Monday 30 December 2019

হবা

দেখেছি চোখে তোমার
পুরীর সৈকত-বালির ঝিকিমিকি
বা অমলতাসের  পাপড়িতে
ভোরের আলোর বিচ্ছুরণ ।

ওই অতল গহীন চাহনি
নীরবে যেন ভাসে
ঝিলের শালুক হয়ে
সুপ্ত সম্বিতের কুয়াশা মেখে ।

মোলায়েম হাসি তোমার
যেন সৃষ্টির শুরুর থেকেই ছিল;
একবার শুনেছিলাম,  তুমি যখন হবা,
আর আমি সেই আধ খাওয়া আপেল --
রাখা ছিল অজানা মেঘের আড়ালে তারার মতো
অনন্তের অজ্ঞাতবাসে;
আমায় দেখেই যেন সরেছে সেই মেঘ
পুনর্মিলনের বাঁশি হয়ে
এলে কর্ণ-কুহরে ।

হয়তো পল্লবী-পর্ণী হয়ে ছিলে তুমি
বিজন বীথিকায়
বা বাগানের তরু মাঝে
বা কোনো অজ্ঞাত সাওঁতালিনির সাজে;
বা হয়তো ঘুমিয়ে ছিলে
নিশ্চিন্ত শান্তি হয়ে 
আমের মুকুলে,
বা বাবুই পাখির বাসায়
জোনাকির নরম আলোয় ।

চাতকের মতো চেয়েছি তোমায় কতবার--
আকাশ-বাতাস-তারা-পাখি
সবার কাছে একটু একটু করে চেয়েছি তোমায়
তিল তিল করে গড়ে তুলবো বলে,
পেলাম না তোমায়, পেলাম না কিছুতেই !
অবক্ষয়ে ঝরে ঝরে, মন্বন্তরের ফসলের মতো 
শুধু স্মৃতি-টুকুই রয়ে যায় বার বার ।

ভাবছি  এবার খুঁজবো তোমায়
নতুন করে, নতুন ভাবে --
হতশ্রীর শূন্য পাতে;
পতিতার বিক্রিত অঞ্চলে,
মধ্য-বিত্তের অসহিষ্ণতায়,
আর, মৃত সৈনিকের বুকে ।
 
============================
 
নিজের লেখা কবিতাটি নিজের কবি-সত্তা সরিয়ে রেখে, পাঠকের চশমায় পড়ার চেষ্টা করলাম । দেখলাম, কিছু জায়গা এমন রয়ে গেছে যা হয়তো আরও সহজ ভাবে বোঝা গেলে ভালো হতো । আমি নিজে খুব তুচ্ছ, নিতান্তই শখের কবি; অল্পই আমার সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা, খুবই সীমিত আমার জ্ঞান । সাধারণ-স্তরের পাঠক হিসেবে মনে করি, এটি কোনো লেখক/কবির দ্বায়িত্ব থেকে যায়, যতটা সম্ভব নিজের মনের ভাব পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ।  সাধারণ পাঠক কবির মনের খবর না পেলে, তাঁর রচনা উপভোগ হয়তো সম্পূর্ণ ভাবে করতেও পারবেন না । আর পাঠক লেখা বুঝতে পারলেও তিনি ঠিক বুঝেছেন কিনা সেটা জানার কোনো উপায় থাকে না । কারণ সাধারনত কবি কবিতার সাথে কোনো "মানে বই" বা নোটস গোছের কিছু রেখে যান না :-) এ ঘটনা আমার ক্ষেত্রে আকছার হচ্ছে । পড়ি, কিন্তু বুঝতে পারিনা বা যা বুঝলাম সেটাই কবি বলতে চাইছেন কিনা বুঝতে পারিনা । তাই আমি আমার কবিতা সংক্রান্ত কিছু প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করছি ।

এখানে বলে রাখা ভালো আমি পাঠকদের মোটেই নির্বোধ, কাব্য-বোধ আস্বাদনে অক্ষম মনে করছি না । তাই কেউ অপরাধ নেবেন না । কিন্তু আমি নিজে যেহেতু খুব কমই বুঝি তাই ভাবি সবাই হয়তো আমার মতোই কম বোঝেন :-) নিচে কবিতা সংক্রান্ত কিছু সম্ভাব্য FAQ ও তাদের উত্তর দিলাম :

প্রঃ কে এই হবা? কেন তাঁকে খুঁজছেন কবি ?
উঃ সবাই অবগত আছেন "হবা" হলেন সৃষ্টির প্রথম নারী যাকে আমরা "ইভ" নামেও চিনি । এই কবিতায় বলা যেতে পারে তিনি হলেন মনের শান্তি, তৃপ্তি  বা কাঙ্খিত কোনো ভাব যা মানুষ সৃষ্টির সূচনা থেকেই খুঁজে এসেছে প্রকৃতির কোলে বা অন্য কোনো পছন্দের জায়গায় । কিন্তু এখানে কবি সেই শান্তি খুঁজে পাচ্ছেন না । জীবনের টানাপোড়েনে, সমাজে মূল্যবোধের অবক্ষয়ে সেই শান্তি/তৃপ্তি লুপ্ত । তাই তিনি হন্যে হয়ে সমাজের নিপীড়দের কাছে এই শান্তির সন্ধান করছেন। কারণ তাঁর বিশ্বাস প্রকৃত তৃপ্তি সেখানেই পাওয়া যাবে ।

প্রঃ কবি কেন "হতশ্রীর শূন্য পাতে" খুঁজছেন ?
উঃ "শূন্য পাত" অর্থাৎ খাদ্যের অভাব । খাদ্যে মেলে খিদের  জ্বালা থেকে মুক্তি । হয়তো তার চেয়ে বড় তৃপ্তি আর হয়না । এই পাতে যদি সামান্য খাদ্যও মেলে তাতেই হবে শান্তির/তৃপ্তির বিরাজ । কারণ এই খাদ্য কেবল মাত্র ক্ষুধা নিবৃত্তিতে ব্যবহৃত, বিলাসিতায় নয় ।

প্রঃ কবি কেন "পতিতার বিক্রিত অঞ্চলে" খুঁজছেন ?
উঃ "অঞ্চল" চিরাচরিত ভাবে ভারতীয় নারীর লাজের প্রতীক-স্বরূপ। এতেই তার আত্মমর্যাদা, তার আত্মপ্রত্যয় । পতিতা, যে সেই সম্পদ হারিয়েছে, তার কাছেই এই লাজের মূল্য সব চেয়ে বেশি ।

প্রঃ কবি কেন "মধ্য-বিত্ত্বের অসহিষ্ণুতায়" খুঁজছেন ?
উঃ
মধ্য-বিত্ত আপন সুরক্ষিত জীবনে সুখী, নিজের সংসারের কল্যাণে অনেক অন্যায় অবিচার মুখ বুজে সয়ে যান । তিনি সর্বংসহ, সহিষ্ণু । কিন্তু তাতে শান্তি মেলে না । যদি তিনি অসহিষ্ণু হতে পারতেন, প্রতিবাদ করতে পারতেন এই অবিচারের অচলায়তনের বিরুদ্ধে, তবে  হয়তো তৃপ্তি পেতেন ।

প্রঃ কবি কেন "মৃত সৈনিকের বুকে" খুঁজছেন ?
উঃ মৃত্যুর আগে সৈনিক তার সব চেয়ে কাছের মানুষ, সব চেয়ে আনন্দের মুহূর্ত মনে করতে চায় । তার বুকে তখন সেই অনাবিল তৃপ্তি স্থান পেতে চায় ।
 

IIT কানপুর : মনের অর্ঘ

চোখের সামনে ছিলে যবে তুমি 
হৃদয়ে স্থান দিয়েছি
হারিয়ে তোমায় বারে বারে যেন
আরও বেশি করে চেয়েছি ।

আঁচলে তোমার স্নেহের পরশে
কত ভালোবাসা পেয়েছি,
আপন ভেবে কত না-পাওয়ার
বেদনা বিলিয়ে দিয়েছি ।

ব্যর্থ হৃদয়ে তোমার দেউলে
কত দীর্ঘশ্বাস ফেলেছি,
আত্মজ্ঞানের শিক্ষা পেয়ে
জীবনের পথে চলেছি ।

Mentor-এর পথ-নির্দেশ আর
ভুবন-দোলানো হাসি,
তার  সংস্কৃতি মনস্কতায়
হয়েছি জ্ঞানপিয়াসী ।

দেব-আশীষে পেয়েছি আমি
আপন জনের পরশ,
তাদের স্নেহের ছায়ায়
পেয়েছি স্বস্তি, পেয়েছি  হরষ ।

বাগদেবীর আরাধনায় 
করুণা-সিক্ত হয়েছি,
শক্তি-পূজায় আলোক প্লাবনে 
কালিমা-মুক্ত হয়েছি ।

চাতক হয়ে দেখেছি কত
ময়ূর-পেখম-ছটা,
উষ্ণ দিনে মুগ্ধ করেছে
অমলতাসের স্বর্ণ-জটা ।

অসীমের  করুনায় পেলাম
আগামীর  অনুদান,
উত্তরসূরির আগমনে
তৃপ্ত হয়েছে  প্রাণ ।

IIT কানপুর--
ধন্য  আমি  পুণ্য আমি
তোমার  করুণা  দানে
শতবার আমি  প্রণাম  জানাই
এই  বিনীত  গানে ।


পুনশ্চ: IIT কানপুরে যে নতুন সম্পর্কের তার বাঁধা হয়েছে, তার অনুরণন আমার জীবনকে আরও মধুময়, সংগীতময় করেছে । জনৈক সহৃদয় "Mentor" অর্ণব দার কাছে আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই । দেবোপমদা-মিনিদিদির জন্যে জন্মস্থান থেকে দূরে থেকেও আপনজনের অভাব বোধ করিনি । RM-504 ল্যাবের শঙ্করদা এবং আরো অনেকের কাছে পেয়েছি অকৃত্রিম ভালোবাসা, বিপদের দিনে সহযোগিতা ও উপদেশ যা আমার আগামী দিনের পাথেয়, বহু সাধনার ফল, কুবেরের সম্পদের চেয়েও অমূল্য ।