Saturday 6 August 2016

শ্রাবণ

খোলা জানলায় এলো
শ্রাবণের ভেজা দিন ।
ধূসর চোখের কাঁচ,
ধূলো জমা দূরবীন ।
প্রথম দেখার বিদ্যুৎ,    
আর ব্যস্ত সর-জমিন ।

ডাইরির শেষ পাতে
আজও আধ মোছা নাম লেখা আছে ।

কাক ভেজা রেনকোটে
ভিজতো যে উত্তাপ ।
টুপ্ টাপ ঝির ঝির
ভিজতো উষ্ণ চায়ের কাপ ।
ভরা পার্কের বেঞ্চ
আর দুজনের টিফিন ।

পার্কের সেই সীটে
আজও আধ ভেজা নাম জেগে আছে |

বয়ে যায় স্মৃতি কণা
কাল কেউটের ফণা !
একলা পার্কের বেঞ্চ
না খাওয়া টিফিন ।
ফাঁকা ঝিলের পার
আর ছকে বাঁধা রুটিন ।

তবু বিকেলের হাওয়ায়
কোন পাখি বলে যায়,
শ্রাবণের রিমঝিমে,
আজও আধ ভোলা নাম বেঁচে আছে ।

বিদায় দীপাদি !!

এতদিন ধরে ছিলে তুমি ওগো

ল্যাব আলো করে,
রেখেছিলে মোদের
সোহাগে আদরে
তোমার মমতা নীড়ে ।

এখন
থাকবে না তুমি, ল্যাব খানি তোমার
হবে গো অনাথ, হবে গো ফাঁকা !!
তোমার মধুর হাসিখানি মোদের
হৃদয়ে রবে গো আঁকা ।

তবু তোমার কীর্তি-খানি
হউক সমুজ্জ্বল
এই কামনাই বুকে করে মোরা
মুছবো চোখের জল ।।

--
তোমার স্নেহধন্য
কৃপা

মানব - বল্টু সংবাদ

নাটিকার মূল  চরিত্র :
মানব বাবু  - সরকারি কর্মচারী, বয়স ৪২, বিবাহিত বিগত ১৩ বছর
বল্টু - মানব বাবুর পুত্র, ক্লাস ৫-এ  পড়ে
ফটকা, মিছরি - ভাই - বোন, পাশের বস্তিতে থাকে, বল্টুর খেলার সঙ্গী, তাতে মানব বাবুর আপত্তি

দৃশ্য ১ :

মানব বাবুর বাড়ির বারান্দা। বুধবার, সন্ধ্যেবেলা ।

বল্টু :       বাবা, এই সামনের মাসে,
               কি  নববর্ষ  হবে ?

মানব বাবু :    হ্যা সোনা হবে

বল্টু  :       নববর্ষ কাদের বাবা ?
              তোমার ? নাকি আমার  ?

মানব বাবু :     নববর্ষ সবার সোনা
                   নববর্ষ  সবার !

বল্টু  :        মায়ের, তোমার আমার ?

মানব বাবু  :      হ্যা সোনা সবার

বল্টু :        আর মিছরির আর ফটকার ?

মানব বাবু (ঈষৎ থেমে) : হ্যা  সোনা  সবার

বল্টু  : নব বর্ষে নতুন জুতো, নতুন জামা আমার ?

এবার ছেলেকে কাছে টেনে নিয়ে, আদর করতে করতে

মানব বাবু  : হ্যা সোনা, সবই  হবে তোমার

বল্টু  : আর মিছরির আর ফটকার ?


----

দৃশ্য  ২ :

রবিবার বিকেল । মানব বাবু নিউস চ্যানেল দেখছেন । বল্টুর টিভির ঘরে প্রবেশ ।

বল্টু  : আচ্ছা বাবা বলতে পারো, শিরদাঁড়া কারে কয় ?

মানব বাবু কিছুক্ষণ নিরব । তারপর বললেন

মানব বাবু :         যা থাকলে জীব-জন্তু সোজা হয়ে দাঁড়ায়,
                       যা না থাকলে তাদের মাথা নিচু হয়ে যায়

বল্টু  :               তোমার কি আছে বাবা  ?

মানব বাবু :            কি  ?

বল্টু :              ওই শিরদাঁড়া যারে কয় ?

মানব বাবু নিরুত্তর ।

বল্টু :             তাই বুঝি মায়ের সামনে
                    তোমার মাথা নিচু হয়ে যায় ?

---

দৃশ্য ৩ :

শনিবার । দুপুর বেলা । ভাত খওয়া হয়েছে । মানব বাবু খাটে  শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছেন । এমন সময় ঘরে বল্টুর প্রবেশ

বল্টু  :            আচ্ছা  বাবা, সিন্ডিকেট কারে  কয় ?

মানব বাবু  (ঘুম ঘুম চোখে ):         ওই সবাই যাদের পায় ভয়,
                             
              রাজ্য জোড়া  উন্নয়ন
                                             যাদের  দ্বারা হয় ।

বল্টু  :                           আমিও  তালে হয়েছি  বাবা

মানব বাবু  :                               কি ?

বল্টু  :                        ওই  সিন্ডিকেট..এখন ওই বেড়াল ছানা আমায় পায় ভয়

---

দৃশ্য ৪  :

বেস্পতিবার, রাতে খাবার পর, বারান্দাতে ।

বল্টু  :              আচ্ছা  বাবা, কোথায় নাকি ব্রিজ ভেঙ্গে গেছে
                       তার নিচে কত লোক চাপা পড়ে আছে ?  

মানব বাবু  : সত্যি বাবা ! কি সাংঘাতিক কান্ড হয়ে গেছে !

বল্টু  :       এবার যদি মাথার ওপর আকাশ ভেঙ্গে পড়ে 
                তার নিচে তুমি আমি যাব সবাই মরে  ?
 
----

দৃশ্য  ৫ :

রোববার বিকেল । বল্টু পাড়ার মাঠে খেলতে গেছে । মানব  বাবু  কাগজ  পড়ছেন । এমন  সময় পাড়ার ছেলে লালুর  হাঁফাতে হাঁফাতে প্রবেশ 

লালু  : মানব কাকু ! সর্বনাশ হয়ে গেছে !
         মাঠের ধারে ঝিলের জলে বল্টু পড়ে গেছে !

মানব বাবুর মাথায়  যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে । লালু  বলে  চলে

লালু  : কে যেন  সঙ্গে  সঙ্গে  ঝিলে  ঝাঁপ  দেয়
          জল থেকে তুলে তাকে
          ডাক্তার খানায় নিয়ে যায় ।

সঙ্গে সঙ্গে মানব  বাবু ও  তাঁর  স্ত্রীর লালুর সাথে ডাক্তার খানার  উদ্দেশ্যে প্রস্থান ।

----

দৃশ্য  ৬ :

ডাক্তার খানা । অনেক জনসমাগম । মানব বাবু ও তাঁর স্ত্রী ভিড় ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলেন । বল্টু খাটে শুয়ে  আছে । ভিজে  চপচপে সারা গা । চোখ বন্ধ । দেখে মানব বাবু থমকে গেলেন । স্ত্রী "বল্টু..বল্টু" বলে  কান্না শুরু করেছেন । কান্না  শুনে  গম্ভীর মুখে ডাক্তার বাবু  এগিয়ে  এলেন । মানব বাবুর  উদ্দেশ্যে বললেন

ডাক্তার  বাবু  :    এযাত্রা, বুঝলেন মশাই, পেয়ে গেলেন  পার
                       সব ক্রেডিট হলো  গিয়ে  ওই  ছেলেটার ।

বলে  আঙ্গুল  দিয়ে যেখানে তাক করলেন, সেখানে পাশের বস্তির ছেলে ফটকা দাঁড়িয়ে ছিল । আপাদ-মস্তক জলে ভেজা । এবার  ফটকা  বলল  

ফটকা  :   দিলাম ঝাঁপ যখনই ওকে জলের মধ্যে দেখি
              এমনি এমনি কি  আর  সাঁতার  কাটা  শিখি  ?

ফটকার মুখে বীরের হাসি ।  মানব বাবু ও তাঁর  স্ত্রী  যেন কৃতজ্ঞতায় আত্মবিক্রিত হয়ে গেলেন এই বস্তির ছেলেটার কাছে । ওদিকে  বল্টুর জ্ঞান ফিরেছে । 'বাবা' বলে  ডাকতেই মানব বাবু ছেলের কাছে ছুটে গেলেন । বল্টুর মুখে মৃদু কথা

বল্টু  :     সত্যি সত্যি কি  বাবা
           আকাশ পড়ল ভেঙ্গে ?
            চাঁদ তারা এলো নেমে
             আকাশেরই সঙে ?

দৃশ্য ৭ :

মানব বাবুর বাড়ি । আজ নববর্ষ । মানব বাবু আজ  বাড়িতে ছোটো করে অনুষ্ঠান করেছেন । এই বারই প্রথম । পাড়ার ছোটো ছোটো ছেলে মেয়েদেরকে আজ তাঁর বাড়িতে নিমন্ত্রণ করা  হয়েছে । পাশের বস্তি থেকে ফটকা, তার বোন মিছরি, আরও অনেক  ছেলে মেয়ে এসেছে । যে  ঘরে বাচ্চাদের হই হুল্লোর শোনা যাচ্ছিল, মানব বাবু সেই ঘরে ঢুকলেন । দেখলেন, বল্টু  আজ নতুন পাঞ্জাবি পাজামা পরেছে । তার পাশে ফটকা আর মিছরি । ফটকাও আজ নতুন জামা প্যান্ট পরেছে । মিছরি একটা  নতুন লাল টুকটুকে ফ্রক পরেছে । দুই ভাই বোন  কোনদিন এমন ভালো পোশাক পরেনি, এমন ভালো ভালো খাবার পেট পুরে খায়নি । আজ বল্টুর মা সবাইকে  যত্ন  করে  খাইয়েছেন -- পোলাও, মাংশ, লুচি, আলুর দম, আইস ক্রিম, মিষ্টি -- আরও কত  কি ! মাঝে একবার স্বামীর  সাথে  চোখে  চোখ পরে গেছিল । তখন মুখে ফুটেছিল স্বামীর প্রতি তৃপ্তির হাসি ।  বাবাকে দেখতে পেয়ে বল্টু ছুট্টে এসে জড়িয়ে ধরে । বলে

বল্টু :              সত্যি  বটে নব বর্ষ
                   তোমার আমার  সবার !

মানব বাবু  :         তোমার আমার...আর
                       মিছরির  আর  ফটকার ..


আজ বাবা ছেলে একই আনন্দে সামিল । অনেক দিন পর  মানব  বাবু  নিজের  শিরদাঁড়াটা অনুভব করলেন । আর অনুভব করলেন মাথার ওপর অসীম আকাশটাকে ।

পুনশ্চ : ও, একটা  কথা  তো বলাই হয়নি । বল্টুর  ভালো নাম বিবেক ।