Sunday 14 July 2013

ডাউনলোড

"Left leg first, then the right leg !
Turn around ! Slowly!..
Move forward !...
Relax!..."

আমি আমার আসন এর উদ্দেশ্যে প্রস্থান করিতেছিলাম ।  সহসা এই রোমহর্ষক চাঞ্চল্যকর কথামালায় আঘাত খাইয়া যার পর নাই বিস্মিত হইলাম ! নয়ন মেলিয়া দেখিলাম এক অভূতপূর্ব অনির্বচনীয় দৃশ্য ! দেখিলাম আমাদের শ্রীমান সৌপর্ণ আদর্শ প্রশিক্ষক এর ন্যায় আদেশ দিতেছে ; আর ট্রেন এর উচ্চতম berth এ অবস্থিতা দুর্দম কৃষ্ণাঙ্গি  তরুণী বাধ্য শিষ্যার ন্যায় উহা পালন করিতেছে ! বোধ হয় ইহাকেই বলে ভাগ্যের পরিহাস ! যাহার মধুর আহবান তুমি তুচ্ছ করিয়া চলিয়া গিয়াছিলে  গরজে ; আজ তাহারি হস্তে আপন ভাগ্য সঁপিয়া দিতে হইলো !

আমরা Goa ভ্রমনের পর মুম্বাই এক্সপ্রেসে এ মুম্বাই ফিরিতেছিলাম । আমাদের অনেকের ticket একই জায়গায় কাটা হইয়াছিল ! একটি cancel  করিবার ফলে যে শুন্যস্থান সৃষ্টি হয়, তাহা যে এই ভাবে পূরণ হইবে আমরা ধারণা করিতে পারি নাই ! দেখি সেখানে এক কৃষ্ণ বরনা আসিয়া বসিয়া আছে । প্রথম সাক্ষাতেই মনে হইলো উহার মাতৃদেবী জন্মের পর ভুল করিয়া উহার মুখে মধুর পরিবর্তে লঙ্কা দিয়াছিলেন ! প্রথমেই সে নিজ পাদুকা কোথায় রাখিবে সে বিষয়ে প্রবল ব্যগ্র হইল । অতঃপর  আমাদের কাহারও একজনের upper berth চাহিয়া বসিল । আমি সহৃদয় এর মত তাহা অবিলম্বে  তরুনীর ঝুলিতে দান করিলাম !
কিয়ত কাল পর কৃষ্ণা উপরে উঠিবার প্রচেষ্টায় রত হইলেন । অর্থাত upper berth এর উপর । ইহাতে বিস্ময় এর কারণ দেখিনা । নারীর ধরন বাষ্পের মতন । উভয়েই উর্ধমুখী ! মাথায় ওপর চড়িতে উহাদের তুলনা নাই । প্রথমে ওপরে চড়িয়ে বসেন । পরে বিপদ উপস্থিত হইলেই অশ্রু হইয়া বর্ষিত হন । অতএব উত্তরণ নারীর ধর্ম । তাহার জন্যে উহাদের কোনো দোষ নাই । অগ্নির ধর্ম দাহন করা । দাহ্য পাইলেই দাহন করিয়ে তবে খান্ত হন ।  ইহাই প্রকৃতির নিয়ম । আর নিজ ধর্মের বিরুদ্ধ আচরণ আমাদের সমাজে বিশেষ ভাবে নিন্দনীয় । নারী অনিন্দিতা ! বিশেষ করিয়া তিনি যদি যুবতী  হন !

যাহাই হউক, তনয়া upper berth এ  চড়িবার জন্যে সচেষ্ট হইলেন । কিন্তু এই কার্য সহজে সমাপ্য ছিল না ।  দেবী বার বার চেষ্টা করিতেছিলেন, এবং বার বিফল হইতেছিলেন !  ইহাতের আমাদের সৌপর্নের পৌরুষ জাগিয়া উঠিল !  সেই মুহুর্তে ওই মহাপুরুষের আদম্য নিশ্সার্থ সমাজ সচেতনতা উহার অন্তরে প্রবল ঘা দিতেছিল । অবলা অসহায় তনয়ার বিপদে ওনার হিতার্থে মৃদু কন্ঠে বলিল
                                                  "Do you need help?"
আমি মনে করি ইহা মহত প্রচেষ্টা ।  নারীর উত্থানে বহু মনীষী বিশেষ কৃতিত্বের সাক্ষ্য রেখে গেছেন । আমাদের সৌপর্ণ ও একই প্রচেষ্টায় লিপ্ত ।  কিন্ত দুর্দম মারাঠিনি এই অনুরোধ উপেক্ষা করিয়া একাই উঠিয়া গেলেন !।  দর্শক মন্ডলী একাগ্র চিত্তে এই উত্তরণ নিরীক্ষণ করিতেছিলেন । হঠাত সম্বিত হইলো কৃষ্ণা আজানু লম্বিত বসন পরিয়া আছেন ! তাই আর শেষ পর্যন্ত কৃষ্ণকলির উত্থানের গতিপথ লক্ষ্য করা গেল না । berth এ উঠিয়াই নব-জলধর-বরনার অঙ্গে শুভ্র মেঘের প্রলেপ পরিল । সাদা চাদর মুড়ি দিয়া মেয়ে ঘুমাইয়া পরিল । কালো চুলের এক গুচ্ছ সাদা চাদরের ফাক হইতে দেখা গেল । ইহা যেন সলতা, বিস্ফোরকের অঙ্গ হইতে নির্গত হইয়া তরুণ পুরুষ হৃদয় এ বিপ্লব সৃষ্টি করিতেছিল ! সলতার মুখে কেবল অগ্নি সংযোগের অপেক্ষা ! করিলেই বিস্ফোরণ  !

বিস্ফোরণ  হইলো না । তবে যাহা হইলো তাহা বিস্ফোরণের চেয়েও রোমাঞ্চকর !

দদুল্যাময়ী  ট্রেন, দদুল্যময়ী শ্যামা upper berth এ । যেন ঝুলন এর আবেশে রাই এর তনু মন ঘন ঘন আন্দোলিত হইতেছে ! রাধিকা উপরে বসিয়ে দুলিতেছেন । নিচে আমাদের কানাই মুরারী মুগ্ধ হইয়া তাহা অবলোকন করিতেছেন । তবে কলি কালের রাধা কালো আর কৃষ্ণ সুভ্র ! সেই সাদা কালোর মিলনে কত শত রঙের বিচ্ছুরণ ঘটিয়া  থাকে সে বিষয়ে সবাই অবগত আছেন ! শেক কবির Romeo - Juliet এর সেই দৃশ্যের কথাও নয়নে ভাসিয়ে ওঠে, যেথা শ্রীমান romeo নিচে বাগানে বসিয়া চন্দ্রিমার সহিত বারান্দায় অবস্থিতা juliet এর তুলনা করিয়াছিলেন । এখানে বারান্দা নাই, বাগানও  নাই । আছে berth আর চলন্ত ট্রেন এর কামরা । আছে বঙ্গ সন্তান আর মারাঠি ললনা ।  আর আছে নির্লজ্জ বেহায়া দর্শক মন্ডলী !

ইতি মধ্যে অয়নদার মধ্যে ভাব এর জগরণ ঘটিয়াছে । তাহার কন্ঠে শ্যামাসঙ্গীত খেলিতেছিল । এই ভাব মাতৃভাব সন্দেহ নাই । কিন্ত এই মাতা অবশ্যই নিজের নয় । সম্ভবত নিজের ভবিষ্যত প্রজন্মের ! তাহার মনের ভাব গুলি লিখিতে চাইলে কথ্য ভাষায় লিখিতে হইবে । এবং সেগুলি নিতান্তই অকথ্য হইবে ! আমরা এখানে মহত উদ্দেশ্যে উচ্চ্য ভাষায় উচ্চে আবস্থিতার কথা আলোচনা করিতেছি । এবং নিতান্তই সুদ্ধ মনে এই অদ্ভুত ঘটনা হইতে জীবনের অমোঘ জ্ঞান আহরণ করিতেছি !

ইতি মধ্যে জিয়াদা ও প্রসেনজিতদা সৃষ্টির এই অতুলনীয় ঘটনা দর্শন করিতে উপস্থিত হইয়াছে । উভয়েই একই সাথে বিস্মিত ও পুলকিত হইয়াছে । জিয়াদা কন্যাটিকে তির্যক দৃষ্টিতে পরিক্ষা করিয়াই আমার পানে দৃষ্টি নিক্ষেপ করিল । ভাবখানি এই  - " আমি কি আর নিজের জন্যে দেখিতেছি রে পাগলা ? তোর পাশে কেমন মানাইবে তাহাই ভাবিতেছি মাত্র !"  প্রসেনজিত দার মুখে মৃদু মৃদু হাস্য খেলিতেছিল । প্রসেনজিতদার মা-বাবাও পুলকিত হইতেছিলেন । ওনারা না থাকিলে আমি অবলা নারীটির মনোবল বর্ধনের প্রচেষ্টা করিতাম । তবে মহানুভব সৌপর্ণ যেখানে একাই এই গুরু ভার আপন স্কন্ধে গ্রহণ করিয়াছে, তখন অতি সন্যাসী তে গাজন নষ্ট করিয়া লাভ নাই !

আসলে নামিবার সময় হইয়াছিল মহা বিপদ ! তরুণী নামিতে গিয়া দেখে কোনো অজ্ঞাত কারণে সে নামিতে পারিতেছে না ! তখনি সে কাতর হইয়া বিষ্ণুর দশম অবতার এর সরনাপন্ন হইয়া পরে ।  ভক্তের ডাকে সারা না দিয়া ঈশ্বর কি থাকিতে পারেন ?

কৃষ্ণকলিরও তাহার  নিম্ন বস্ত্রের পরিমান সম্বন্ধে সচেতন হইলো নামিবার প্রথম প্রচেষ্টাতেই ! এক হস্তে  সে berth এর rod  ধরে, অন্য হস্তে skirt সামলায় ! ফলে প্রথম বার তার মুখমন্ডলে তেজ এর বদলে বেথা অনুভব করিলাম । তাহা দেখিয়া মহাত্মা সৌপর্ণ আরও মধুর ভাবে উহাকে নির্দেশ দিতে লাগিল । প্রথমে মেয়েটির প্রথম চরণ rod এ পরিল, তার পর আরেকটি । এই করিয়া দেবী নামিতে লাগিলেন । আহা সে কি দৃশ্য ! পাহাড়ের গা বাহিয়া যেন কালো ঝরনা নামিয়া আসিতেছে ।  মনে হইতেছিল, নিখিল বিশ্ব চরাচর যেন সমস্থ কর্ম ভুলিয়া এই নয়নাভিরম ঘটনা অবলোকন করিতেছে ! দেব, গন্ধর্ব, কিন্নর সবাই  যেন এক নিশ্বাসে এই ঘটনার মহাসমাপ্তির জন্যে অপেক্ষা করিতেছে !

অবশেষে সেই দৈবক্ষণ উপস্থিত হইলো ! সেই দুর্দম দুর্বিনীত নারী আজ পরাভূতা ! সকল অভিমান ভুলিয়া শান্ত বালিকার ন্যায় সে boggy র ভূমিতে অবতীর্ণ । অর্থাত "DOWNLOAD COMPLETE !"

সৌপর্নের জন্যে গর্বে আমাদের বুক সহস্র হস্ত ফুলিয়া উঠিল ! মনে হইতেছিল যেন তিন ভুবন জুড়িয়া শঙ্খ ঘন্টা কাঁসর বাজিতেছে ! দেবতারা স্বর্গ হইতে পুষ্পবর্ষণ করিতেছেন !  কল্পতরু শ্রী রামকৃষ্ণদেব পতিতাদের উদ্ধার করিয়াছিলেন । কিন্তু কোনো নারীর অধোপতন ঘটাইয়া তাহাই উদ্ধার এর কীর্তি এর পূর্বে বোধ করি কোনো মহামানবই করিতে পারেন নাই ! এই ঐতিহাসিক কীর্তির সাক্ষী হইলো মুম্বাই এক্সপ্রেসের এই কামরা । আমার মনে হইলো করতালি দিয়া সহাস্যে দুই জন কে অভিনন্দন জানাই । কিন্তু ইহাতে সবাই কি পরিমান অপ্রস্তুত হইতে পারেন তাহা ভাবিয়া বহু কষ্টে নিজেকে নিবৃত করিলাম ! সদ্য উধৃতা রমনী কোমল নয়নে তার পরিত্রাতা পুরুষ এর পানে চাহিলেন । ততোধিক কোমল মধুর বাক্য তার মুখপদ্ম হইতে নিসৃত হইলো - "Thank you " ! সৌপর্ণ দিগ্বিজয়ী বীর এর মত তা গ্রহণ করিল!  আমরা তাহা দেখিলাম ! নিতান্ত নিষ্পাপ চিত্তেই, বলাই বাহুল্য ! 


No comments:

Post a Comment