Wednesday 9 December 2015

নিরক্ষর

নিরক্ষর কে ? যার কাছে লেখা শব্দ দুর্বোধ্য আঁকিবুঁকি মাত্র, সে ? লেখা শব্দের মনে, নিঃশাসে-প্রশাসে, রক্তে যে গভীর প্রাণের ডাক, তা যার কানে পৌঁছায় না, সে ? যে বাহ্যিক জগতের দৃশ্য স্পর্শ গন্ধের ত্রি-সীমানা পেরিয়ে অক্ষরের ডানা মেলে অজানা জ্ঞানের অন্তরীক্ষে পৌছাতে জানে না, সে ? যে উইক এন্ডে কফি হাউসে শক্তি-জয়-শ্রীজাত কপচাতে জানে না, সে ?  তার কাছে জগত কেমন ? নারকেলের বাইরেটা যেমন, তেমন ? নিরস, গদ্যময় ? নাকি অন্ধকার বস্তির এঁদ গলির মত স্যাঁতস্যাঁতে, এক-রঙা ?  চাঁদ তার কাছে কেমন ? দূরের প্রিয়ার মত কাব্যিক নিশ্চই নয় ! তাহলে কি ঝলসানো রুটি ? নাকি ডমিনোস পিত্জা ? আর এই  আমরা, যারা ভাগ্যগুণে এই  অক্ষরের জগতে বিল গেটস, তারা এই  অভাগাদের কি বলি ? নিরক্ষর ? তাদের ঘেন্না করি ? নাকি করুণা ? নাকি ব্যঙ্গ করে বলি "আহা..বেচারা..বুঝলিই না কি রসে তোরা বঞ্চিত" !

কলকাতা থেকে ব্রাসেলস আসছি। মাঝে বোম্বেতে ফ্লাইট বদল করতে হলো । সেখানে ইমিগ্রেশনের ফর্ম ফিল-আপ করছি, এমন সময় এক ব্যক্তির অনুরোধ --"আমারটা একটু লিখে দেবেন দাদা ? আমি ইংরিজি পড়তে পারিনা" । কম বয়সী ছেলে, রুক্ষ চেহারা । আমারটা তখন প্রায় হয়ে গেছে । আমি সানন্দে তারটাও ফিল-আপ করে দিলাম । কিন্তু সেটা নিয়ে সে দুম করে চলে গেল ! একটা "ধন্যবাদ"ও না  দিয়ে ! তখন বড্ড রাগ হলো ! মুখে কিছু বললাম না, কিন্তু মনের বাঁকা কোণে একটা শব্দ যেন গর্জে উঠলো -- "নিরক্ষর" ! ইশ ! কি  ঘৃণ্য মানসিকতা আমার ! একি ভাবছি মনে মনে ? ক্ষনিকের দুর্মতির জন্যে মনে মনে নিজেকেই ধিক্কার দিলাম ! কিন্তু তখন মনের ভাবখানা এমনই  হয়েছিল, ভন্ডের মত মিথ্যে বলে ভালো মানুষ সাজতে চাই না ।

ব্রাসেলস পৌছালাম । এবার ট্রেনে করে লিউভেন ফিরব । ট্রেন স্টেশনে অটোমেটিক মেশিনে টিকেট কাটতে গিয়ে দেখি সবই ডাচ এ লেখা ! সবাই এসে দিব্বি টিকেট কেটে যাচ্ছে, আর আমি বোকার মত চেয়ে চেয়ে দেখছি ! নিরুপায় হয়ে এক সহৃদয় বেলজিয়ানের কাছে সাহায্য চাইতে হলো ! এরপর প্রায় সব জায়গায় এই একই দুর্দশা ! শপিং সেন্টারে কোন জ্যাম কোন তেল কিনব বোতল বা প্যাকেট দেখে বুঝতে পারছি না, রাস্তা ঘাটে কোনটা সতর্কিকরণ কোনটা উপদেশ -- সবই বুঝতে সাহায্য নিতে হচ্ছে ! নিজেকে পক্ষাঘাতগ্রস্থ রুগীর মত অসহায় মনে হচ্ছিল যাকে সব কাজের জন্যে অন্যের সাহায্য নিতে হয় !  একদিন বাস ধরার জন্যে দাঁড়িয়ে আছি । ১০ মিনিট, ১৫ মিনিট, ২০ মিনিট গেল বাসের দেখা নেই ! তখন এক জনৈক ভদ্রমহিলা বললেন (ইংরিজিতে), "বাস এই রুট দিয়ে আসবে না, রাস্তার কাজ চলছে কিনা ! এই যে লেখা আছে ওপরে" । "ওপরে" নাকি সত্যি লেখা ছিল, কিন্তু সেটা ডাচ ভাষায় !  একদিন বইয়ের দোকান দেখে বিপুল উত্সাহ নিয়ে ঢুকে পরলাম । সেখানেও বঞ্চনা ! সব বইই ডাচে ! মনে হলো সব জ্ঞানের রাস্তা যেন কেউ জোর করে বন্ধ করে দিয়েছে ! যেখানে থাকি সেটা একটা ছাত্রাবাস । সেখানে কয়েকবার কিছু অনুষ্ঠানে গেছি । সেখানেও সবার মুখে ডাচ ! আমায় সামনে দেখে ভদ্রতার খাতিরে কেউ গোটা কেউ ভাঙ্গা ইংরিজিতে কথা বলে কিছুক্ষণ । কিন্তু আবার নিজেদের খোশ গল্পে তারা মাতৃ ভাষায় ফিরে যায় । তাই এত মানুষের মধ্যেও আমি বার বার একা হয়ে গেছি ! আমাদের কমন কিচেনে প্রায় সন্ধ্যায় দেখি তারা প্রাণ খুলে নানা বিষয়ে  আলোচনা করে, হাসি ঠাট্টা করে, গম্ভীর বিশ্লেষণ করে । তার ওপরের তরঙ্গটুকু অনুভব করি মাত্র । ডুব দিতে গিয়ে দেখি আমার সাঁতার জানা নেই !

একদিন আয়নায় চুল আচরাতে গিয়ে নিজের সাথে দেখা হলো । নিজের চোখে চোখ রাখলাম । নিজের বুকে কান পেতে  শুনলাম মনের সেই বাঁকা কোণে, কে যেন বলছে  "নিরক্ষর" ! নিজের মুখের দিকে তাকালাম ! সত্যি ! তখন মনে পড়ল এয়ারপোর্টে  ইংরিজি না জানা ছেলেটার কথা । হয়ত সেই  ছেলেটার এই জ্বালা সইতে সইতে সহবত শেখার সময়ই হয়নি । তাই সে আমাদের মত সাক্ষরদের অতি প্রিয় "ধন্যবাদ" দিয়ে যায় নি ! কারণ ওগুলো তো সাক্ষরদের পেটেন্টেড জিনিস, জাতে না উঠলে সে অধিকার কি পাওয়া যায় ? আরও একটা জিনিস বুঝলাম । একজন মানুষ সাক্ষর না নিরক্ষর সেটা ঠিক করে তার  অবস্থান । নিজ দেশে যে সাক্ষর, স্থানের ফেরে সে নিরক্ষর ! এই মহাজ্ঞানের সাগরে এক গন্ডুষ পেয়ে যারা ভাবেন আমি সবার সেরা, তাদের সিজন চেঞ্জের প্রয়োজন ! আরও একটা কথা সত্যি -- যতই বড় হই না কেন, অসীমের  কাছে আমি সেই ছোটই থাকবো ! ওই যে সুদূর কালপুরুষ, ওই আকাশ গঙ্গা, এই বিশাল ব্রম্ভান্ড -- তার কাছে আমি এক ছোট্ট বিন্দু মাত্র ! এত ছোটো যে সেন্টিমিটার, মিলিমিটার, নানোমিটার -- কিছুতেই আমায় ধরা যাবে না ! সবার মনে এই ভাব যেদিন আসবে, সেইদিন হয়তো এই সর্বব্যাপী নিরক্ষরতা ঘুচবে, নচেত  নয় ।

শুভ জন্মদিন প্রসেনজিত দা

আজ আবার সেই দিন
কত বসন্ত আগে,
যেদিন প্রথম দেখেছিলাম
পৃথিবীর আলো ।

কি হয়েছিল ঠিক তখন ?
যখন মায়ের শরীর থেকে
নিজের শরীর হয়েছিলাম আমি ?
রোদ উঠেছিল ?
নাকি আকাশ মেঘলা ছিল ?
ফুল ফুটেছিল ?
পাতা ঝরেছিল ?
আরও কতজন এসেছিল আমার সাথে ?
কতজন নিয়েছিল বিদায় ?
কাদের সেনসেক্স চড়েছিল সেদিন ?
কেমন গরম ছিল সেদিন আলিমুদ্দিন ?

কি করেছিলাম আমি ?
খুব কেঁদেছিলাম ?
নাকি অবাক হয়ে দেখেছিলাম এই বাইরের জগত ?
কি ভেবেছিলাম তখন ?
নাকি ভাবতেই শিখিনি তখনও ?
সবাই  মিলে কি হই হই করেছিল ?
উলূ, শাঁখ বেজেছিল ?
আর আমার মা ?
কত কষ্ট হয়েছিল তার,
এত দিন আমায় জঠরে রাখতে ?
নাকি আমায় বুকে পেয়ে
সব কষ্ট ভুলে গেছিল সেদিন ?

এর পর কি করে বড় হলাম ?
আসতে আসতে ?
নাকি একদিন দুম করে মনে হলো
"এই তো ! কত বড়  হয়ে গেছি !"
কবে হয়েছিল এমন ?
সেইদিন ?
যেদিন বন্ধুদের সাথে
প্রথম দিয়েছিলাম সিগারেটে  টান ?
নাকি সেইদিন,
যেদিন ঠোঁটের ওপর
প্রথম গোঁফের শৈশব অনুভব করলাম ?
নাকি সেইদিন..যেদিন বুঝলাম
ওই মেয়েটা,
যে যৌবনের অবকাশে
দেখত আমায়,
আলতো হাসত আমায় দেখে,
সে আমায় ভালবাসে না ?
নাকি সেইদিন,
যেদিন বুঝলাম,
রোজগার না করলে
সংসার চলবে না ?

এই ভাবে কেটেছে কত বছর?
কত বসন্ত, কত গ্রীষ্ম, কত শীত?
কত পাতা ঝরেছে,
কত কচি পাতা আবার এসেছে নতুন করে?
কত কুঁড়ি ঝরেছে অকালে?
কত ফুল সুগন্ধে ভরিয়েছে আমার জীবন?

আজও হিসেব করব?
এত ছুটেছি..আরও কত ছুটতে হবে..
আজও  ছুটব?
নাকি..আজ একটু বিশ্রাম?
কারণ, আজি সেইদিন
যেদিন প্রথম দেখেছিলাম
পৃথিবীর আলো ।

Sunday 1 November 2015

আমার প্রথম হাইকু

হাইকু (https://en.wikipedia.org/wiki/Haiku) একটি প্রাচীন জাপানী কবিতা শৈলী । এতে ৩টে লাইন থাকবে এবং এই লাইনে যথাক্রমে সিলেবেল থাকবে ৫, ৭ ও ৫টা । লিউভেনের এক এক বাঙালি শিক্ষকের কাছে এইটে শিখি । এবং তারই অনুপ্রেরণায় আমার লেখা প্রথম হাইকু :

ও প্রিয়তমা
খুজি কত পাই না গো
তোমার উপমা
বুঝিয়ে দি :

ও প্রি য় ত মা  (5)
খু জি ক ত পাই না গো (7)
তো মার উ প মা  (5)

Saturday 31 October 2015

গোপন

আমার চ্যাট বক্স দিয়ে সে
উঁকি দিতো আমার বেড রুমে;
উঁকি দিতো আমার অগোছালো আলমারিতে,
আমার অপরিষ্কার টেবিলে,
ছুঁতে চাইতো আমার গোপন ক্ষতটাকে;
যে গুলো কেউ দেখতে পেতো না--
চিলেকোঠা, খেলনার তির-ধনুক,
প্রথম দাড়ি ওঠা, লুকানো অ্যাডাল্ট  পত্রিকা -- সব দেখে ফেলতো সে, সঅঅব!
শেষে, আমার অসহায় প্রশ্রয়ে
নারীর অলঙ্কার ফেলে রেখে
এলিয়ে পড়তো আমার গায়ে ;
রাতের যবনিকায় ঢাকা পড়তো
ছবির censored দৃশ্য ।

সকালে ঘুম ভেঙ্গে দেখতাম
সে offline,
তবু তার গন্ধ লেগে আছে আমার গায়ে ।

আশিকী

 গতকাল CIKM এ আমার পোস্টার প্রেসেন্টেশন ছিল | আমার থেকে এক পোস্টার দূরে যে ছেলেটি দাঁড়িয়ে ছিল তার নাম আশিকুর  খুদাবক্স | খুদা গবাহ ছবিতে ড্যানি ডেনজংপার চরিত্রের নাম ছিল খুদাবক্স | সে ছিল দোর্দণ্ড প্রতাপ আফগান পাঠান ! আমার  প্রতিবেশীকে  দেখে অবস্য  আফগান মনে হয়না | ছিমছাম, শান্ত, ছিপছিপে চেহারা, বুদ্ধি-দীপ্ত চোখ | কি একটা জটিল ক্লাসিফিকেশন নিয়ে কাজ করেছে | আমাদের প্রায়ই চোখাচোখি হচ্ছিল | আমি এমন অবস্থায় নিজেই আগে কথা বলি | তবে এক্ষেত্রে নামের নিচে এফিলিয়েশন  - CMU, কম্পিউটার সায়ান্স ডিপার্টমেন্ট দেখে আর সাহস করে এগোচ্ছিলাম না ! পোস্টার হাটে লোক জমছিল | কৌতূহলী কয়েকজন শ্রোতাকে আমার কাজ বোঝালাম | মাঝে অস্ট্রলিয়ান আঞ্চলিক অনুষ্টান হলো | আদিবাসীদের অদ্ভুত গানে  ও  দিদগেরিদুর বিকট আওয়াজে কনফারেন্সের শান্ত পরিবেশ শব্দময় হয়ে গেছিল প্রায় ১৫ মিনিট !  পোস্টার পর্ব ঘন্টা দুএক চললো | হাট ভাঙ্গার সময় হয়ে এলো | আমি পাত্তারি, মানে, পোস্টার গোটাব কিনা ভাবছি এমন সময় মাতৃ-ভাষা শুনতে পেলাম "কলকাতা থেকে তো ?" অবাক বিস্ময়ে দেখি আমার ঠিক পাশেই আশিকুর দন্ডায়মান ! আফগান পরিষ্কার বাংলা বলছে? আমি উত্তর দিলাম "হ্যান কলকাতায় বাড়ি ..এখন আসছি বেলজিয়াম থেকে" খুদাবক্স বললো "আমার বাড়ি কাল্যানিতে..CMU থেকে পিএইচডি করছি" | কমলেস্বরের চাঁদের পাহাড় ছবিতে খোদ পর্তুগিজ দিয়েগো আলভারেজ বাংলা বলেছিল | যদি পর্তুগিজ পারে তাহলে আফগান  পারবে না কেন ? যদি তার জন্ম কাল্যানিতে হয় তাহলে হতেই পারে ! এইভাবে আমাদের কথাবার্তা  শুরু  হলো আর দেখতে দেখতে  দিব্বি বন্ধুত্ব জমে উঠলো | পরে জানলাম  খুদাবক্স হলেও আশিকুর আসলে বাঙালি | তার ওপর মা বিয়ের আগে ঘোষ ছিলেন ! বাবা কোনো ভাবে আফগান ছিলেন কিনা সেটা অবস্য জানা হয়নি | আর রবি ঠাকুরের গোরা যদি আইরিশ মাতার সন্তান হয়েও বাঙালি  হতে পারে, তাহলে আফগান সন্তান পারবে না কেন?

এর পর আমরা একসাথে ডিনার করলাম এক মেক্সিকান রেস্তোরায় | জানলাম আশিকুরের ব্যাচেলর্স কল্যানী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে | তারপর GRE দিয়ে ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিটিশ কলম্বিয়াই মাস্টার্স | আরও জানলাম ইনি নিজে কবিতা গান উপন্যাস লেখেন | গানে সুর করেন আর নিজেই গান ! আর সেই গান নাকি আমায় শোনাবেন ! আমার হোটেলে wifi কিনতে হয় | আমার কিছু দরকারী মেল চেক করার ছিল | সেটা ওকে বলায় ও বললো "আমার হোটেলে আমার নেট ব্যবহার করবে চল" | শেষে ওর প্রস্তাবে রাজি হতে হলো | আমার হোটেলের কাছেই ওর হোটেল | ওর ঘরে নিয়ে গিয়ে আমায় নেট করতে দিলো | আর বললো "আমি  একটু সাঁতার কেটে আসি, তুমি ততক্ষণ কাজ করে নাও..আমি এসে গান শোনাব" | বাবু সাঁতারও কাটেন ! আমি রাজি  হলাম | নেট জলের মত, যা ছাড়া জীবন চলে না !  এই মরুভূমির দেশে যে আদর করে নেটের তৃষ্ণা মেটাচ্ছে তার অনুরোধ ফেলি কি  করে ! কাজেই আশিকুর গেলো জলে, আমি স্থলে নেট সমুদ্রে সাঁতার কাটলাম | ঘন্টা আধেক পর সাঁতারু ফিরে এলেন | সাধারণত নাকি ইনি ৪৫ মিনিটের মত সাঁতার কাটেন | কিন্তু আজ বোধ হয় শ্রোতাকে গান শোনাবার উত্তেজনায় তাড়াতাড়ি চলে এসেছে ! এবার গানের পালা | আমি প্রস্তুত হলাম | আশিকুর গিটার টিউন করতে করতে গান ধরল | পর পর দুটো গান | একটা বাংলা, একটা হিন্দি | শুনে চমকে গেলাম ! বেশ ভালো ! বিশেষ করে হিন্দিটা | লেখা সুর গায়কী তিনটেই চমত্কার ! জানলাম শিল্পী  ছোট  থেকেই গান শিখেছেন -- রবীন্দ্র, নজরুল, ক্লাসিকাল | গিটারও শিখেছেন ! একটা বাংলা সিনেমায় নাকি সুর দেওয়ার কথা অনেক দূর এগিয়েছিল | শেষে নাকি তার জায়গায় স্বনামধন্য প্রিতমকে নেওয়া হয় | তাতে শিল্পীর খুব দুঃখ ! এর পর কবিতার পালা | সেটাও বেশ চমকপ্রদ ! বেশ হালের স্টাইলএ  লেখা | ভাবের গভীরতা রয়েছে, পরিপক্কতা রয়েছে | কবির কবিতা নিয়ে বিস্তর  পড়াশোনা ! নিয়মিত কিছু পত্রিকায় তাঁর লেখা বেরোয় | আমি এই কবিতা থেকে বুঝলাম আমি কবিতার জগতে অনেক যুগ  পেছনে পরে আছি ! আমার কবিতা পরে আশিকুর বললো সেই একই কথা ! বললো কনটেম্পরারী কবিতা পড়তে হবে | আর  বিভিন্য যুগের কবিতা পড়তে হবে | তাহলে কবিতার বিবর্তনটা বোঝা যাবে | সঙ্গে আমার লেখাতেও সেই বিবর্তন আসবে | বেশ  কিছু কবির নাম জানলাম -- এদেশের ও বিদেশের, যাদের লেখা পড়লে এই আধুনিকতার দিকে যাত্রা করা যাবে | এছাড়া  আশিকুর উপন্যাসও লেখে | এর খোরাক যোগার করতে নাকি রেড লাইট চত্তরের দালাল দের সাথে বন্ধুত্ব করেছে, ভিখারীদের জীবন সম্বন্ধে জানতে তাদের পাশে বসে তাদের লক্ষ্য করেছে | এছাড়া নাকি একা একাই বাইকে চড়ে কলকাতা থেকে বারানসী গেছে ! মাস্টার্সের পর বিদেশে Microsoftএ চাকরি করতো | তারপর CMUতে  পাওয়ার পর চাকরি ছেড়ে দিয়ে বছর দের পর CMU যায় | এই  দেড় বছর নাকি দেশ দেশান্তর ঘুরে বেরিয়েছে !

শুনেছি মাঝে মাঝে নির্বোধ মূর্খ ক্ষুদ্রবুদ্ধি মানুষের উদ্ধারে ঈস্বর দূত পাঠান | আমার মনের অজানা কোণে গোপন সিন্ধুকে বোধ হয়  কিঞ্চিত অহংকার জন্মেছিল নিজের যোগ্যতা ও ক্ষমতা নিয়ে | আজ তা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেলো ! মহাবিশ্বের বুকে আমার  অকিঞ্চিত্কর অবস্থান ও তুচ্ছতা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার জন্যই যেন বিধাতার এই খেলা ! তবে অন্যভাবে দেখলে এটা  আত্মসুদ্ধি ও চেতনার মার্গও বটে ! এই ঘটনায় অবশ্য আমার একটুও আহত মনে হচ্ছে না | বরং অসীম প্রশান্তি খুঁজে পাচ্ছি নিজের মধ্যে | আশা করি বড় হওয়ার পথে এই শিক্ষা আমার পাথেও হয়ে থাকবে | এই জন্যে আমার ভাগ্যের কাছে আমি কৃতজ্ঞ |

Saturday 10 October 2015

মিস লিস্ট

IR ল্যাব আর CVPR-এর  কিছু স্থান, ব্যক্তি ও ঘটনা আমার, এবং আমার মনে হয় অনেকেরই স্মৃতিপটে অমলীন রয়ে গেছে । তারই কিছু তুলে ধরলাম :

জানলার ধার আর IR ল্যাব
-----------------------------
IR ল্যাব, চেয়ার, জানলার ধার
জানলার বাইরের দৃশ্য..
গাছের মাথা, অদূর ডানলপ
আর ফ্লাইওভার;
যার গা বেয়ে
ঝরনার গায়ে
একটি একটি জলের কণার মত
নামে গাড়ি ।
আরও সুন্দর হয় সে রূপ সন্ধ্যে নামলে ;
যখন শহর আলোর গয়নায় সেজে ওঠে ।
আর কোন মায়াবিনীর এলানো খোলা চুল বেয়ে
যেন আলো কণা নেমে আসে !


সঙ্গে ল্যাব এর দৈনন্দিন কর্মব্যস্ততা
কখনো খরস্রোতা নদীর কুলুকুলু শব্দ
কখনো মৃদু মন্থর দুলকি চাল ;
আর শনিবারে শান্ত নিস্তব্দতা ..


কারো জন্মদিনে কেক কাটা
এবং তারপর সবাই মিলে হই হই করে
food village বা ambrosiaএ খেতে যাওয়া
সব মিলিয়ে খুব হইচই আর আনন্দ ।


মন্দার স্যার
---------------
মন্দার স্যার, নিবিষ্ট চিত্তে
অসীম to-do লিস্টের পেছনে ধাবমান !
তারই ফাঁকে নতুন সিনেমা,
বা বিশেষ ভালো লাগা সিনেমা (বা নায়িকার) উল্লেখ পেলেই
নিজের আন্তরিক মুগ্ধতা প্রকাশ ;
ক্ষনিকের দীর্ঘশ্বাস,
তারপর আবার to-do লিস্টের পেছনে দৌড় !
নিজেরই তৈরী কর্ম-ঘুর্নিতে নিরন্তর ঘুরপাক খাওয়া !
তাঁর সন্তোষী মায়ের প্রতি একনিষ্ট ভক্তি
ও খাতা দেখায় অশেষ খুঁত খুঁতামি -- দুইই কাল-গ্রাসী !
স্যার অনুপস্থিত থেকেও উপস্থিত,
তাঁর অগনিত ভক্ত ও পাওনাদারদের মাধ্যমে !
তবে এমন মানুষের সান্নিধ্য পরম অমৃত লাভের সমান !
বিচক্ষণ, স্থির-বুদ্ধি, সহিষ্ণু ;
সুক্ষ, উচ্চস্তরীয় রুচির অধিকারী -- কি সাহিত্য, কি সঙ্গীত, কি সিনেমা !
উত্কৃষ্ট শিক্ষা, মার্জিত স্বভাব ও সংস্কৃতির বিদগ্ধ মূর্তি !
তার উদারতা ও down-to-earth স্বভাব, তাঁর দেবতুল্য চিত্র আঁকে সবারই মনে..
এ সঙ্গত ভাগ্যবানের ভাগ্যেই জোটে,
এবং সর্বপরি,
আমার ব্যক্তিগত জীবনে তাঁর উপকারের ঋণ
আমার জন্ম জন্মান্তরের পাথেও হয়ে থাকবে !
এবং তাঁর সংস্পর্শে এসে বোধ হয়
আরও সম্পূর্ণ ও শিক্ষিত মানুষ হওয়ার পাঠ পেয়েছি ।

দীপা দি
---------

বড় দিদির মত
বিপদে ভরসা দেওয়া
গবেষণা ও সংসার নিয়ে
কত গভীর কথা
(এসব যদিও হত ল্যাব ফাঁকা থাকলে, শনিবারে)
কর্মব্যস্ত দিনে সেই স্নেহমাখা হাসি
আর কাজের ব্যস্ততা, মন্দার স্যারের কাছে দুঃখ প্রকাশ ।
এই সবের মাঝে,
মরুদ্যানের মত দিয়ার দিব্য হাসি
আর মধুর চলা-কলা ।

প্রসেনজিত দা, উত্পল স্যার ও শংকর দা
-----------------------------------------------


এরই মাঝে ধুমকেতুর মত প্রসেনজিত্দার আবির্ভাব ঘটে !
হাজার জটিলতার কালো মেঘ মাথায় পরে
মন্দার স্যার এর  সাথে "serious" আলোচনা !
সান্ধ্য অধিবেশনে উত্পল স্যার এর প্রবেশ
এবং যোগদান এই "serious" আলোচনায় ;
ফোড়ন পরায় আলোচনা আরও "serious" হয়ে ওঠে !
তিনে মিলে বাবু-চরিত্রের বিশ্লেষণ
তাঁর চরিত্রের বিশেষ দিক গুলো আবার ঝালিয়ে নেওয়া ..
তাঁর নতুন দুঃখ, কার কাছে কোন দুর্বল মুহুর্তে ঝাঁপি খুলেছিলেন, তার আখ্যান..
সুযোগ বুঝে শংকর দার প্রবেশ,
ওনারও বাবু বিষয়ক নতুন টিপ্পনি
সব মিলিয়ে তুমুল রং-তামাশা !
 
রাত গড়ালে মন্দার স্যারের kernel mode দেখা যায়,
যা বিশেষ বিশেষ মহেন্দ্র ক্ষণে, প্রসেনজিত-উত্পল অনুঘটকের উপস্থিতিতে,
স্যারের বিশেষ ভাবের উদয় হলে দেখা যায় !
কথায় বলে, দশচক্রে ভগবান ভূত !
তেমনি স্যারের এই অদ্ভুত রূপ, যা অনির্বচনীয় !
যা আমাদের মত ক্ষুদ্র বাকরুদ্ধ দর্শকদের হাসি কান্নার মধ্যবর্তী স্ত্ররে নিয়ে যায় !
আমরা কজন ভাগ্যবানই দর্শন পেয়েছি সেই রূপের, এই IR ল্যাবে (কখনো FIRE এর শেষ রাতে)
যেমন কুরুক্ষেত্রে দু পক্ষের মাঝে অর্জুন বিশ্বরূপ দর্শন পেয়েছিলেন, এও তেমনি !
 
সেক, দই, অয়ন দা  ও  অনির্বাণ 
------------------------------------
 
 

স্থীর নদীতে দুরন্ত ঘূর্ণির মত
সেকের প্রবেশ !!
নিজের ল্যাব তার গম্ভীর গবেষনার জায়গা,
আর আমাদের ল্যাব তার বাওয়াল আর খিল্লির মুক্ত অঙ্গন !
খাপ খোলা তরবারির মত চলতে থাকে তার জিহবা
তার ঔজ্জল্যে ও তীক্ষ্নতায় ল্যাবের সবাই (মন্দার স্যার ব্যতিত) পরাভূত !
প্রথমে এক কোণে প্রবল tension নিয়ে
ভ্রুকুটির প্যাঁচ কপালে এঁকে
গবেষণারত ও দেবাশিষ  দার  সাথে আলোচনারত
"দই সোনার" ধ্যান ভঙ্গ ..
এর পর ল্যাদ-সমুদ্রে চির নিদ্রিত
অয়ন দার প্রতি শুভাকাঙ্খা প্রকাশ ।
এর পর দু'এ  মিলে
গভীর থেকে গভীরতর অর্থ যুক্ত
স্থুল এবং সুক্ষ
বিষয়ে উত্তাল বাক্যালাপ !
এরই মাঝে অনির্বাণের প্রবেশ ;
তার কেষ্টামো ও নারী সঙ্গতের
ব্যভিচারী আলোচনা !
অনির্বাণের ঘোর অস্বীকার..
সব মেয়েকে "just friends"
এবং নিজেকে "good boy" এর দাবি ..
দইয়ের উত্তেজিত কাউন্টার -যুক্তি,
দীপাদির জ্ঞান-গর্ভ বিশ্লেষণ
ও মোক্ষম প্রশ্নবান !
এরই ফাঁকে অনির্বাণের
আমার সাথে রিসার্চ ও ভবিষ্যত বিষয়ে চিন্তা
এবং কোন মেয়ে কি কি কাজ করে
কোথায় কোথায় সুযোগ পেয়েছে তার আখ্যান !
 
জিয়া দা
--------

জিয়া দার আমাদের দেশ ও (অ)সভ্যতার
সকল "অশিক্ষিত", "worthless"  মানুষের মুন্ডপাত !
কেন তারা জাতির কলঙ্ক,
কেন তাদের কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা মাইনে দেওয়া হয়
কেন তারা ছাত্রদের "কাঠি করে"
তা সত্তেও তাদের কেন শাস্তি হয়না ..ইত্যাদি !!
এরপর আসে দাদাগিরির পালা :
যুক্তির ঘাড়ে যুক্তি চাপিয়ে
হ্যা কে না , না কে হ্যা  করা !
এবং তাই দিয়ে অবলা কনিষ্ঠদের বিপুল লেহন !
তবে কঠিন সময়ে ছোটদের পাশে থাকা,
ও তাদের ভুল ত্রুটি (নির্মম ভাষায়) দেখিয়ে দেওয়া,
এসবেও জিয়া দার অবদান অনস্বীকার্য।
এবং আমার ব্যক্তিগত জীবনে
জিয়াদার উপকারও আমি কোনদিনও ভুলব না ।
 
 
আনন্দ দা -- ভাট সম্রাট
------------------------------

 
ভাট অনেকেই বকে..
কিন্তু ভাট বকাকে যে শিল্পের স্তরে নিয়ে যাওয়া যায়
আমরা তা শিবরাম, সুকুমার রায় এর কাছে জেনেছি ।
আনন্দ দা কাজের সময় প্রচন্ড serious..
অনাবৃতা এঞ্জেলিনা জোলির সাথে পথে দেখা হলেও
পাশ কাটিয়ে চলে যাবে !
কিন্তু  কাজের বাইরে তার এই ভাট-ময় রূপ দেখা যেত !
আনন্দ দার সাহিত্য চর্চা, এই nonsense ভাটকে
এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে চলে যেত !
অয়ন দাও এখানে আনন্দ দার সতীর্থ বটে..
(আনন্দ দা কানাডা চলে যাওয়ার পর এই ভাটের দ্বায়িত্ব কিছুটা হলেও অয়ন দা সামলেছিল)
পথে ঘাটে, ল্যাবে, টি ক্লাবে, কেন্টিনে -- সম্রাটের ভাট গীতি শোনা যেত
যাকে ভাটিয়ালিও বলা যায়...
(এখানে, আনন্দ দা কে ভাট-নগরে সমানিত করা যায় কিনা
সে আলোচনায় পরে আসছি;
বা ভাট উপাধিও নামের শেষে জুড়ে দেব যায়
যেমন, অনান্দারুপ রায় ভাট !
অবশ্য এতে মহেশ ভাট বিশেষ আতঙ্কিত হতে পারেন !
আলিয়া ভাট নিয়ে ঝামেলার পর আর এক নতুন ভাট এর নাম শুনলে
মূর্ছা যেতে পারেন !) 
 অয়ন দাও মাঝে মাঝে অন্তরার জায়গাটা ধরত,
এবং দুই ভাটিয়াল মিলে তুমুল ভাটবাজি হত !
কিন্তু, হঠাত যদি দেখা যেতো,
এই দুই ভাটিয়ালের ভাট প্লাবন আচমকা pause হয়ে গেছে,
ও এদের চোখ গোলাকার ও স্থির হয়ে গেছে,
এবং দুজন নির্লিপ্ত ভাবে উত্তপ্ত ফিসফিস আদানপ্রদান করছে,
তাহলে বুঝতে হবে অতি নিকটে এক অত্যন্ত রমনীয় লোভনীয় উপাদেয়
ললনার আগমন ঘটেছে !
যা দেখে দুজনের প্রথম রিপু ব্রম্ভতালু ভেদ করার উপক্রম করছে !!
এ অবস্থা প্রেসার কুকারের মত--
ভেতরে আবেগ টগবগ করছে,
বাইরে হুশ হুশ করে তার কিঞ্চিত প্রকাশ দেখা যাচ্ছে !
দুজনে ফিস ফিস করে নারীর দৈহিক গঠন বা ফিগারের নৈপুণ্য নিয়ে
কিছু জ্ঞান-গর্ভ আলোচনা করে,
তারপর ধীরে ধীরে তারা ভোগ সমাধিতে বিলীন যায় ।
অর্থাত, তাদের শরীর বর্তমান,
আত্মা সেই নারীর সাথে ভাব-লোকে গোপন খেলায় মত্ত হয়েছে !
 
 
আনন্দ দা মানেই পুরাতনপন্থী, অন্তর্মুখী, আধুনিকতার বিপরীতে হাঁটা মানুষ
-- এ ধারণা আমাদের সবারই ছিল !
পুরানো সাহিত্য, সংস্কৃতি, সংগীতের শিকড় বেয়েই তার জীবন যাত্রা,
অন্তরের ভাবটাই তার কাছে জীবনের সার,
বাহ্যিক রূপ, অহেতুক বস্তুবাদ, আড়ম্বর মাত্র। 
সেই আনন্দ দার মধ্যেও এক আমূল পরিবর্তন দেখা যেতে লাগলো !
(এর জন্যে amul কোম্পানিকে আমরা কোনো দ্যায় ভার নিতে বলছি না !)
যেন কালাহারির দেশে বসন্তের হওয়া বইতে শুরু করেছে,
মনের কুঞ্জবনে কচি পাতা, ফুল, পাখির সমারহ ঘটেছে আকস্বাত !
আনন্দ দা  রবি ঠাকুরের "রক্ত করবী"র রাজার মত
যেন পুরাতনের অচলায়তন ভেঙ্গে আধুনিকতার মুক্ত সমীরণে নিঃশাস নিচ্ছে --
জিম, শর্ট স্লিভ টি-শার্ট,
এবং তরুণ প্রজন্মের আধুনিকতম খেলনা
(যা কিছুদিন আগেও আনন্দ দার  দু চোখের বিষ ছিল) -- ফেসবুক !
এই পরিবর্তন আমাদের কাছে লাল গিয়ে সবুজ আসার মত !
এর  কারণ কি, সে আলোচনায় যাচ্ছিনা !
সব কথা খোলসা করে বলার নয়,
অন্তরে অন্তরে উপলব্ধি করার মতোও থাকে কিছু কথা..এও তেমনি !

 
এছাড়া আনন্দ দার আরও নাম রয়েছে--
সেকের পছন্দের নাম  "ফিশি বাবা",
তার ইতিবৃত্ত আর বললাম না
 
দেবলীনার মনের ভাবের বোঝার ক্ষেত্রে,
এবং আমার কর্তব্য বিষয়ে আমায় ওয়াকিবহাল করতে,
আনন্দ দার ভূমিকা অতুলনীয় ।
 
স্বপন বাবু
-----------

কেউ বলে "খুড়ো", কেউ বলে "খোচো"..আমি বলব রুচিশীল, ইন্টেলেকচুয়াল dude..
কিন্তু খামখেয়ালী, moody, এবং  সহজেই  উত্তপ্ত হয়ে যান....
চরম অন্তর্মুখী, introvert..
জীবনে বহুবার ব্যথা পাওয়া মানুষ !
পলিটিক্সে বিশেষ আগ্রহী,
কিন্তু আমি স্যারের যে রোমান্টিক মনের পরিচয় পেয়েছি--
তাঁর গভীর প্রকৃতি প্রেম ও নিবিড় কাব্যময়তা,
জীবনানন্দ দাসের বনলতা সেনের চোখের romanticism
রন্ধ্রে রন্ধ্রে উপলব্ধি করার চেতনা--স্যার এর এই রূপ দুর্লভ,
এর সন্ধান সবাই পায়না !
আমি ভাগ্যগুণে পেয়েছিলাম সেই রূপের দর্শন !

স্যার আমার কাছে পিতৃতুল্য ..
আমার বিয়ের রেজিস্ট্রিতে আমার বাবা ও  শশুর মশায়ের পর
তৃতীয় সাক্ষীর সই উনিই করেন,
এই জন্যে স্যার এর কাছে আমি কৃতজ্ঞ !
 
অঙ্কন  দা
------------

হোমো সপিয়েনস এর  বিরল প্রজাতি -- হোমো সপিয়েনস IQ ;
যার একমাত্র স্যাম্পলই বর্তমান-- অঙ্কন দা স্বয়ং,
এক ও একমেবাদ্বিতীয়ম,
যে একাই সেই কেতন বহন করে চলেছে বীর দর্পে !
অঙ্কন দার নারী প্রীতি,
সেই নারীর IQ পরীক্ষা,
তার সাথে বুদ্ধি-দীপ্ত ভাব বিনিময়,
মাঝে মাঝে দৈহিক যোগাযোগের প্রচেষ্টা,
অবশেষে তার (বা নিজের) অপদার্থতা উপলব্ধি, এবং বিচ্ছেদ !
এরই মাঝে ঘন ঘনই সর্বাণী ম্যাম এর ত্রাসের কারণ হয়ে ওঠা ।
এ ছাড়া আরও অনেক অভূতপূর্ব অদ্ভুত এবং বিরল কীর্তির অধিকারী অঙ্কন দা,
সে সব লিখতে বসলে একটা আস্ত রচনাবলি হয়ে যাবে !
সব মিলিয়ে অঙ্কন দাও দুর্লব প্রাণী, CVPR তথা ISI এর মাথার মণি ।

সুকোমল দা
---------------

এমনিতে শান্ত সৌম্য প্রাজ্ঞ;
কিন্তু সেই রাতে,
মানে 2010 এর FIRE এ DAIICT-এর  গেস্ট হাউসএ,
যে জ্বালামুখী রূপ দেখিয়েছিল --
যেন যোগিরাজ শিবের নটরাজ মূর্তি !!
এবং তাতে আমি কি পরিমাণ বিস্মিত হয়েছিলাম
..তা কোনদিনও ভুলব না !


তন্ময় দা
-----------

নারকেলের মত কঠিন, রূর্হ, লেহন-লোলুপ যার বাইরেটা,
ভেতরে নিষ্কাম পরোপকারী শাস পরিপূর্ণ !
অনেকেরই ভিন্ন মত থাকলেও,
আমি উপকার পেয়েছি তাই বলছি..
তন্ময় দার উপকারের ঋণ কোনদিনও ভুলবনা ।

পার্থ দা
---------

পার্থ দার ভুঁড়ি চলে আগে আগে,
পেছনে ব্যস্ত চিত্তে চলে স্বয়ং পার্থ দা !
MIU এর কেচ্ছা,
আর গবেষণা নিয়ে মন্দার স্যার এর কাছে আগমন ।
পার্থ দার সাথে দীঘায় সেই তাল সারিতে,
রূপনারায়ণ নদীর সাগরের মোহনায় যাওয়ার অভিজ্ঞতা অতুলনীয় !
 
সৌপর্ণ
---------

রুচিশীল, চিন্তাশীল,
পড়াকু..মানে সাহিত্য পাঠে ব্রতী,
একই  জায়গায় স্থানু হয়ে সারাদিন মনিটরের ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র ফন্ট-এ 
একমনে কোড ও সিস্টেম চর্চা করায় ব্যস্ত যার কায়া ।
বিপুল একাগ্রতা ও
সুন্দরী স্ত্রী রত্নের অধিকারী !
কিন্তু  মাঝে মাঝেই এই শান্ত শ্বেত পদ্মের মধ্যে থেকে
বিষাক্ত নাগের ফনা দৃশ্যমান !!
তাই  সব মিলিয়ে বেশ interesting চরিত্র ।

২০১২ FIREএর পর বম্বে-টু-গোয়া সফরে
সৌপর্ণ আমাদের সাথী ছিল ।
FIREএর যাবতীয় কাজ,
গোয়ার হোটেল বুকিং এবং বীচে খেলার সরঞ্জাম --
সব দ্বায়িত্ব খুব নিপুণ ভাবে সামলেছিল ।
বিশেষ করে ফেরার পথে ট্রেনে
এক অসহায় মারাঠী যুবতীকে উদ্ধারের
এক অবিস্বরনীয় মহৎ কীর্তি ঘটিয়েছিল
এই মহামহিম সৌপর্ণ !
আমরা সবাই সেই পুণ্য লগ্নের সাক্ষী হয়েছিলাম
এবং অন্তরে এই মহাপুরুষের জন্যে গর্ব অনুভব করেছিলাম
(যা পুরোটা প্রকাশ করতে গিয়ে "ডাউন লোড" নামক
প্রবন্ধ লিখে ফেলেছিলাম ) 

 টি ক্লাব ও ক্যান্টিন
---------------------


প্রথমে IR ল্যাবে এসে দেখতাম
বিকেলে সবাই মিলে হই হই করে টি ক্লাব যাওয়ার সমারোহ !
বিভিন্য বিষয়ে নিখাদ আনন্দের খোরাক তৈরী হত সেখানে ;
যেমন মান্না দের "কফি হাউস", তেমনি আমাদের টি ক্লাব !
এখানে অনেক master blaster তাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ ইনিংস খেলে গেছেন !
বিকাশ দা, সুকোমল দা, জিয়া দা, শ্রীকান্ত দা, আনন্দ দা..আরও অনেকে ।
আমি এই মজলিশে সামিল হয়ে যে মজা পেয়েছি,
যে নির্মল আনন্দ রস উপভোগ করেছি,
তা আমার সারা জীবনের সুখস্বপ্নের বিষয়-বস্তু !
এর পর কেন্টিনের নতুন রূপ আসায়,
টি ক্লাবের ক্রেজ কমে গেছে !
আর সেই গাইয়ে রাও নেই,
বাজনদার রাও নেই !
আর যারা আছে তারা ব্যস্ত !
আর নেই তার রাশভারী রূপ,
আজ পরিত্যক্ত জলসাঘরের মত তার জীর্ণ  দশা !

তবে নতুন  ক্যান্টিন এও, অন্য রকম মজা পেতাম;
এবার কচি কাচাদের নিয়ে,
পুরনো ওস্তাদ আনন্দ দা, আর সাকরেদ আয়ন দাও ছিল;
তারা থাকলে আসর জমত ঝব্বর !

FIRE
--------

FIREকে ঘিরে আমার অনেক নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছে,
যা জীবনে চলার পথে যেমন অনেক উপলব্ধি ঘটিয়েছে,
তেমন বিনোদনও করেছে প্রচুর ।
আমার প্রথম FIRE ২০১০ এ গান্ধীনগরে ।
সেই প্রথম প্লেনে চড়া, সেই প্রথম মা-বাবাকে ছেড়ে বাইরে রাত্রিবাস !
DAIICT-এর অপূর্ব কেম্পাস আমার মনোহরণ করে !
জিয়া দা, অয়ন দা, সুকোমল দা, দীপা দি, পবিত্র দা
-- সবাই মিলে কত মজা হয়েছিল !
সুকোমল দার রাত্রি বেলায় মারকাটারি ভোকাবুলারি,
পবিত্র দার দফায় দফায় দিগ্বিজয়ী জোক্স,
আর অয়ন  দার ঐতিহাসিক "ছড়ানো" !
আর আমি এক বিশেষ কারণে কিছুক্ষণ মনমরা ছিলাম,
দীপা দি আমার শুকনো মুখ দেখে বলত
"এই হাসো"--আর আমি হেসে ফেলতাম,
এই ঘটনা আমার সারাজীবন মনে থাকবে ।
সবাই মিলে মাউন্ট আবু যাওয়ার অভিজ্ঞতাও দারুণ !
(২০১৫ এসে গেল, আবার FIRE হবে DAIICTতে,
এবারে আমি থাকলে আরও কত মজা হত !)
২০১০ এ ISI ব্যাঙ্গালোরে winter school এর দ্বায়িত্ব পাই,
এ আর এর নতুন অভিজ্ঞতা !
সবার কর্ম কুশলতায় খুব সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হয়েছিল এই স্কুল ।
ফেরার আগের দিন মাইসোর ভ্রমণও বেশ আনন্দ দায়ক !
২০১১-এ  বোম্বেতে খুব মজা হয়েছিল এমন নয়,
তবে ২০১২ এ কলকাতায় বেশ আনন্দ হয় আবার !
তবে সব চেয়ে স্মরণীয় FIRE হলো ২০১৩এ দিল্লীতে !
অনির্বাণ মধু-চক্রে পরে, সেই নিয়ে প্রচুর খিল্লি,
আমাদের ঘরে মাঝ রাতে আড্ডা
(শংকর দা আর সৌরিশ দার উপস্থিতি বিশেষ উপভোগ্য),
রাষ্ট্রিপতি ভবন ভ্রমণ--সব মিলিয়ে দিল্লী জমজমাট !
গতবারে তিন বিষধর -- জিয়া দা, দেবাশীষ দা ও আনন্দ দার ত্রিবেনী-সঙ্গমে FIRE আবার ধুন্ধুমার !
সঙ্গে সেক, অয়ন দা, অনির্বাণ (ও DAIICT এর রমণীগণ ) ।
চক্রান্ত করে অনির্বাণকে মধুর হাতে তুলে দেওয়া,
আবার মধ্যরাতে সুকোমল দা, জিয়া দা, অয়ন দা, দইয়ের উপস্থিতিতে
জমাটি আড্ডা !
(২০১০ এর পর আমি সুকোমল দাকে সব জায়গায় cite করেছিলাম!!
তাই এবার সুকোমল দা আর সাহস করে খাপ খোলেনি !! )
সেক এর শেষ রাতে বিসর্জনের নাচ
(মাঝে মন্দার স্যারের গাছ হওয়া)
যাকে বলে সিচুএসন পুরো জমে ক্ষীর !
সব মিলিয়ে FIRE আবার সুপার-হিট !
 
-----
আমাদের সবার ব্যস্ত, আশঙ্কা, দুশ্চিন্তায় ভরা অনিশ্চিত জীবন । এ সবের মধ্যে যদি একটু আনন্দ একটু মজা করে কাটানো যায় তাহলে ক্ষতি কি ! এই দীর্ঘ জীবন পথে মাঝে মাঝেই যখন ক্লান্ত হয়ে যাই, এই সব সুন্দর আনন্দঘন মুহূর্ত আমার চলার শক্তি যোগায় । এই আনন্দ স্মৃতি সাত রাজার ধনের চেয়েও দামী যা আমাদের এক মুঠো সুখ কিনে দিতে পারে । আমি উল্লিখিত সকল ব্যক্তি বিশেষের কাছে কৃতজ্ঞ এই সব অমূল্য মুহূর্ত উপহার দেওয়ার জন্যে ।

--
কৃপা 

Tuesday 29 September 2015

বাউল গান

শুনে কার মোহন বাঁশি
পরবাসী,
হলো মন মুক্ত বৃন্দাবন !
ওগো এ কোন বাঁশি
সর্বনাশী ! (২)
বিবাগী হয় জীবন ।
শুনে কার মোহন বাঁশি
পরবাসী,
হলো মন মুক্ত বৃন্দাবন !


দেখি ওই আলেখ গাছের ফুল..
বাকি সবই ভুল, (২)
যার গন্ধে মজে মাতাল হলো
লালন নিতাই কুল !
ওরে এ কুল ও কুল দু কুল গেল (২)
ভাবে হই  আকুল ।
শুনে কার মোহন বাঁশি
পরবাসী,
হলো মন মুক্ত বৃন্দাবন !


দেখলি কত বাইরের সোনা..
অঙ্গে সোনা, রঙ্গে সোনা !
ভেতর পানে ডুব দিয়ে দেখ
পাবি আসল সোনা ।
সেই সোনাতে মুড়িয়ে দিবি
আপন পাগল মন ।
শুনে কার মোহন বাঁশি
পরবাসী,
হলো মন মুক্ত বৃন্দাবন !


কত তুই পয়সা করলি,
কত তুই নাম কুড়ালি..
কত রং বাহারি ভোগের রঙে
ভরলি আপন ঘর !
ওরে ভবের ঘর রাঙিয়ে দেখ, (২)
পাবি প্রেম আকর ।
একদিন
সব রঙ্গতামাশা ঘুচিয়ে দেবে
সেই যে আসল কারিগর !
সেদিন
ভাবের রঙে রাঙিয়ে নিবি
আপন মনের ঘর ।
শুনে কার মোহন বাঁশি
পরবাসী
হলো মন মুক্ত বৃন্দাবন !

Wednesday 26 August 2015

শুভ জন্মদিন : অদিতী (অপ্রকাশিত)

এ গান কে বাঁধিল 
তব কন্ঠে সজিবে  বলিয়া ?
এ নূপুর কে গড়িল
তব চরণে বাজিবে বলিয়া ?
ও রূপ কে রচিল
আপন চিত্ত খুলিয়া ?
নাচে মন্দির মাঝে
উর্ধে বহু তুলিয়া !

Wednesday 10 June 2015

যেদিন নেব বিদায়

আজ আবার একা ..
এই একলা জানলার ধার,
রৌদ্রে তপ্ত ফ্লাই ওভার । 
রাস্তা থেকে গাড়ির শব্দ
ভেতরে একাকী অন্ধকার !


মনে পরে সেদিন ..
প্রথম এসেছিলাম যেদিন ..
এক চোখ স্বপ্ন নিয়ে ..
এ ল্যাব তখন
বর্ষার নদীর মত টইটম্বুর !
ব্যস্ত কর্মনিষ্ঠ সরব,
মাঝে হালকা হাসির খুচরো কথা। 
বিকেল হলে
দল বেঁধে টি ক্লাব-এ  উত্সব |


দিন বদলেছে ..
কত সময় বয়ে গেছে অবিরাম। 
বদলেছে কত মুখ
কত আশা হয়েছে চুরমার !
তবু ভাঙ্গা কাঁচের আলোতে
মন কুড়িয়েছে সুখ ।

এই জীবন তটে
কেউ আছে কেউ গেছে ।
নতুন কচি কাঁচার ঢল
আবার তাদের নিয়ে হয়েছে সোরগোল ।


তারই মাঝে জীবনে ওঠা নামা ;
কখনো চড়াই কখনো উতরাই !
অন্ধকারে অসহায় হাহাকার,
আবার তারই  মাঝে আলোর রোশনাই !


জানি একা এসেছিলাম
একাই  যেতে  হবে চলে  !
দিন শেষে কাজ ফুরালে ;
আসবে আমারও বাড়ি ফেরার পালা ..
চুকিয়ে সব হিসেব নিকেশ
আমারও দিন হবে শেষ !


তবু রয়ে যাবে আমার স্মৃতিখানি !
যদি পুরনো পার ধরে,
কাজের অবসরে,
নাউ বাইতে যাও
স্মৃতির উপলে পাবে আমার নাম খানি !

এই একলা  জানলার  ধার
রৌদ্রে তপ্ত  ফ্লাইওভার
রাস্তা থেকে গাড়ির শব্দ ..
সবই  রয়ে যাবে
শুধু থাকব না আমি
পরে রবে রিক্ত চেয়ার !


চলে যাব নিশব্দে
প্রাচীন স্মৃতির পাতায় !
যেদিন নেব  বিদায় ..

Friday 5 June 2015

আম কথা

প্রিয় দই,

আজ কাকু তোমাদের বাড়ির আম দিয়ে গেলেন। অপরূপ তার স্বাদ ! খেয়ে আমাতুর হয়ে গেছি  চরম আমাসক্ত হয়ে ক'লাইন লিখেই ফেললাম :


তোমাদের গাছের আম,
আম তো নয়..
যেন পেয়ালা ভরা জাম..
এর স্বাদের নেশায় হায়
জীবন মজে যায় ..
এর মিষ্টি আবেশে
রঙ্গীন হর শাম !


---

তোমাদের গাছের আম,
আম তো নয়
যেন বৈশালীর আম্রপালি !
হৃদয় মাঝে লাস্যময়ী
মুখে দিলেই এক ফালি ।


--

তোমার গাছের আম..
হৃদয় পত্রে লেখা রবে
এর স্বাদের অমর নাম..
মুখে দিয়ে হায়
অমৃত স্বাদ পাই !
হৃদয় মন্দির পুণ্য হলো
ধন্য চিত্ত ধাম । 

----

আম্র কুঞ্জে বাজে বেনু
আম্র গন্ধে মজে তনু
ব্যাকুল হৃদয় নিয়ে হায় ।
মরে যাই আম পিয়াশায় !
কত অপেক্ষা পরে পেলাম
এমন আম্র ধেনু !


---


এবং সব শেষে একটু ইংরেজি বুলি :

when a man goes
to taste your mangoes
his heart is fragrant
like a newly blossomed rose!

Friday 15 May 2015

শুভ জন্মদিন : মন্দার স্যার

আজ এ শুভ দিনে,
হে ধৃতিমান !!!
গাহি তোমারই জয় গান ।মোদের শুভেচ্ছার ডালি খানি লয়ে
হয়ো তুমি চির আয়ুষ্মান !
তব জীবন কাননে ।



এসেছিনু একেলা তব দেব অঙ্গনে !
দিয়েছিলে স্থান,
পরম সযতনে  স্নেহের আসনে ।
সেই দিন হতে
কত মহিমার দান
করেছ অম্লান ।
কত সুধা কণা
করেছি গো পান
তব চরণ-গঙ্গা হতে
তব আনন্দ নিকেতনে ।


হয়তো  রহিব না আগামী বত্সর
এই দিনে,
তোমার সনে !
হয়তো হইবে না দেখা ।
তবু এই স্মৃতির মালিকা
যা পরায়ে দিলেম আজি
তব কন্ঠে,
বাজিবে তাহা বেনু হয়ে
ফুলের রেনু লয়ে
তব মন্দির প্রাঙ্গনে ।

-----

জন্মদিনের আন্তরিক শুভেচ্ছা নেবেন স্যার !!

 আপনার deadline-বিহীন, তাগাদা-বিহীন, TO-DO list-বিহীন জীবন কামনা করি । আশা করি একদিন "জানা হয় নাই, শেখা হয় নাই" এমন জিনিস গুলির প্রতি সুবিচার করতে পারবেন । আর অবশেষে, আপনার না পড়া, না দেখা বই এবং সিনেমা গুলি এবং কাজের চাপে অপূর্ণ সাধগুলোর জন্যে সময় বের করতে পারবেন        

Wednesday 13 May 2015

আশা

অবশেষে হলো প্রতিক্ষার অবসান !
অন্ধকারে আলোর প্রতিক্ষা ..
ধূসর মরুভূমে জলের প্রতিক্ষা ..
যেমন উত্তর মেরুতে অগণিত মাস,
অগণিত দিন
আঁধার-ক্লান্ত মানুষ 
সুর্যোদয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে ...
যেমন কালাহারিতে অগণিত মাস
অগণিত দিন
তৃষ্ণার্ত মানুষ
আকাশে মেঘের দিকে তাকিয়ে থাকে..
কিন্তু, ওঠেনা সূর্য, আসেনা বর্ষা !
তবু আশ মেটেনা..
ব্যার্থ ক্লান্ত চোখে ঘুম নেমে আসে ..
পরের দিন হয় আবার আশার সমারোহ !
শাস ফুরিয়ে যায়, তবু আশ মরে না..
মানুষ এই আশ বুকে নিয়েই বিদায় নেয়
পরের জন্মে আবার আশ করবে বলে ..
আবার পূর্বাচলের দিকে চেয়ে থাকবে বলে
আকাশের মেঘের দিকে চেয়ে থাকবে বলে ..
জীবন শেষ হয়ে যায়..আশ শেষ হয়না !
কারণ জীবনের নামই আশা !
আশাই মানুষের শাসের ইন্ধন ..
সে আশ না মিটলেও .. সে পথে হাঁটাই জীবন  ।

Monday 6 April 2015

'ইয়ে'র দোষ

সকাল বেলা । নগেন বাবুর সাথে তপেন বাবুর সাক্ষাত ।

নগেন বাবু :    আরে তপেন বাবু যে ! প্রাতঃ ভ্রমন? নাকি বাজার ?
                  কিন্তু  সাতসকালে মুখখানি কেন এমন ব্যাজার ?

তপেন বাবু :   বলব কি আর মুখ ফুটিয়ে আমার ইয়ের কথা !
                  গত রাতে ইয়ের মাঝে লাগলো বেদম ব্যথা !      

নগেন বাবু :     আহা ! ব্যথায় বুঝি গুলিয়েছে সাতসকালে মাথা ?
                   চলুন বসে, চা খেতে খেতে বলবেন মনের কথা ?

দুজনের পাশের চাযের দোকানে প্রবেশ । এবার চায়ে চুমুক দিতে দিতে আবার কথোপকথন ।

নগেন বাবু  :  এবার  মশাই দুঃখ টুকু  করে ফেলুন শেয়ার,
                  দেখবেন কেমন হৃদয় খানি হয়ে যাবে ক্লিয়ার !

তপেন  বাবু  : বিয়ে করা ইয়ে আমার দিচ্ছে  ইয়ের ছেঁকা !
                  ইয়ে-জ্বালানো কথা তার দারুন ব্যাঁকা ব্যাঁকা !

নগেন  বাবু  : আহা  দাদা ! দিবারাত্র  গিন্নি  কেবল  দিচ্ছে  বুঝি  খোঁটা ?
                  বিনা  কারণে  প্রেস্টিজেতে মারছে বুঝি  ঝেঁটা ?

তপেন  বাবু  :    কারণ  একটি  আছে  মশাই ! সে তো নহে কম !
                    বুড়ো বয়সে কমেছে  যে আমার ইয়ের দম !

নগেন  বাবু  (একটু লজ্জিত  হয়ে, গলা  খাকরে, লঘু স্বরে ) :
                           
                   সে  মশাই এই  বয়সে একটু কমে যায় !
                এখন কি আর আগের মত তেমন ভালো হয় ?

তপেন  বাবু  (উত্তেজিত  হয়ে ) :

                        না না  মশাই ! এখনো আমার ভালই ইয়ের তেজ !
                        লেডিস কিটি পার্টিতে আমার ইয়ের দারুন ক্রেজ !

নগেন  বাবু  (উত্তেজিত  হয়ে ) : 
 
             বলেন কি মশাই ! হৃদয় আমার কাঁপচে শুনে যে !
                 পরস্ত্রীদের  সাথেও বুঝি করতে হবে ইয়ে ??

তপেন  বাবু  (নিজের মনে, নিরাশ  হয়ে) :           

                         একদিন, আমার ইয়ের গুণে কত সুন্দরী হয়েছে ফ্ল্যাট !
                         যেন প্রতি বলেই গ্লেন ম্যাকগ্রা বলেন  "হাউ ইস দ্যাট ?"

নগেন বাবু :             তখন মশাই আপনার কি হয়েছিল বিয়ে ?
                           ঘরে কি তখন অবস্থিতা বিয়ে করা ইয়ে ?

তপেন  বাবু :             
                      না মশাই ! তখন সুখে ইয়ে আমার দারুন ভালো  ছিল
                              
                          কেন মরতে ইয়ে করে  বিয়ে করতে  হলো !

                   তবে, তখন আমার জাঁদরেল ইয়েও আমার ইয়ের গুণে কাবু
                             ইয়ের সময় মুগ্ধ সেও বুঝলেন ইয়ে বাবু ?
 
নগেন  বাবু  লজ্জিত  হয়ে  নিরব । তপেন বাবু  ভাবের  ঘরে  বলে  চলেন :

                              মনে পরে আজও সেই মধুর ইয়ের রাত
                              ইয়ের সাথে ইয়ের সুখে হয়েছিল প্রভাত !

মধুর স্মৃতির চাপা আনন্দে তপেন  বাবু স্তব্ধ হলেন । মুখে মিটিমিটি হাসি । নগেন বাবু  কিছু বলতে ইতস্তত করছেন । অচিরে  তপেন  বাবুর সেই  বিরস বদন ফিরে এলো । তিনি  আবার  বলতে  লাগলেন :

                          গত রাতে ছিল মশাই আমাদের ইয়ের এনিভার্সারী
                            ঢাকায় টাঙ্গাইল কত রকম কিনে দিলাম  সাড়ি ।

                           খুশি হয়ে ইয়ে আমার করেন সেই আবদার
                           ফিরে আসুক পুরনো সেই ইয়ের পুষ্পহার !

                             বিয়ের রাতে সারা রাত করেছিলেম ইয়ে
                          প্রেমের দোলায় মজেছিল সে, ঘোমটা খুলে দিয়ে !
 
                            পুরানো সেই ইয়ের মজায় মজতে চায় আবার
                              আবার যেন রাত্রি খানি হয়ে যায় কাবার !

এবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে তপেন বাবু  বলেন :

                          কিন্তু হায় ! তেমন ইয়ের গুণ আমার নাই কো আর
                                সাধের  মধুর ইয়ে খানি হয়েছে অসার !

নগেন বাবু চরম লজ্জিত, ইষৎ বিব্রত হয়ে তপেন বাবুকে  সান্তনা দেওয়ার  চেষ্টা করছেন । তপেন বাবু  বলে চলেন :

                       এই সেদিন ওনার বাড়িতে, মিসেস মল্লিকের সাথেও করেছিলাম ইয়ে
                             মিস্টার মল্লিকও এসে দিলেন যোগ, হলো মিলিত-ইয়ে !

নগেন বাবুর আতঙ্কে প্রায় ওষ্ঠগত প্রাণ । সেদিনে দৃকপাত না করে তপেন বাবু বলে চলেন :
 
                          আমার  ইয়েতে মুদ্ঘ মিসেস মল্লিক হলেন ফ্যান
                            বললেন প্রতি  উইকেই  যদি ইয়ে করে  যান ..


নগেন বাবু  পালাবার পথ দেখেন । এমন সময় রেডিওতে  হেমন্তের গান ভেসে আসে  "এই  রাত তোমার আমার .. শুধু  দুজনে .." । শুনে তপেন বাবু চমকে ওঠেন । অকস্মাত তাঁর  চোখে জল, মুখে হাসি ফুটে ওঠে ..তিনি বললেন :

                              এই ইয়ে খানি..বিয়ের রাতে করেছিলাম ইয়ে
                              এই ইয়েতেই আমার গিন্নি হয়েছিলেন ইয়ে !
 
চরম বিস্ময়ে, নগেন বাবু বললেন

নগেন  বাবু  :        এত  ইয়ের গোলমালেতে আমার উড়ে গেছে ইয়ে !
                         গানই বুঝি আপনার সেই পুরনো দিনের ইয়ে ?
 
তপেন বাবু (মুখে ঐশ্বরিক আনন্দ) :

                              
                                  সংসার যদি না করতাম, করতাম শুধু ইয়ে
                               রেডিও জুড়ে  বাজতো শুধু আমারি গাওয়া ইয়ে !

                                                               
নগেন  বাবু  (বিশ্বয়ে , আনন্দে  ও  স্বস্তিতে ) :  

                                              ধন্য আপনার ইয়ে মশাই, ধন্য আপনার ইয়ে !
                                        তাহলে, আরেক পেয়ালা চায়ের সাথে হোক জমিয়ে  ইয়ে ?


বহু  অনুরোধের  পর  তপেন  বাবু  ইয়ে ধরলেন "নব আনন্দে জাগো .. জাগো .." । ওনার ইয়েতে ইয়ে হয়ে চায়ের দোকানে সমবেত  শ্রোতা মন্ডলী  ইয়ে ইয়ে করতে  লাগলেন ।

সমাপ্ত ।।
 
পুনশ্চ : উক্ত নাটিকায়, সব 'ইয়ে ' এক ইয়ে নয়, অনেক ক্ষেত্রেই এক মনে হলেও, কোনো কোনো ক্ষেত্রে  'ইয়ে' গুলি আলাদা আলাদা  ইয়ে । ভুল ত্রুটি হলে নিজ গুণে ইয়ে করে দেবেন কেমন ?
    
--

কৃপা 
 
 

Wednesday 4 March 2015

প্রথম সনেট

বাঁচি যদি সংসার মাঝে দুখ অনাদরে,
বুকে বাসকি গরল লহে ,
নিরব রোদন-ধ্বনি হৃদ গহবরে
পরাজয়-অনলে নিরবে দহে ;
স্খলিনু প্রতিপদ পঙ্কিল বালুচরে
হৃদ-ক্ষত হতে উষ্ণ-রক্ত বহে,
ব্যর্থ প্রতিক্ষণ জীবন সমরে ;
ব্যাকুল সুখ-পক্ষী একাকিনী গাহে ।
তবু মনঃ-ককোনদে জমে আশা-মধু,
অন্ধ মন-গৃহে জ্বলে প্রদীপ-কিরণ
অমনিশা গগনে দীপ্ত আশা-বিধু ;
আশাপূর্ণা স্বপন করিনু বরণ,
উপশমে স্তোত-বাক্য  উচ্চারিনু শুধু
কঙ্কর মাঝে যদি পাই বিজয় রতন ।।

Tuesday 3 February 2015

শীত

শীতের লেপের উষ্ণতায় 
পেয়েছিলাম  তোমায় ;
মিষ্টি রোদের সকালে 
শিশির হয়ে তুমি এলে ;
সবুজ ঘাসের পাতায় পাতায় 
আবার পেলাম তোমায় ।

ব্যস্ত পথে ধূলি কণায় 
পেয়েছিলাম  তোমায় ;
ট্রামে বাসে মিছিলে  
ভিড় হয়ে গায়ে মেখে ছিলে ;
বিকেলে গরম চায়ের আমেজে
আবার পেলাম তোমায় ।

ফেরার পথে রাস্তায় 
পেলাম তোমায় ;
রাস্তার আলো হয়ে 
জ্বলে ছিলে তুমি ;
আমার ছায়া নিয়ে খেলায় 
পেলাম, তোমার দুষ্টুমি ;
রাতে গরম রুটি আলুর দমে 
আবার পেলাম তোমায় ।

রাতে শোবার সময় 
পেলাম তোমায় ;
চাঁদের  আলো হয়ে 
চোখে  স্বপ্ন বুলিয়ে দিলে ;
গভীর রাতের আলসেমিতে 
নিবিড় করে, আপন করে 
আবার পেলাম তোমায় ।।

Wednesday 21 January 2015

শুভ বিবাহ : দ্বৈপায়ন

বিয়ের বাঁধনে বাঁধিলো আজিকে
দ্বৈ  এবং শুক্তি ।
বহু দিবসের বিরহ হইতে
ঘটিল আজিকে মুক্তি !
বিয়ের বাঁধনে বাঁধিলো আজিকে
দ্বৈ  এবং শুক্তি ।


হৃদয় খেলার
মধুর লীলায়
মন মানেনা কোনই যুক্তি ;
দূর দূর হতে
ব্যাকুল হৃদয়ে
ব্যথার অভিব্যক্তি !
তাই,
বিয়ের বাঁধনে বাঁধিলো আজিকে
দ্বৈ  এবং শুক্তি ।


মন উচাটন
প্রাণ উচাটন
মরুভূমি সম প্রণয় কানন !
পাওয়া না পাওয়ার
করুন খেলায়
মলিন সহন শক্তি !
তাই,
বিয়ের বাঁধনে বাঁধিলো আজিকে
দ্বৈ  এবং শুক্তি !


মুখে বলি শুধু 
মানিয়ে নিয়েছি,
দিনে দিনে আরো
প্রবীন হয়েছি ।
লোক দেখানো
আবেগ প্রবাহ
হৃদয়ে লুকায়ে নিয়েছি !


তবু জানি ওগো
মনের গহনে
মরেছি একেলা 
মরমে মরমে ;
তুমি ছাড়া ওগো 
সুখ আসেনা
চিত্তে এক রত্তি !
তাই, 
মিলন ডোরে বাঁধিলো আজিকে
দ্বৈ  এবং শুক্তি !


তাই,
ভুবন ভোলানো 
আলোর আসরে
মিলেছে চার নয়ন ;
একাকার হয়ে
সুখের সাগরে
ভাসিছে দুই জীবন ;
সংসার ব্রতে 
থাকুক সদাই 
অশেষ অসীম ভক্তি ;
বিয়ের বাঁধনে বাঁধিলো আজিকে
দ্বৈ  এবং শুক্তি !

Wednesday 14 January 2015

বিয়ের prelude

দৃশ্য  :  পাতাল লোকের জটলা

দুই পাতালবাসী : নিন্দুক ১ এবং  নিন্দুক ২ এর  প্রবেশ ....

নিন্দুক ১ :

জানেন দাদা,
জবর খবর !!

এই সপ্তা খানেক পরে
আসছে ব্যাপক বদল !

নিন্দুক ২ :

বলেন কি  মশাই ?
এত  শিগগির ?

সবুজ  ঘাসের পাতার দেশে
ফুটবে গেড়ওয়া  কমল ?

নিন্দুক ১ :

আরে না না  মশাই !
সেসব নয় !
শুনুন  তবে,
গুনুন মনে
একটা করে দিন ;
রবিবারের রাত গড়ালেই
বাজবে বিয়ের বীণ !

নিন্দুক ২ :

বীণ কেন শুনি ?
একি মশাই সাপ নাচানোর খেলা ?
কিসের তালে  কিসের নাচন
বুঝবে বুঝি ঠেলা ?

নিন্দুক ১ :

এবার হবে বর-বাবাজির জীবন-মরণ খেল !
ছাদনা তলায়  নেড়ার মাথায়
ফাটবে গোটা বেল !

নিন্দুক ২ :

ওরে বাবা !
তারপর কি টোটাল ব্লাক-আউট ?
সর্ষে ফুল, বিষ ফোঁড়া..
লাইফ একেবারে হেল ?

নিন্দুক ১ :

কেন  মশাই ছট-ফটানি ?
তিষ্ঠ ক্ষণকাল !
বললাম বুঝি
সবুজ গিয়ে আসবে আবার লাল ??

আসল মজা হবে মশাই
প্রথম দিনের সক্কালেতে :

যখন ঢুলু ঢুলু চোখে
বর-বাবাজি
দুহাত মেলে
তুলবে দিব্য হাই ;
ঘুমের ঘোরে
আঁতকে উঠে
বলবে "হায় ! হায় !"

"আমার সাধের পালংকেতে
শুয়ে এটি কে ?"
বুঝবে তখন
চেতন পেয়ে,
"আরে দাদা !
এ যে আমারি
বিয়ে করা 'ইয়ে ' " !

"এই তো দাদা
সেদিন রাতে
ঘটা করে
করলাম একেই বিয়ে !
বাজলো উলু,
বাজলো সানাই,
মালা বদল হয়ে গেল
টোপর মাথায় দিয়ে "!

নিন্দুক ২ :

এগ্গে, একটা পোসনো  ছিল :
'ইয়ে ' মানে কি ইস্তিরি ?
গরম নাকি ঠান্ডা ?
মরম মাঝে ছেঁকা দেয়ার
অন্তবিহীন ফান্ডা ?

নিন্দুক ১ :

তখন সে কি করবে
মশাই ?
ভাববে বসে কি ?
সর্ষে ইলিশ
বেগুন পোড়া?
নাকি
পান্তা ভাতে ঘি ?

নিন্দুক ২  :

শেষের পাতের দই ?
নাকি
প্রথম পাতের শুক্ত ?
খাল কেটে এলো আস্ত কুমির ?
নাকি
প্রথম ফোটা মুক্ত?

নিন্দুক ১ :

ওপর থেকে ভাগ্য দেবী
হাসেন বাঁকা বাঁকা ;
টানা টানির বাজারেতে
টেঁক হবে যে ফাঁকা !

নিন্দুক ২ :

দু কান ধরে
ওঠা-বসার,
জ্বালামুখী শর্ত !
ত্রাহি ত্রাহি
কাঁপবে রবে
স্বর্গ থেকে মর্ত !

নিন্দুক ১ ও নিন্দুক ২ সম্মিলিত ভাবে  :

মরেছে ব্যাটা মরেছে ;
একেবারে মরেছে !
প্রেম-পিরিতির অক্টোপাসে
আষ্টে পিষ্টে ধরেছে !!

দুয়ে মিলে অট্টহাস্য, বিপুল করতালি..

এমন সময় ,
ত্রিলোক জুড়ে শংখ, ঘন্টা ধ্বনি ;

আকাশ থেকে দেবদূতের আবির্ভাব !

তীব্র তেজদৃষ্টি দুই নিন্দুকের পানে নিক্ষেপ ...
নিন্দুক-দ্বয় আতঙ্কিত !!

দেবদূত :

থামুন  তো  মশাই !
খুব তো ভারী
চেটাং চেটাং কথা !!
নতুন বিয়ের মুখে কেবল
মারতে হবে ঝেঁটা ?

বিয়ে মানেই কেবল বুঝি
হাঁড়ি-কাঠে গলা ?
নারী মানেই ঘর জ্বালানি
নিঠুর ছলা কলা ?

দেখবেন মশাই
অন্য রকম হবে
প্রনয় রসের খেল !
ফুটবে হাসি !
নেড়ার মুখে,
পরবে না কো বেল !

দুয়ে মিলে সুখ দুঃখ
করে নেবে ভাগ ,
খেলবে দুজন,
মুলতান মাঠের
সুলতান হয়ে,
দৃপ্ত সহবাগ !

খেপা বাউলের সুরে
দুজনে
নাচবে  তা  ধিন  ধিন !
হই হই করে
রম রম করে
কাটবে সুখের দিন !

নিন্দুক ১ ও  নিন্দুক ২  এর  পলায়ন
স্বর্গ  থেকে  নব দম্পতির ওপর পুষ্প বৃষ্টি !

সমাপ্ত ||

--

কৃপা দা

পুনশ্চ : পাঠকদের উদ্দেশ্যে বলছি । এই ছোট ভাইয়ের সামনে গুরু দ্বায়িত্ব । তার মন হালকা করার উদ্দেশ্যেই এই কৌতুক কাব্য নাটিকা । এই ধরনের লেখায় আমার আজই হাতে খড়ি । কাজেই ভুল ত্রুটি অনিবার্য ! নিজ গুণে ক্ষমা করে দেবেন । আসুন দ্বৈ-শুক্তির আনন্দময় পরিণয়ের জন্যে শুভেচ্ছা জানাই । 

Saturday 3 January 2015

পাওয়া


খুঁজেছি তোমায় একা একা,
তবু পাইনি তোমার দেখা ...


খুজেছি তোমায়
অমনিশার অন্ধকারে
খুজেছি তোমায়
রাধিকার অভিসারে
দাওনি তুমি দেখা !


খুজেছি তোমায়
তপ্ত রুক্ষ সাহারায়
খুজেছি অতলান্তিকের গভীরতায়;
খুজেছি  তোমায়
কলোরাডোর গহন গুহায়
আমাজোনের আদিম বিভীষিকায়
কিন্তু পাইনি তোমার দেখা !


খুজেছি তোমায়
দৃপ্ত বহ্নি শিখায়
পুড়েছি হাজার পতঙ্গের মত
অব্যক্ত যন্ত্রনায় !
তবু  পাইনি  ওগো  তোমায় ;


খুজেছি  তোমায়
হালকা শীতের আঁচে
রোদ ঝলমলে আরশি- ভাঙ্গা কাঁচে ;
খুজেছি  তোমায়
রাস্তার মোড়ে, অন্ধ গলিতে
শৈবাল ঘেরা  একলা  সৈকতে ..
তুমি  ছিলেনা  সেথায় ;


খুজেছি  কতবার
সেই  সাধের  শিউলি  তলায়
যেখানে  রোদ  খেলে  যেত  শৈশবের  মত ;
যেখানে  সন্ধে  নামলেই
জোনাকির  ঝিলমিল  জ্বলত  অনাবিল ;
যেখানে  জুইয়ের সুবাসে
রুপকথা  ঝরে  পরত  অঝরে ;
আকাশের  তারায়  বোনা সামিয়ানা থেকে ;
যেখানে  একা  একা  বসে  নেশা  লেগে  যেত ;
হারিয়ে  যেত  মন  দুর্গম  অজানায় ;
কত  আশা  ছিল
এবার  বুঝি  পাব  তোমায় !
তবু  হায় !
তুমি  এলেনা  সেখানেও !


আমি  জানতে  চেয়েছিলাম  জানো ?
বনের  পাখির  কাছে,
বেদুইন  বাতাসের  কাছে ;
চঞ্চল  ঝরনার  কাছে,
নদী, সাগর, মেঘেদের কাছে ;
তোমার  কথা |
বলেছিলাম  তাদের
আমার  মনের  গোপন  ব্যথা !
কিন্তু  তারা  কেউ
দিতে  পারেনি  ওগো
তোমার  ঠিকানা ..


এই  ভাবে  যখন
ক্লান্ত , তৃষ্ণার্থ  পথহারার  মত
ঘুরছিলাম  দুয়ারে  দুয়ারে ;
সব  আশায়  দুর্ভিক্ষ দেখছিলাম !
তখন হঠাত --
এক  মিষ্টি  ভোরে
রোদ  ঝিলমিল  শিশিরে
পেলাম  তোমার  দেখা  !


রঙিন  আলোর  বেশে
স্মিত  হাসি হেসে
এসেছিলে  তুমি ;
ধরে  আমার  হাত
আপন  নরম  হাতে ;
চেয়েছিলে  আমার  দিকে
এমন  করে ..
যেন  একফালি  চাঁদ
হেসেছিল  আমার  পানে ;
অজানা  আবেশে  বেঁধেছিলে  আমায়
কোন  গভীর, প্রবল  টানে !


আমি  অবাক  বিভোর  হয়ে
সুধিয়েছিলাম  তোমায়
"এতদিন  কোথায়  ছিলে  তুমি ?
কেন  পাইনি  তোমার  দেখা ?"


অরুন  আলোর  মত  হেসে  বলেছিলে সেদিন
"ওগো  আমার  সখা
ছিলাম আমি একান্ত  অবহেলায় ;
তোমার  মনের  কোণে ;
খোজনি  আমায়  সেখানে 
তাই  পাওনি  আমার  দেখা !"


সেই  মিষ্টি  তিরস্কারে
মনে  জ্বললো  আলোর  প্রদীপ
এলো  আমার  নেভা  সাঁজ বাতিতে
আলোর  রোশনাই ..
সেই  চরম  মধু  ক্ষণে
অমৃত  সুখের  গানে
আমি  পেলাম  তোমায় ..