ।
ভরিয়ে তোমার ঝুলিখানি,
ছড়িয়ে তোমার আলোর বানী,
যৌবনেরো শিরায় শিরায়
রক্ত হয়ে ছুটো ।
এসো হে আয়ুষ্মান !


এসো এসো জ্যোতিস্মান  !
হৃদয়ের আলিঙ্গনে এসো ।
শুভেচ্ছার মালা পরে
হৃদয় কুঞ্জে বসো ।
এসো এসো জ্যোতিস্মান  !

Friday 9 May 2014

বৃতি

এই মিষ্টি ফুলের দুষ্টু মধু !
নাম কি তোমার বৃতি ?
দেখো,
তোমার জন্যে লিখেছি গো মিষ্টি আবৃত্তি ।

বৃতি সোনা বৃতি সোনা,
তুমি যে গো চাঁদের কণা ।
তোমার মিষ্টি হাঁসির আলসেমিতে
কত স্বপ্নের আনাগোনা ।

এই শিশির ভেজা আলোর কণা !
নাম কি তোমার বৃতি ?
ছোত্ত পাখির মত তোমার ছোত্ত আকৃতি ।

বৃতি সোনা বৃতি সোনা,
মিত্তি তোমার দস্যিপনা ।
তুমি যা খুশি তাই করতে পারো
নেইকো তোমার মানা ।

ফুলের রেণু মাখা পাখির পালক
নাম কি তোমার বৃতি ?
সবার চেয়ে উজ্জল হোক তোমার আলোর দ্যুতি ।

Thursday 8 May 2014

দীপাদির মেয়ে বৃতি

যেমন চাঁদ ঘুমায় মেঘের কোলে,
তেমনি ঘুমাও তুমি,
ওগো ছোট্ট ফুলের মিষ্টি কুঁড়ি,
মিষ্টি তোমার দুষ্টুমি ।

------
টুকি ! ওমা কি মিষ্টি গো তুমি । তোমার নাম কি গো ? সন্ধ্যামণি, নাকি নয়নতারা ? নাকি দোয়েল, কোয়েল, মৌটুসী ?

কীর্তন

প্রেম কুঞ্জবনে
মধু বৃন্দাবনে ।

ফুটিছে কুন্দকলি,
খেলিছে চন্দ্রাবলী ।

উড়িছে ভ্রমরগুলি,
নাচিছে চিত্ত খুলি ।

আসিছে শ্যাম রাই,
খেলিছে প্রেম কেলি ।

গড়িছে রাস লীলা,
ঝরিছে প্রেমাঞ্জলি ।

আসিছে দেবাঙ্গনা,
আসিছে নীলাঞ্জনা ।
গাহিছে মোহন কলি,
রচিছে গীতাঞ্জলি ।

নাচিছে বন হরিণী,
নাচিছে ময়ূর পেখম তুলি ।

নাচিছে কিন্নর
নাচিছে অপ্সরী,
গাহিছে কীর্তন উর্ধে বাহু তুলি ।

ঝরিছে সুধারস বহিছে সমীরন,
দুলিছে তনু মন সকল ব্যথা ভুলি ।
গাহিছে ভূলোক
গাহিছে দ্যুলোক,
বাজিছে বাঁশি বাজিছে কাকলি ।
গাহিছে পাপী
গাহিছে সুজন,
মেখে রাঙ্গা পায়ের ধূলি ।

বাজে কীর্তন,
মজে যৌবন ,
ঝরে পুষ্প রেণু,
ভরে সুখের ডালি ।

নাচিছে শ্যাম
নাচিছে রাই,
খেলিছে প্রেম কেলি ।

প্রেম কুঞ্জবনে
মধু বৃন্দাবনে ।

প্রভাতী

একি সুধাবাণী শুনাইলে এ প্রভাতে,
আনন্দ তরঙ্গ লাগে মোর হৃদয় সৈকতে ;
যেন কত বীণা কত বাঁশুরি বাজে,
কত ফুল স্তবকে স্তবকে ফুটিছে চিত্ত মাঝে ;
আবার আসিবে সেই বেলা,
যখন মিলিব মোরা কুঞ্জবনে,
খেলিয়া রসের খেলা নয়নে নয়নে ;
প্রেম অভিসারে দিও তনু মন মেলি,
হবে নিবিড় গোপন কথা হৃদয় দুয়ার খুলি ।

Tuesday 6 May 2014

এলোকেশী

তোমার নরম হাতের আঙুল,
 যেন সদ্য ফোটা ফুল ;
তোমার শিশির-ধোয়া মুখে
হৃদয়-ছোঁয়া হাসি,
হারা সুখের স্বপ্ন দেখাও
তুমি এলোকেশী ।

শুভ জন্মদিন : টুসু

আজ এই নির্মল প্রভাতে,
এসো গো প্রিয়ে সাজাই তোমায় অপরূপ সাজে ;

তোমার কন্ঠে দিলাম জুই  টগর রজনীগন্ধার মালা,
মাথায় দিলাম গোলাপ কৃষ্ণচুড়ার মুকুট;
হাতে পরিয়ে দিলাম কনক চাঁপার বালা,
কানে সন্ধ্যামনির দুল ।

পায়ে দিলাম কুন্দকলির মল,
নাকে নয়নতারার নাকছাবি ;

চোখে দিলাম আঁধার রঙা কাজল,
মেঘের রঙে সাজিয়ে দিলাম তোমার খোলা কুন্তল;
পলাশ রঙে রাঙিয়ে দিলাম ওই অধর যুগল,
চিবুকেতে এঁকে দিলাম লাল শতদল ।

অঙ্গে তোমার পরিয়ে দিলাম নীল অম্বরী,
নীয় তুমি আঁচল ভরে এ স্নেহাঞ্জলি ।

শুভ জন্মদিন ।।

Tuesday 29 April 2014

অভিমান ?

(১)

আহা রাগ করলে তুমি ?
তবে বললে কেন মিষ্টি লাগে আমার দুষ্টুমি ?
দেখো কতো রঙের ফুল এঁকেছি বনানীর গায় ,
তোমার অভিমানের আস্ফালনে পরিয়ে দেব তাই ।
আহা রাগ করলে তুমি ?
তবে বললে কেন মিষ্টি লাগে আমার দুষ্টুমি ?

---

(২)

কেন রাগ করলে বলো ?
আবার বুঝি ঘটা করে মান করতে হলো ?
বউ-কথা-কও, ময়না কোয়েল -
এদের ব্যাকুল করা গান,
বাঁশি ভরে তোমায় দিলাম
ভোরের কুহুতান ।
তবু রাগ করলে বলো ?
আবার বুঝি ঘটা করে মান করতে হলো ?

--

(৩)

এখনো মান ভাঙ্গেনি বুঝি ?
তোমার মান ভাঙানি জাদুর কাঠি কোথায় বলো খুঁজি ?
ফাগুন পূর্নিমায়,
চাঁদের তরী ভাসিয়ে দিলাম প্রেম যমুনায়,
সোনার স্বপ্ন বুলিয়ে দিলাম তোমার চোখের পাতায় ।

এখনো মান ভাঙ্গেনি বুঝি ?
তোমার মান ভাঙানি জাদুর কাঠি কোথায় বলো খুঁজি ?

--
(৪)

এখনও আছে গো মান ?
কত আদরের কতো ফুল,
সন্ধ্যা-মণি টগর চাঁপা
গোলাপ জুই বকুল।
কত চাঁদ কত তারা,
কত ঝর্না দিশাহারা ।
কত সুফী, কত পাখির গান,
করেছি তোমায় দান ।
তবু করো অভিমান ?
দেখবে এমন যখন হবে,
চলে যাবে কত দূরে,
দূর বহু দূরে ।
পাবে না আর আমার দেখা,
পাবেনা কিছুতেই,
দেখবে তখন
আমি নেই, আমি নেই ।
 
তখন প্রেম তিয়াশায়,
 একা একা বিভ্রান্তিতে
খুঁজো আমায়
বাষ্প মাখা অমনিশায় ।
তখন একা একা কোরো অভিমান,
করো নিষ্ফল অশ্রু অভিযান ।


এসো (1)

এসো আমার ঘরে এসো,
আপন করে এসো,
প্রেমেরো স্পন্দনে এসো,
নতুন ফুলের নতুন সুবাস হয়ে,
আমার প্রাণে মেশো ।

Tuesday 15 April 2014

শুভ নববর্ষ

এসো নতুন বছর এসো,
এসো বৈশাখ এসো,
নতুন করে এসো,
নতুন ভাবে, নতুন সাজে এসো,
এসো নতুন বছর এসো । 


নতুন গানের নতুন কলি এসো,
নতুন সুরের নতুন ডালি এসো,
মরা গাঙে নতুন জোয়ার এসো,
ভাঙ্গা তানে নতুন বাহার এসো,
এসো নতুন বছর এসো ।

নতুন ফুলের নতুন সুবাস এসো,
কচি পাতায় প্রাণের আভাস এসো,
নতুন আলোর নতুন বেণু এসো,
নতুন কুঁড়ির নতুন রেনু এসো,
এসো নতুন বছর এসো ।  

নতুন চাঁদের নতুন আকাশ এসো,
অন্ধ ঘরে নতুন প্রকাশ এসো,
শূন্য কোলে নতুন হাসি এসো,
সকল শূন্য পূর্ণ করে এসো,
এসো নতুন বছর এসো ।  

পথহারাদের আলোর নাবিক এসো,
ওগো দুর্জয় ওগো নির্ভীক এসো,
এসো ক্লান্তি-হারা পরম শান্তি এসো,
দুঃখ-হারা অরুণকান্তি এসো,
এসো নতুন বছর এসো ।  


এসো নতুন বছর এসো,
এসো বৈশাখ এসো,
আপন করে এসো,
নতুন রঙ্গে, নতুন ছন্দে এসো,
এসো নতুন বছর এসো ।।

     -----@------
সবাইকে নতুন বছরের শুভকামনা জানাই ।

--
কৃপা

পুনশ্চ : রবিঠাকুরের মহিমায় বেড়ে ওঠা; তাই এই কবিতায় তাঁর একাধিক সৃষ্টির ("এসো এসো আমার ঘরে এসো আমার ঘরে", "এসো হে বৈশাখ" প্রভৃতির) প্রভাব রয়েছে একথা স্বীকার করতে লজ্জা নেই । বরং ওনার গৌরবে গৌরবান্নিত হয়ে জীবন যেন ধন্য হয়েছে ।

Monday 14 April 2014

বিরহিনী

আহা বিরহে কাঁদে রাই,
বসন্ত জোছনায় ;


কালার ত্বরে নয়ন ভাসে অশ্রু জলে ;
হিয়ার মাঝে প্রণয় পিদিম জ্বলে ।

বৃন্দাবনে মোহন মুরলী বাজে,
মনকে ধরে রাখতে পারে না যে ।
মন বলে ছুটে যাই ওই বংশীধারী পানে,
মিলন বাসর রচি গানে গানে ।
পারে না সে
বসে রয় ব্যর্থ চরণে,
ধিকি ধিকি জ্বলে নিরবে বিরহ আনলে ।।

 

Monday 7 April 2014

আলালী

ওরে মেঘের দেশের আলালী,
কোথা থেকে এত সুখ তুই মনের মাঝে বিলালি ?
এক মুঠো আদর এত যতনে মাথায় আমার বুলালি,
কত স্বপ্নের প্রদীপ খানি আমার হৃদয়ে জ্বালালি !

Wednesday 2 April 2014

আলোর নাবিক

এবারে জানি আলো নিভে যাবে ।
এবারে ঠিক জানি !
পৌছাতে পৌঁছাতে ঠিক নিভে যাবে
সৈকতের সব আলো !
নামবে নিগুড় রাত
থাকবে না কোনো রঙ
ঝিল মিল ঝিকিমিকি বেলোয়ারি
মুছে গিয়ে
পড়ে থাকবে
আঁধার নিকষ কালো ।

কোথাও কোনো আলোর নিশান থাকবে না বাকি --
আকাশের শুকতারা, নক্ষত্র মন্ডল
সব ঢেকে যাবে ঘন জমাট বাঁধা মেঘে
সেই মেঘ -- যাতে জল নেই, আছে শুধু বুক ভরা বজ্র !

আবার আকাশ চেরা বিদ্যুত
চমকে দেবে না-ফোটা আশা,
ঝরিয়ে দেবে না-জাগা স্বপ্ন !
পাঁজর ভাঙ্গা কান্নায় ভেসে যাবে জাহাজ
অতল গভীরে তলিয়ে যাবে
জীবনের সব রসদ, বাঁচার শেষ আশাটুকু ।

তবু ছুটে যাই ছুটে যাই
জাহাজ ছুটিয়ে,
দুনির্বার গতিতে
প্রাণের শেষ শ্বাসটুকু বাজি রেখে ;
যদি পথের ভুলে, ভাগ্যের দাক্ষিন্যে 
পাই ভোরের স্বপ্নে দেখা স্বর্গ দ্বীপ !

Tuesday 1 April 2014

ভয়

 এ কি ভাবের মালা পরিয়ে দিলে গো সখী
পরতে গেলে হয় ভয়,
খুলতে গেলেও কাঁপে হৃদয় !

এত কেন ভালোবাসো মোরে,
এমন করে বাঁধো  চিত ডোরে ?

সব পেয়েও করি ভয়,
যদি সুখের ঘর ভেঙ্গে দেয়
ঝড় নির্দয় !

Thursday 13 March 2014

অচেনা তুমি




(১)
কে তুমি এলোকেশী,
ভদ্রবেশী ?
হাসো এমন মধুর করে
বাজিয়ে বাঁশি সর্বনাশী ?
এক ফালি চাঁদ হাসে
তোমার দু চোখের জল মহলে 
রং ঝড়ানো অঙ্গে তোমার
জ্বলে রূপ সর্বগ্রাসী ।

(২)

একি অবুঝ খেলা,
মায়া ঘেরা প্রহেলিকা ?
মিষ্টি হাসির যবনিকা ;
তার আড়ালে --
কত না বলা কথা,
কত না বলা সংলাপের মহড়া,
কত না ঘটা দৃশ্য,
কত গোপনে দেখা
স্বপ্নের ছবি আঁকা ।

Thursday 27 February 2014

পাপ

মাঝে মাঝে জাগে কি উত্তাপ,
কালাহারি তাপে কেউটের বিষ মাখানো পাপ ?

জীবনের যাঁতাকলে পিষে নিংড়ে বেরোতে  চায়
চাপা নরকের অবীলতা ।
চাপা ঘেন্না, চাপা ব্যথা,
চাপা কান্নার কথা ।
বিতৃষ্ণা ধরে যায় দৈনন্দিন টানাপোড়েনে,
ভাবো, যদি একটু খারাপ হই
ক্ষতি কি?
আড়ালে আবডালে যদি
লালশা চুবিয়ে নি গোপন অন্ধকারে
ক্ষতি কি ?

ভিড়ে,  ভালো মানুষের মুখোশ খানা পরে
জন অরণ্যের কোলাহল ঠেলে দেখো
সেই হাল ফেশানি বসন এর আড়াল থেকে
উদ্দীপ্ত যৌবন দেয় উঁকি !
মন কি চায়
সেই নীল আব্রুর অন্তরালে
রূপের আঁচ পেতে ?
তার তন্বীর আগুন
অঙ্গে শুষে নিতে ?

জীবনের যানজটে জট পাকিয়ে যায়
চিন্তা, সুস্থ বাঁচার আশা ।
তখন কি চাও
এই নির্মম অক্টোপাস থেকে মুক্তি পেতে,
রসাতলের চুল্লিতে আত্মা ঝলসে নিতে ?
কোকেন শ্যাম্পেন আতরে
রসনা ভিজিয়ে নিতে ?
নরকের কানা গলিতে
স্বর্গের চাঁদ ধরতে ?
একবার বাঁচার নেশায়,
বার বার মরতে ?

করেনা ইচ্ছা ?
নাকি তীব্র লোক লজ্জা,
নোঙ্গর ফেলে রাখে ?
তোমার ভদ্রবেশের পলেস্তরা
খসে খসে স্যাঁতস্যাঁতে নগ্নতা উঁকি দেয় ?
নৈতিকতার শিকল ছিঁড়ে
কি ভেতরের পশুটা
জেগে উঠতে চায় ?

জঠরের আগুন কি পোড়াতে চায়
বড় লোকের রঙমহল ?
কোলের শিশুর মুখে
অন্ন দিতে কি শরম বেচতে হয়
বস্তির অন্ধকারে ?

কত পাপ জমা আছে
মনে নির্লজ্জ ভন্ডামির নামাবলী আড়ালে ?
ভীষণ আবেদনে উন্মাদ হও
গহন মনের অন্তরালে ?

 নৈরাজ্য নৈরাশ্য,
আঁধার রাতের আদিকাব্য !
কে সভ্য, কে অসভ্য ?
কে আদিম কে অমর,
মৃত সুপ্তি বন পিঞ্জর !
মায়ার অন্ধকূপ,
ভাঙ্গা চরিত্র ভগ্ন স্তূপ !

এইভাবে অবচেতনে কখন কোন অজান্তে,
এসে দাঁড়াও সেই খাদের প্রান্তে,
আর এক পা এগোলেই তলিয়ে যাওয়া
জড় তনু মন সেঁকে সেঁকে দেয় শয়তানি কালো হওয়া !

তখনই ... ঠিক তখনই ...
কেউ পেছন থেকে জামার খুট টেনে ধরে,
ঘুরে  দেখো অমনিশার ঘোরে,
এক নিষ্পাপ দেব কন্যে !
যেন সুধায় তোমায়,
আলো ঝরা মুখ মন্ডলে
"কেন তুমি আমায় ফেলে ,
অচিরে যাচ্ছ চলে ?"
এক লহমায় মিষ্টি বজ্রাঘাতে,
ফিরে এলে,
এই আবীর মাখা দেশে !
মায়ের স্নেহের দেশ,
ভালবাসার দেশ ।
ফুল পাখির দেশ
চাঁদ তারার দেশ ।
বিবেক মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়,
পরিয়ে দেয় দীপ্তি জ্বলা বেশ !

যতই মন চায় ব্যভিচারী হতে;
ফিরে এসো বার বার এই পুণ্য স্রোতে,
পরম শান্তি সৈকতে !


Saturday 22 February 2014

সুভ্রজিতের ছেলের জন্মদিন

(১)
ও ফুল তুমি ফুটে থেকো
ফুলের মধু মেখে,
বেড়ে ওঠো আকাশের চাঁদ হয়ে
দু চোখে রঙিন স্বপন এঁকে ।।

শুভ  জন্মদিন ।


(২)

কে হাসে ওগো
অমন মিষ্টি করে,
তার চাঁদ মুখ থাকুক,
সদাই জ্যোত্স্না ভরে ।

জন্মদিনের  শুভেচ্ছা ।

মাতৃভাষা

হে আমার বাংলা ভাষা ।
তুমি আমার মায়ের ভাষা
সাধের আশা, ভালবাসা ।

তুমি খ্যাপা বাউলের গান,
তুমি মঙ্গল কাব্যের আখ্যান ।
তুমি গৌর হরির কীর্তন,
তুমি মহানামের উচ্চারণ ।
তুমি রামকৃষ্ণের বাণী,
তুমি বঙ্কিম শরত কাহিনী ।
তুমি বীর নজরুলের হুঙ্কার,
তুমি লালন গীতির টঙ্কার ।
তুমি রবি ঠাকুরের গীতাঞ্জলি,
তুমি কবিগান, তুমি পাঁচালি ।
তুমি ঋত্তিক-মৃণাল-সত্যজিতের চিত্র,
তুমি ওঙ্কার, তুমি তর্পণ, তুমি স্তোত্র ।


তোমাতে মায়ের স্নেহ চুম্বন,
প্রিয়ার নিভৃত স্পন্দন ।
তোমাতে অনুরোধ তোমাতে উপরোধ
তোমাতে মৈত্রী তোমাতেই বিরোধ ।
তোমাতে বিবাদ তোমাতে কোন্দল
তোমাতেই আবার মিলনের হিন্দোল ।
তুমি অভিমান তুমি উচাটন
তুমি সম্পর্কের সাতকাহন ।

সবিই তোমার মহিমায়,
সবিই তোমারি অঞ্চল ছায়ায় । 

তোমাতেই প্রথম 'মা' ডাকা,
তোমাতেই প্রথম চোখে জীবনের স্বপ্ন আঁকা ।
তোমাতেই প্রথম ব্যথার অভিব্যক্তি,
প্রথম সুখের প্রথম অনুভূতি ।
তোমাতেই প্রথম চোখে চোখ রেখে হৃদয়ের কথা বলা,
তোমাতেই ভাবের ডালি খোলা ।

তোমাতেই মাঝি মোল্লাদের গান,
তোমাতেই ভাটি তোমাতেই  উজান ।
তোমাতেই ভোরে আগমনীর সুর,
তোমাতেই হয় শারদ অবসান বেদনা-বিধূর ।
তোমাতেই জনমে উল্লাসের রোল,
তোমাতেই বুক ভাঙ্গা হরির বোল ।
 
তোমাতেই জনম, তোমাতেই জীবন,
তোমাতেই কৃষ্টি, তোমাতেই মনন ।  

কত সাধ নিয়ে বলেছি তোমাতে কত কথা,
লিখেছি কত সুখ কত ব্যথা ।
তোমাতে বুনে শব্দ জাল,
খুলেছি সকল বন্ধ দার ।
তোমাতে  জ্বেলে জ্ঞান-মশাল,
ঘুচিয়েছি মনের অন্ধকার ।

কত কিছু পেয়েছি ওগো তোমার চরণ তলে,
তাই পরিয়ে দিলাম এই শ্রদ্ধার মালা তোমারই গলে ।

শেষ কথা টুকু
বলতে চাই হাত দুখানি তুলে
তোমার কোলে জন্মেছি গো
যেন মরি তোমার কোলে ।

শুধু এত টুকু আমার তুচ্ছ অভিলাষা,
ওগো আমার বাংলা ভাষা ।
আমার সাধের আশা, ভালবাসা ।

Thursday 20 February 2014

অসীমের খোঁজে

হে সুন্দর !
হে ভাবের সমুন্দর,
রস সলীল পারাবার,
অনন্ত সুখের আধার,
যার নেই পারাপার ।
তোমার আলোকে ডুবতে চাই নিরন্তর,
তোমার চরণ তলে খুঁজি সুখ অমৃত প্রান্তর ।
নেশা কাটেনা তোমার মহিমার,
করুনা তোমার অসীম অপার ।

ছুটে ছুটে যাই
বাউলের ন্যায়
দেশ থেকে দেশান্তর ।
পাইনা তোমার দেখা
তোমার রূপ আনিলে সলিলে সমীরে
কৃপা তোমার খুঁজি ফিরি নীড়ে নীড়ে ।
তোমার রূপ জ্বলে চাঁদে আকাশের তারায়
দেখি তোমার প্রতিচ্ছবি নয়নের তারায় ।
শুনি তোমার বংশী ধ্বনি আকাশে
পাই তোমার সুগন্ধ অপরূপ বাতাসে ।
শুধু পাইনা তোমার দেখা
শুধু একা একা করি
তোমার গুনগান,
তোমার নিষ্কাম অপেক্ষা ।

Monday 17 February 2014

শুভ জন্মদিন : জিয়া দা

জানি থাকো তুমি বহু ক্রোশ দূরে,
তবু রেখেছি তোমায় ধরে, আমাদের হৃদয় ঘরে ।
রেখেছি তোমার স্মৃতি আপন করে,
তাই এ শুভ দিনে জানাই শুভেচ্ছা ডালি ভরে ।।

জন্মদিনের আন্তরিক শুভেচ্ছা রইলো ।

Friday 14 February 2014

অবুঝ

দেখেছি তোমার শিশির ভেজা রূপ অপরূপ,
নিশ্চুপ মিষ্টি হাঁসি
মাখা ওই মুখশ্রী ;
কিন্তু হায়
বুঝিনি তোমায়
হে বৈষ্ণবী !
আমারই নাম জপে কীর্তন,
করেছ গোপনে
মধূ স্বপনে
জাগরনে
অচেতনে;
করেছ পান
আমারই স্মৃতি-সুধা
সারাক্ষণ ।

ওই সাগর গভীর হৃদয় তলে,
ছিল যত মুক্তো,
ছিল যত সাধ, যত কথা অব্যক্ত ,
 গেঁথেছো কন্ঠহার
সযতনে সন্তর্পনে
আমারই জন্যে ;
বুঝিনি কিছুতেই,
বুঝিনি কোনক্ষণ !
 

Saturday 25 January 2014

শুভ জন্মদিন : অয়নদা

(১)
আজ এ দিনে,
এক মুঠো আবীরের রঙ দিলাম তোমায়,
উড়িয়ে দিও আকাশে,
এক গোছা ফুলের সুবাস দিলাম তোমায়,
মিশিয়ে নিও বাতাসে ।
মুছে কালো মেঘের অন্ধকার,
আসুক নব আশার সূর্যোদয়।
জাগিয়ে আবার প্রাপ্তির নেশা,
আসুক নব কর্মের অঙ্গীকার ।

(২)

জন্মদিনে যদি জীবন নাহি মিলে,
তবে কিসের জনম, কিসের মরণ ?
যদি তব তেজ নাহি হবে অগ্নি,
যদি গগন-বিদারী হুঙ্কার ছাড়ি
নাহি কাঁপাইলে অবনী,
তবে কিসের তরে জনম লওয়া,
কিসের তরে জীবনের গান গাওয়া ?
কিসের গরবে গরবিনী হবে তব জননী ?


কিসের তরে এ তুচ্ছ প্রাণ ধারণ ?
যদি ক্ষুদ্র বীজ হয়ে পর্বত তলে পিষ্টে হয় মরণ ?
যদি মহা মহীরুহ হয়ে না ওঠো বাড়ি,
যদি অচেতনের শয্যা না ওঠো ছাড়ি,
তবে উদ্ধত স্ফুলিঙ্গ কেমনে জ্বলিবে দাবানল হয়ে,
কর্ম প্লাবন কেমনে আসিবে নব আনন্দের বার্তা লয়ে ?


ওঠো ওঠো হে কিরীটি,
ওঠো হে গান্ডীব-ধারী !
ওঠো হে নির্ভীক,
ওঠো আলোর পথচারী !
পুষ্পক রথে উঠে হে ধনঞ্জয়,
চূর্ণ করে সব ভয়,
হয়ো তুমি দুর্জয় !
তুনীর হতে লহ অগ্নি-বাণ,
ধনুকের ছিলায় দিও টান,
তব টঙ্কারধ্বনিতে ভূলোক দ্যুলোক হবে কম্পমান ।

দেখে তোমার অনল-জ্বলা উষ্ণীষ,
মৃত্যু তোমায় করবে কুর্নিশ;
চুরমার করে জয়দ্রথ-দুয়ার,
বিধির চক্রব্যূহ করে ছারখার;
ছিন্ন করে জড়-শৃঙ্খল,
উড়িয়ে দিয়ে নীল কুন্তল,
রচিবে তুমি জগত কানন ।

হাসি মুখে পান করে বাসকি-গরল,
ফোটাইবে হিংসামাঝে প্রেম-শতদল;
ক্ষীর-সমুদ্রে করিবে নিশ্চিন্ত শয়ন,
তবু ধরণী-বক্ষে রহিবে সদা তোমার চরণ ।


এসো আজি অগ্নি-বালক,
মাথায় লয়ে ময়ূর-পালক;
মৃত্যুঞ্জয় সুখে,
মোহন-বাঁশি মুখে,
হয়ে নিষ্ঠায় অবিচল,
লয়ে হৃদয়ে প্রাণের হিন্দল,
মন্দার-মালিকা কন্ঠে ধারণ করি,
অঞ্চলখানি মণি রত্নে ভরি,
করিও তুমি জগৎ পালন ।


ত্রিভুবনবাসী গাহিবে তোমারই জয়গান,
তব শীর 'পরে রহিবে বিজয়ের শিরস্ত্রাণ ।

এ শুভদিনে,
করি তোমায় সাদর আপ্যায়ন,
পত্রে পুস্পে রঙে রসে হোক আনন্দের বিচ্ছুরণ,
মোর তুচ্ছ নিবেদনটুকু তুমি করহ গ্রহণ ।

শুভ জন্মদিন ।।