Saturday 31 October 2015

গোপন

আমার চ্যাট বক্স দিয়ে সে
উঁকি দিতো আমার বেড রুমে;
উঁকি দিতো আমার অগোছালো আলমারিতে,
আমার অপরিষ্কার টেবিলে,
ছুঁতে চাইতো আমার গোপন ক্ষতটাকে;
যে গুলো কেউ দেখতে পেতো না--
চিলেকোঠা, খেলনার তির-ধনুক,
প্রথম দাড়ি ওঠা, লুকানো অ্যাডাল্ট  পত্রিকা -- সব দেখে ফেলতো সে, সঅঅব!
শেষে, আমার অসহায় প্রশ্রয়ে
নারীর অলঙ্কার ফেলে রেখে
এলিয়ে পড়তো আমার গায়ে ;
রাতের যবনিকায় ঢাকা পড়তো
ছবির censored দৃশ্য ।

সকালে ঘুম ভেঙ্গে দেখতাম
সে offline,
তবু তার গন্ধ লেগে আছে আমার গায়ে ।

আশিকী

 গতকাল CIKM এ আমার পোস্টার প্রেসেন্টেশন ছিল | আমার থেকে এক পোস্টার দূরে যে ছেলেটি দাঁড়িয়ে ছিল তার নাম আশিকুর  খুদাবক্স | খুদা গবাহ ছবিতে ড্যানি ডেনজংপার চরিত্রের নাম ছিল খুদাবক্স | সে ছিল দোর্দণ্ড প্রতাপ আফগান পাঠান ! আমার  প্রতিবেশীকে  দেখে অবস্য  আফগান মনে হয়না | ছিমছাম, শান্ত, ছিপছিপে চেহারা, বুদ্ধি-দীপ্ত চোখ | কি একটা জটিল ক্লাসিফিকেশন নিয়ে কাজ করেছে | আমাদের প্রায়ই চোখাচোখি হচ্ছিল | আমি এমন অবস্থায় নিজেই আগে কথা বলি | তবে এক্ষেত্রে নামের নিচে এফিলিয়েশন  - CMU, কম্পিউটার সায়ান্স ডিপার্টমেন্ট দেখে আর সাহস করে এগোচ্ছিলাম না ! পোস্টার হাটে লোক জমছিল | কৌতূহলী কয়েকজন শ্রোতাকে আমার কাজ বোঝালাম | মাঝে অস্ট্রলিয়ান আঞ্চলিক অনুষ্টান হলো | আদিবাসীদের অদ্ভুত গানে  ও  দিদগেরিদুর বিকট আওয়াজে কনফারেন্সের শান্ত পরিবেশ শব্দময় হয়ে গেছিল প্রায় ১৫ মিনিট !  পোস্টার পর্ব ঘন্টা দুএক চললো | হাট ভাঙ্গার সময় হয়ে এলো | আমি পাত্তারি, মানে, পোস্টার গোটাব কিনা ভাবছি এমন সময় মাতৃ-ভাষা শুনতে পেলাম "কলকাতা থেকে তো ?" অবাক বিস্ময়ে দেখি আমার ঠিক পাশেই আশিকুর দন্ডায়মান ! আফগান পরিষ্কার বাংলা বলছে? আমি উত্তর দিলাম "হ্যান কলকাতায় বাড়ি ..এখন আসছি বেলজিয়াম থেকে" খুদাবক্স বললো "আমার বাড়ি কাল্যানিতে..CMU থেকে পিএইচডি করছি" | কমলেস্বরের চাঁদের পাহাড় ছবিতে খোদ পর্তুগিজ দিয়েগো আলভারেজ বাংলা বলেছিল | যদি পর্তুগিজ পারে তাহলে আফগান  পারবে না কেন ? যদি তার জন্ম কাল্যানিতে হয় তাহলে হতেই পারে ! এইভাবে আমাদের কথাবার্তা  শুরু  হলো আর দেখতে দেখতে  দিব্বি বন্ধুত্ব জমে উঠলো | পরে জানলাম  খুদাবক্স হলেও আশিকুর আসলে বাঙালি | তার ওপর মা বিয়ের আগে ঘোষ ছিলেন ! বাবা কোনো ভাবে আফগান ছিলেন কিনা সেটা অবস্য জানা হয়নি | আর রবি ঠাকুরের গোরা যদি আইরিশ মাতার সন্তান হয়েও বাঙালি  হতে পারে, তাহলে আফগান সন্তান পারবে না কেন?

এর পর আমরা একসাথে ডিনার করলাম এক মেক্সিকান রেস্তোরায় | জানলাম আশিকুরের ব্যাচেলর্স কল্যানী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে | তারপর GRE দিয়ে ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিটিশ কলম্বিয়াই মাস্টার্স | আরও জানলাম ইনি নিজে কবিতা গান উপন্যাস লেখেন | গানে সুর করেন আর নিজেই গান ! আর সেই গান নাকি আমায় শোনাবেন ! আমার হোটেলে wifi কিনতে হয় | আমার কিছু দরকারী মেল চেক করার ছিল | সেটা ওকে বলায় ও বললো "আমার হোটেলে আমার নেট ব্যবহার করবে চল" | শেষে ওর প্রস্তাবে রাজি হতে হলো | আমার হোটেলের কাছেই ওর হোটেল | ওর ঘরে নিয়ে গিয়ে আমায় নেট করতে দিলো | আর বললো "আমি  একটু সাঁতার কেটে আসি, তুমি ততক্ষণ কাজ করে নাও..আমি এসে গান শোনাব" | বাবু সাঁতারও কাটেন ! আমি রাজি  হলাম | নেট জলের মত, যা ছাড়া জীবন চলে না !  এই মরুভূমির দেশে যে আদর করে নেটের তৃষ্ণা মেটাচ্ছে তার অনুরোধ ফেলি কি  করে ! কাজেই আশিকুর গেলো জলে, আমি স্থলে নেট সমুদ্রে সাঁতার কাটলাম | ঘন্টা আধেক পর সাঁতারু ফিরে এলেন | সাধারণত নাকি ইনি ৪৫ মিনিটের মত সাঁতার কাটেন | কিন্তু আজ বোধ হয় শ্রোতাকে গান শোনাবার উত্তেজনায় তাড়াতাড়ি চলে এসেছে ! এবার গানের পালা | আমি প্রস্তুত হলাম | আশিকুর গিটার টিউন করতে করতে গান ধরল | পর পর দুটো গান | একটা বাংলা, একটা হিন্দি | শুনে চমকে গেলাম ! বেশ ভালো ! বিশেষ করে হিন্দিটা | লেখা সুর গায়কী তিনটেই চমত্কার ! জানলাম শিল্পী  ছোট  থেকেই গান শিখেছেন -- রবীন্দ্র, নজরুল, ক্লাসিকাল | গিটারও শিখেছেন ! একটা বাংলা সিনেমায় নাকি সুর দেওয়ার কথা অনেক দূর এগিয়েছিল | শেষে নাকি তার জায়গায় স্বনামধন্য প্রিতমকে নেওয়া হয় | তাতে শিল্পীর খুব দুঃখ ! এর পর কবিতার পালা | সেটাও বেশ চমকপ্রদ ! বেশ হালের স্টাইলএ  লেখা | ভাবের গভীরতা রয়েছে, পরিপক্কতা রয়েছে | কবির কবিতা নিয়ে বিস্তর  পড়াশোনা ! নিয়মিত কিছু পত্রিকায় তাঁর লেখা বেরোয় | আমি এই কবিতা থেকে বুঝলাম আমি কবিতার জগতে অনেক যুগ  পেছনে পরে আছি ! আমার কবিতা পরে আশিকুর বললো সেই একই কথা ! বললো কনটেম্পরারী কবিতা পড়তে হবে | আর  বিভিন্য যুগের কবিতা পড়তে হবে | তাহলে কবিতার বিবর্তনটা বোঝা যাবে | সঙ্গে আমার লেখাতেও সেই বিবর্তন আসবে | বেশ  কিছু কবির নাম জানলাম -- এদেশের ও বিদেশের, যাদের লেখা পড়লে এই আধুনিকতার দিকে যাত্রা করা যাবে | এছাড়া  আশিকুর উপন্যাসও লেখে | এর খোরাক যোগার করতে নাকি রেড লাইট চত্তরের দালাল দের সাথে বন্ধুত্ব করেছে, ভিখারীদের জীবন সম্বন্ধে জানতে তাদের পাশে বসে তাদের লক্ষ্য করেছে | এছাড়া নাকি একা একাই বাইকে চড়ে কলকাতা থেকে বারানসী গেছে ! মাস্টার্সের পর বিদেশে Microsoftএ চাকরি করতো | তারপর CMUতে  পাওয়ার পর চাকরি ছেড়ে দিয়ে বছর দের পর CMU যায় | এই  দেড় বছর নাকি দেশ দেশান্তর ঘুরে বেরিয়েছে !

শুনেছি মাঝে মাঝে নির্বোধ মূর্খ ক্ষুদ্রবুদ্ধি মানুষের উদ্ধারে ঈস্বর দূত পাঠান | আমার মনের অজানা কোণে গোপন সিন্ধুকে বোধ হয়  কিঞ্চিত অহংকার জন্মেছিল নিজের যোগ্যতা ও ক্ষমতা নিয়ে | আজ তা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেলো ! মহাবিশ্বের বুকে আমার  অকিঞ্চিত্কর অবস্থান ও তুচ্ছতা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার জন্যই যেন বিধাতার এই খেলা ! তবে অন্যভাবে দেখলে এটা  আত্মসুদ্ধি ও চেতনার মার্গও বটে ! এই ঘটনায় অবশ্য আমার একটুও আহত মনে হচ্ছে না | বরং অসীম প্রশান্তি খুঁজে পাচ্ছি নিজের মধ্যে | আশা করি বড় হওয়ার পথে এই শিক্ষা আমার পাথেও হয়ে থাকবে | এই জন্যে আমার ভাগ্যের কাছে আমি কৃতজ্ঞ |

Saturday 10 October 2015

মিস লিস্ট

IR ল্যাব আর CVPR-এর  কিছু স্থান, ব্যক্তি ও ঘটনা আমার, এবং আমার মনে হয় অনেকেরই স্মৃতিপটে অমলীন রয়ে গেছে । তারই কিছু তুলে ধরলাম :

জানলার ধার আর IR ল্যাব
-----------------------------
IR ল্যাব, চেয়ার, জানলার ধার
জানলার বাইরের দৃশ্য..
গাছের মাথা, অদূর ডানলপ
আর ফ্লাইওভার;
যার গা বেয়ে
ঝরনার গায়ে
একটি একটি জলের কণার মত
নামে গাড়ি ।
আরও সুন্দর হয় সে রূপ সন্ধ্যে নামলে ;
যখন শহর আলোর গয়নায় সেজে ওঠে ।
আর কোন মায়াবিনীর এলানো খোলা চুল বেয়ে
যেন আলো কণা নেমে আসে !


সঙ্গে ল্যাব এর দৈনন্দিন কর্মব্যস্ততা
কখনো খরস্রোতা নদীর কুলুকুলু শব্দ
কখনো মৃদু মন্থর দুলকি চাল ;
আর শনিবারে শান্ত নিস্তব্দতা ..


কারো জন্মদিনে কেক কাটা
এবং তারপর সবাই মিলে হই হই করে
food village বা ambrosiaএ খেতে যাওয়া
সব মিলিয়ে খুব হইচই আর আনন্দ ।


মন্দার স্যার
---------------
মন্দার স্যার, নিবিষ্ট চিত্তে
অসীম to-do লিস্টের পেছনে ধাবমান !
তারই ফাঁকে নতুন সিনেমা,
বা বিশেষ ভালো লাগা সিনেমা (বা নায়িকার) উল্লেখ পেলেই
নিজের আন্তরিক মুগ্ধতা প্রকাশ ;
ক্ষনিকের দীর্ঘশ্বাস,
তারপর আবার to-do লিস্টের পেছনে দৌড় !
নিজেরই তৈরী কর্ম-ঘুর্নিতে নিরন্তর ঘুরপাক খাওয়া !
তাঁর সন্তোষী মায়ের প্রতি একনিষ্ট ভক্তি
ও খাতা দেখায় অশেষ খুঁত খুঁতামি -- দুইই কাল-গ্রাসী !
স্যার অনুপস্থিত থেকেও উপস্থিত,
তাঁর অগনিত ভক্ত ও পাওনাদারদের মাধ্যমে !
তবে এমন মানুষের সান্নিধ্য পরম অমৃত লাভের সমান !
বিচক্ষণ, স্থির-বুদ্ধি, সহিষ্ণু ;
সুক্ষ, উচ্চস্তরীয় রুচির অধিকারী -- কি সাহিত্য, কি সঙ্গীত, কি সিনেমা !
উত্কৃষ্ট শিক্ষা, মার্জিত স্বভাব ও সংস্কৃতির বিদগ্ধ মূর্তি !
তার উদারতা ও down-to-earth স্বভাব, তাঁর দেবতুল্য চিত্র আঁকে সবারই মনে..
এ সঙ্গত ভাগ্যবানের ভাগ্যেই জোটে,
এবং সর্বপরি,
আমার ব্যক্তিগত জীবনে তাঁর উপকারের ঋণ
আমার জন্ম জন্মান্তরের পাথেও হয়ে থাকবে !
এবং তাঁর সংস্পর্শে এসে বোধ হয়
আরও সম্পূর্ণ ও শিক্ষিত মানুষ হওয়ার পাঠ পেয়েছি ।

দীপা দি
---------

বড় দিদির মত
বিপদে ভরসা দেওয়া
গবেষণা ও সংসার নিয়ে
কত গভীর কথা
(এসব যদিও হত ল্যাব ফাঁকা থাকলে, শনিবারে)
কর্মব্যস্ত দিনে সেই স্নেহমাখা হাসি
আর কাজের ব্যস্ততা, মন্দার স্যারের কাছে দুঃখ প্রকাশ ।
এই সবের মাঝে,
মরুদ্যানের মত দিয়ার দিব্য হাসি
আর মধুর চলা-কলা ।

প্রসেনজিত দা, উত্পল স্যার ও শংকর দা
-----------------------------------------------


এরই মাঝে ধুমকেতুর মত প্রসেনজিত্দার আবির্ভাব ঘটে !
হাজার জটিলতার কালো মেঘ মাথায় পরে
মন্দার স্যার এর  সাথে "serious" আলোচনা !
সান্ধ্য অধিবেশনে উত্পল স্যার এর প্রবেশ
এবং যোগদান এই "serious" আলোচনায় ;
ফোড়ন পরায় আলোচনা আরও "serious" হয়ে ওঠে !
তিনে মিলে বাবু-চরিত্রের বিশ্লেষণ
তাঁর চরিত্রের বিশেষ দিক গুলো আবার ঝালিয়ে নেওয়া ..
তাঁর নতুন দুঃখ, কার কাছে কোন দুর্বল মুহুর্তে ঝাঁপি খুলেছিলেন, তার আখ্যান..
সুযোগ বুঝে শংকর দার প্রবেশ,
ওনারও বাবু বিষয়ক নতুন টিপ্পনি
সব মিলিয়ে তুমুল রং-তামাশা !
 
রাত গড়ালে মন্দার স্যারের kernel mode দেখা যায়,
যা বিশেষ বিশেষ মহেন্দ্র ক্ষণে, প্রসেনজিত-উত্পল অনুঘটকের উপস্থিতিতে,
স্যারের বিশেষ ভাবের উদয় হলে দেখা যায় !
কথায় বলে, দশচক্রে ভগবান ভূত !
তেমনি স্যারের এই অদ্ভুত রূপ, যা অনির্বচনীয় !
যা আমাদের মত ক্ষুদ্র বাকরুদ্ধ দর্শকদের হাসি কান্নার মধ্যবর্তী স্ত্ররে নিয়ে যায় !
আমরা কজন ভাগ্যবানই দর্শন পেয়েছি সেই রূপের, এই IR ল্যাবে (কখনো FIRE এর শেষ রাতে)
যেমন কুরুক্ষেত্রে দু পক্ষের মাঝে অর্জুন বিশ্বরূপ দর্শন পেয়েছিলেন, এও তেমনি !
 
সেক, দই, অয়ন দা  ও  অনির্বাণ 
------------------------------------
 
 

স্থীর নদীতে দুরন্ত ঘূর্ণির মত
সেকের প্রবেশ !!
নিজের ল্যাব তার গম্ভীর গবেষনার জায়গা,
আর আমাদের ল্যাব তার বাওয়াল আর খিল্লির মুক্ত অঙ্গন !
খাপ খোলা তরবারির মত চলতে থাকে তার জিহবা
তার ঔজ্জল্যে ও তীক্ষ্নতায় ল্যাবের সবাই (মন্দার স্যার ব্যতিত) পরাভূত !
প্রথমে এক কোণে প্রবল tension নিয়ে
ভ্রুকুটির প্যাঁচ কপালে এঁকে
গবেষণারত ও দেবাশিষ  দার  সাথে আলোচনারত
"দই সোনার" ধ্যান ভঙ্গ ..
এর পর ল্যাদ-সমুদ্রে চির নিদ্রিত
অয়ন দার প্রতি শুভাকাঙ্খা প্রকাশ ।
এর পর দু'এ  মিলে
গভীর থেকে গভীরতর অর্থ যুক্ত
স্থুল এবং সুক্ষ
বিষয়ে উত্তাল বাক্যালাপ !
এরই মাঝে অনির্বাণের প্রবেশ ;
তার কেষ্টামো ও নারী সঙ্গতের
ব্যভিচারী আলোচনা !
অনির্বাণের ঘোর অস্বীকার..
সব মেয়েকে "just friends"
এবং নিজেকে "good boy" এর দাবি ..
দইয়ের উত্তেজিত কাউন্টার -যুক্তি,
দীপাদির জ্ঞান-গর্ভ বিশ্লেষণ
ও মোক্ষম প্রশ্নবান !
এরই ফাঁকে অনির্বাণের
আমার সাথে রিসার্চ ও ভবিষ্যত বিষয়ে চিন্তা
এবং কোন মেয়ে কি কি কাজ করে
কোথায় কোথায় সুযোগ পেয়েছে তার আখ্যান !
 
জিয়া দা
--------

জিয়া দার আমাদের দেশ ও (অ)সভ্যতার
সকল "অশিক্ষিত", "worthless"  মানুষের মুন্ডপাত !
কেন তারা জাতির কলঙ্ক,
কেন তাদের কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা মাইনে দেওয়া হয়
কেন তারা ছাত্রদের "কাঠি করে"
তা সত্তেও তাদের কেন শাস্তি হয়না ..ইত্যাদি !!
এরপর আসে দাদাগিরির পালা :
যুক্তির ঘাড়ে যুক্তি চাপিয়ে
হ্যা কে না , না কে হ্যা  করা !
এবং তাই দিয়ে অবলা কনিষ্ঠদের বিপুল লেহন !
তবে কঠিন সময়ে ছোটদের পাশে থাকা,
ও তাদের ভুল ত্রুটি (নির্মম ভাষায়) দেখিয়ে দেওয়া,
এসবেও জিয়া দার অবদান অনস্বীকার্য।
এবং আমার ব্যক্তিগত জীবনে
জিয়াদার উপকারও আমি কোনদিনও ভুলব না ।
 
 
আনন্দ দা -- ভাট সম্রাট
------------------------------

 
ভাট অনেকেই বকে..
কিন্তু ভাট বকাকে যে শিল্পের স্তরে নিয়ে যাওয়া যায়
আমরা তা শিবরাম, সুকুমার রায় এর কাছে জেনেছি ।
আনন্দ দা কাজের সময় প্রচন্ড serious..
অনাবৃতা এঞ্জেলিনা জোলির সাথে পথে দেখা হলেও
পাশ কাটিয়ে চলে যাবে !
কিন্তু  কাজের বাইরে তার এই ভাট-ময় রূপ দেখা যেত !
আনন্দ দার সাহিত্য চর্চা, এই nonsense ভাটকে
এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে চলে যেত !
অয়ন দাও এখানে আনন্দ দার সতীর্থ বটে..
(আনন্দ দা কানাডা চলে যাওয়ার পর এই ভাটের দ্বায়িত্ব কিছুটা হলেও অয়ন দা সামলেছিল)
পথে ঘাটে, ল্যাবে, টি ক্লাবে, কেন্টিনে -- সম্রাটের ভাট গীতি শোনা যেত
যাকে ভাটিয়ালিও বলা যায়...
(এখানে, আনন্দ দা কে ভাট-নগরে সমানিত করা যায় কিনা
সে আলোচনায় পরে আসছি;
বা ভাট উপাধিও নামের শেষে জুড়ে দেব যায়
যেমন, অনান্দারুপ রায় ভাট !
অবশ্য এতে মহেশ ভাট বিশেষ আতঙ্কিত হতে পারেন !
আলিয়া ভাট নিয়ে ঝামেলার পর আর এক নতুন ভাট এর নাম শুনলে
মূর্ছা যেতে পারেন !) 
 অয়ন দাও মাঝে মাঝে অন্তরার জায়গাটা ধরত,
এবং দুই ভাটিয়াল মিলে তুমুল ভাটবাজি হত !
কিন্তু, হঠাত যদি দেখা যেতো,
এই দুই ভাটিয়ালের ভাট প্লাবন আচমকা pause হয়ে গেছে,
ও এদের চোখ গোলাকার ও স্থির হয়ে গেছে,
এবং দুজন নির্লিপ্ত ভাবে উত্তপ্ত ফিসফিস আদানপ্রদান করছে,
তাহলে বুঝতে হবে অতি নিকটে এক অত্যন্ত রমনীয় লোভনীয় উপাদেয়
ললনার আগমন ঘটেছে !
যা দেখে দুজনের প্রথম রিপু ব্রম্ভতালু ভেদ করার উপক্রম করছে !!
এ অবস্থা প্রেসার কুকারের মত--
ভেতরে আবেগ টগবগ করছে,
বাইরে হুশ হুশ করে তার কিঞ্চিত প্রকাশ দেখা যাচ্ছে !
দুজনে ফিস ফিস করে নারীর দৈহিক গঠন বা ফিগারের নৈপুণ্য নিয়ে
কিছু জ্ঞান-গর্ভ আলোচনা করে,
তারপর ধীরে ধীরে তারা ভোগ সমাধিতে বিলীন যায় ।
অর্থাত, তাদের শরীর বর্তমান,
আত্মা সেই নারীর সাথে ভাব-লোকে গোপন খেলায় মত্ত হয়েছে !
 
 
আনন্দ দা মানেই পুরাতনপন্থী, অন্তর্মুখী, আধুনিকতার বিপরীতে হাঁটা মানুষ
-- এ ধারণা আমাদের সবারই ছিল !
পুরানো সাহিত্য, সংস্কৃতি, সংগীতের শিকড় বেয়েই তার জীবন যাত্রা,
অন্তরের ভাবটাই তার কাছে জীবনের সার,
বাহ্যিক রূপ, অহেতুক বস্তুবাদ, আড়ম্বর মাত্র। 
সেই আনন্দ দার মধ্যেও এক আমূল পরিবর্তন দেখা যেতে লাগলো !
(এর জন্যে amul কোম্পানিকে আমরা কোনো দ্যায় ভার নিতে বলছি না !)
যেন কালাহারির দেশে বসন্তের হওয়া বইতে শুরু করেছে,
মনের কুঞ্জবনে কচি পাতা, ফুল, পাখির সমারহ ঘটেছে আকস্বাত !
আনন্দ দা  রবি ঠাকুরের "রক্ত করবী"র রাজার মত
যেন পুরাতনের অচলায়তন ভেঙ্গে আধুনিকতার মুক্ত সমীরণে নিঃশাস নিচ্ছে --
জিম, শর্ট স্লিভ টি-শার্ট,
এবং তরুণ প্রজন্মের আধুনিকতম খেলনা
(যা কিছুদিন আগেও আনন্দ দার  দু চোখের বিষ ছিল) -- ফেসবুক !
এই পরিবর্তন আমাদের কাছে লাল গিয়ে সবুজ আসার মত !
এর  কারণ কি, সে আলোচনায় যাচ্ছিনা !
সব কথা খোলসা করে বলার নয়,
অন্তরে অন্তরে উপলব্ধি করার মতোও থাকে কিছু কথা..এও তেমনি !

 
এছাড়া আনন্দ দার আরও নাম রয়েছে--
সেকের পছন্দের নাম  "ফিশি বাবা",
তার ইতিবৃত্ত আর বললাম না
 
দেবলীনার মনের ভাবের বোঝার ক্ষেত্রে,
এবং আমার কর্তব্য বিষয়ে আমায় ওয়াকিবহাল করতে,
আনন্দ দার ভূমিকা অতুলনীয় ।
 
স্বপন বাবু
-----------

কেউ বলে "খুড়ো", কেউ বলে "খোচো"..আমি বলব রুচিশীল, ইন্টেলেকচুয়াল dude..
কিন্তু খামখেয়ালী, moody, এবং  সহজেই  উত্তপ্ত হয়ে যান....
চরম অন্তর্মুখী, introvert..
জীবনে বহুবার ব্যথা পাওয়া মানুষ !
পলিটিক্সে বিশেষ আগ্রহী,
কিন্তু আমি স্যারের যে রোমান্টিক মনের পরিচয় পেয়েছি--
তাঁর গভীর প্রকৃতি প্রেম ও নিবিড় কাব্যময়তা,
জীবনানন্দ দাসের বনলতা সেনের চোখের romanticism
রন্ধ্রে রন্ধ্রে উপলব্ধি করার চেতনা--স্যার এর এই রূপ দুর্লভ,
এর সন্ধান সবাই পায়না !
আমি ভাগ্যগুণে পেয়েছিলাম সেই রূপের দর্শন !

স্যার আমার কাছে পিতৃতুল্য ..
আমার বিয়ের রেজিস্ট্রিতে আমার বাবা ও  শশুর মশায়ের পর
তৃতীয় সাক্ষীর সই উনিই করেন,
এই জন্যে স্যার এর কাছে আমি কৃতজ্ঞ !
 
অঙ্কন  দা
------------

হোমো সপিয়েনস এর  বিরল প্রজাতি -- হোমো সপিয়েনস IQ ;
যার একমাত্র স্যাম্পলই বর্তমান-- অঙ্কন দা স্বয়ং,
এক ও একমেবাদ্বিতীয়ম,
যে একাই সেই কেতন বহন করে চলেছে বীর দর্পে !
অঙ্কন দার নারী প্রীতি,
সেই নারীর IQ পরীক্ষা,
তার সাথে বুদ্ধি-দীপ্ত ভাব বিনিময়,
মাঝে মাঝে দৈহিক যোগাযোগের প্রচেষ্টা,
অবশেষে তার (বা নিজের) অপদার্থতা উপলব্ধি, এবং বিচ্ছেদ !
এরই মাঝে ঘন ঘনই সর্বাণী ম্যাম এর ত্রাসের কারণ হয়ে ওঠা ।
এ ছাড়া আরও অনেক অভূতপূর্ব অদ্ভুত এবং বিরল কীর্তির অধিকারী অঙ্কন দা,
সে সব লিখতে বসলে একটা আস্ত রচনাবলি হয়ে যাবে !
সব মিলিয়ে অঙ্কন দাও দুর্লব প্রাণী, CVPR তথা ISI এর মাথার মণি ।

সুকোমল দা
---------------

এমনিতে শান্ত সৌম্য প্রাজ্ঞ;
কিন্তু সেই রাতে,
মানে 2010 এর FIRE এ DAIICT-এর  গেস্ট হাউসএ,
যে জ্বালামুখী রূপ দেখিয়েছিল --
যেন যোগিরাজ শিবের নটরাজ মূর্তি !!
এবং তাতে আমি কি পরিমাণ বিস্মিত হয়েছিলাম
..তা কোনদিনও ভুলব না !


তন্ময় দা
-----------

নারকেলের মত কঠিন, রূর্হ, লেহন-লোলুপ যার বাইরেটা,
ভেতরে নিষ্কাম পরোপকারী শাস পরিপূর্ণ !
অনেকেরই ভিন্ন মত থাকলেও,
আমি উপকার পেয়েছি তাই বলছি..
তন্ময় দার উপকারের ঋণ কোনদিনও ভুলবনা ।

পার্থ দা
---------

পার্থ দার ভুঁড়ি চলে আগে আগে,
পেছনে ব্যস্ত চিত্তে চলে স্বয়ং পার্থ দা !
MIU এর কেচ্ছা,
আর গবেষণা নিয়ে মন্দার স্যার এর কাছে আগমন ।
পার্থ দার সাথে দীঘায় সেই তাল সারিতে,
রূপনারায়ণ নদীর সাগরের মোহনায় যাওয়ার অভিজ্ঞতা অতুলনীয় !
 
সৌপর্ণ
---------

রুচিশীল, চিন্তাশীল,
পড়াকু..মানে সাহিত্য পাঠে ব্রতী,
একই  জায়গায় স্থানু হয়ে সারাদিন মনিটরের ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র ফন্ট-এ 
একমনে কোড ও সিস্টেম চর্চা করায় ব্যস্ত যার কায়া ।
বিপুল একাগ্রতা ও
সুন্দরী স্ত্রী রত্নের অধিকারী !
কিন্তু  মাঝে মাঝেই এই শান্ত শ্বেত পদ্মের মধ্যে থেকে
বিষাক্ত নাগের ফনা দৃশ্যমান !!
তাই  সব মিলিয়ে বেশ interesting চরিত্র ।

২০১২ FIREএর পর বম্বে-টু-গোয়া সফরে
সৌপর্ণ আমাদের সাথী ছিল ।
FIREএর যাবতীয় কাজ,
গোয়ার হোটেল বুকিং এবং বীচে খেলার সরঞ্জাম --
সব দ্বায়িত্ব খুব নিপুণ ভাবে সামলেছিল ।
বিশেষ করে ফেরার পথে ট্রেনে
এক অসহায় মারাঠী যুবতীকে উদ্ধারের
এক অবিস্বরনীয় মহৎ কীর্তি ঘটিয়েছিল
এই মহামহিম সৌপর্ণ !
আমরা সবাই সেই পুণ্য লগ্নের সাক্ষী হয়েছিলাম
এবং অন্তরে এই মহাপুরুষের জন্যে গর্ব অনুভব করেছিলাম
(যা পুরোটা প্রকাশ করতে গিয়ে "ডাউন লোড" নামক
প্রবন্ধ লিখে ফেলেছিলাম ) 

 টি ক্লাব ও ক্যান্টিন
---------------------


প্রথমে IR ল্যাবে এসে দেখতাম
বিকেলে সবাই মিলে হই হই করে টি ক্লাব যাওয়ার সমারোহ !
বিভিন্য বিষয়ে নিখাদ আনন্দের খোরাক তৈরী হত সেখানে ;
যেমন মান্না দের "কফি হাউস", তেমনি আমাদের টি ক্লাব !
এখানে অনেক master blaster তাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ ইনিংস খেলে গেছেন !
বিকাশ দা, সুকোমল দা, জিয়া দা, শ্রীকান্ত দা, আনন্দ দা..আরও অনেকে ।
আমি এই মজলিশে সামিল হয়ে যে মজা পেয়েছি,
যে নির্মল আনন্দ রস উপভোগ করেছি,
তা আমার সারা জীবনের সুখস্বপ্নের বিষয়-বস্তু !
এর পর কেন্টিনের নতুন রূপ আসায়,
টি ক্লাবের ক্রেজ কমে গেছে !
আর সেই গাইয়ে রাও নেই,
বাজনদার রাও নেই !
আর যারা আছে তারা ব্যস্ত !
আর নেই তার রাশভারী রূপ,
আজ পরিত্যক্ত জলসাঘরের মত তার জীর্ণ  দশা !

তবে নতুন  ক্যান্টিন এও, অন্য রকম মজা পেতাম;
এবার কচি কাচাদের নিয়ে,
পুরনো ওস্তাদ আনন্দ দা, আর সাকরেদ আয়ন দাও ছিল;
তারা থাকলে আসর জমত ঝব্বর !

FIRE
--------

FIREকে ঘিরে আমার অনেক নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছে,
যা জীবনে চলার পথে যেমন অনেক উপলব্ধি ঘটিয়েছে,
তেমন বিনোদনও করেছে প্রচুর ।
আমার প্রথম FIRE ২০১০ এ গান্ধীনগরে ।
সেই প্রথম প্লেনে চড়া, সেই প্রথম মা-বাবাকে ছেড়ে বাইরে রাত্রিবাস !
DAIICT-এর অপূর্ব কেম্পাস আমার মনোহরণ করে !
জিয়া দা, অয়ন দা, সুকোমল দা, দীপা দি, পবিত্র দা
-- সবাই মিলে কত মজা হয়েছিল !
সুকোমল দার রাত্রি বেলায় মারকাটারি ভোকাবুলারি,
পবিত্র দার দফায় দফায় দিগ্বিজয়ী জোক্স,
আর অয়ন  দার ঐতিহাসিক "ছড়ানো" !
আর আমি এক বিশেষ কারণে কিছুক্ষণ মনমরা ছিলাম,
দীপা দি আমার শুকনো মুখ দেখে বলত
"এই হাসো"--আর আমি হেসে ফেলতাম,
এই ঘটনা আমার সারাজীবন মনে থাকবে ।
সবাই মিলে মাউন্ট আবু যাওয়ার অভিজ্ঞতাও দারুণ !
(২০১৫ এসে গেল, আবার FIRE হবে DAIICTতে,
এবারে আমি থাকলে আরও কত মজা হত !)
২০১০ এ ISI ব্যাঙ্গালোরে winter school এর দ্বায়িত্ব পাই,
এ আর এর নতুন অভিজ্ঞতা !
সবার কর্ম কুশলতায় খুব সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হয়েছিল এই স্কুল ।
ফেরার আগের দিন মাইসোর ভ্রমণও বেশ আনন্দ দায়ক !
২০১১-এ  বোম্বেতে খুব মজা হয়েছিল এমন নয়,
তবে ২০১২ এ কলকাতায় বেশ আনন্দ হয় আবার !
তবে সব চেয়ে স্মরণীয় FIRE হলো ২০১৩এ দিল্লীতে !
অনির্বাণ মধু-চক্রে পরে, সেই নিয়ে প্রচুর খিল্লি,
আমাদের ঘরে মাঝ রাতে আড্ডা
(শংকর দা আর সৌরিশ দার উপস্থিতি বিশেষ উপভোগ্য),
রাষ্ট্রিপতি ভবন ভ্রমণ--সব মিলিয়ে দিল্লী জমজমাট !
গতবারে তিন বিষধর -- জিয়া দা, দেবাশীষ দা ও আনন্দ দার ত্রিবেনী-সঙ্গমে FIRE আবার ধুন্ধুমার !
সঙ্গে সেক, অয়ন দা, অনির্বাণ (ও DAIICT এর রমণীগণ ) ।
চক্রান্ত করে অনির্বাণকে মধুর হাতে তুলে দেওয়া,
আবার মধ্যরাতে সুকোমল দা, জিয়া দা, অয়ন দা, দইয়ের উপস্থিতিতে
জমাটি আড্ডা !
(২০১০ এর পর আমি সুকোমল দাকে সব জায়গায় cite করেছিলাম!!
তাই এবার সুকোমল দা আর সাহস করে খাপ খোলেনি !! )
সেক এর শেষ রাতে বিসর্জনের নাচ
(মাঝে মন্দার স্যারের গাছ হওয়া)
যাকে বলে সিচুএসন পুরো জমে ক্ষীর !
সব মিলিয়ে FIRE আবার সুপার-হিট !
 
-----
আমাদের সবার ব্যস্ত, আশঙ্কা, দুশ্চিন্তায় ভরা অনিশ্চিত জীবন । এ সবের মধ্যে যদি একটু আনন্দ একটু মজা করে কাটানো যায় তাহলে ক্ষতি কি ! এই দীর্ঘ জীবন পথে মাঝে মাঝেই যখন ক্লান্ত হয়ে যাই, এই সব সুন্দর আনন্দঘন মুহূর্ত আমার চলার শক্তি যোগায় । এই আনন্দ স্মৃতি সাত রাজার ধনের চেয়েও দামী যা আমাদের এক মুঠো সুখ কিনে দিতে পারে । আমি উল্লিখিত সকল ব্যক্তি বিশেষের কাছে কৃতজ্ঞ এই সব অমূল্য মুহূর্ত উপহার দেওয়ার জন্যে ।

--
কৃপা