Tuesday 31 October 2017

মালি

তোকে লাল মাটির দেশে প্রথম দেখেছিলাম,
তখন তোর ভোর;
তোর গায়ে ফুটেছিলো শিমূল, পলাশ।
তোকে দিয়েছিলাম ময়ূরের রঙ, পরেছিলিস খোঁপায়
তোকে দিয়েছিলাম চাঁদের হাসি, পরেছিলিস ঠোঁটে ।
আমায় বলেছিলিস --
"আমি গোলাপ, রজনীগন্ধা হতে পারি
যদি তুই হোস মালি ।"
এরপর তোর সকাল হলো ।

তারপর তোকে দেখি শিলং-এর কানা গলিতে,
তখন তোর ভীষণ দুপুর !
তোর ঝলসে যাওয়া দেহে
বস্ত্র প্রায় পুড়ে গেছে,
সেটুকুও রাস্তার কুকুর ছিড়ে খাচ্ছে !
গায়ে তোর দগদগে রক্তজবা !
গভীরে তলিয়ে যাচ্ছিলিস,
নরকের চোরাবালিতে !
আমার জামার খুঁট আঁকড়ে ধরেছিলিস
ভাগ্গিস দেখেছিলাম তোকে !

তোকে আনলাম আমার ছোট্ট বাগানে
যেখানে শয়ে শয়ে তুই ছিলিস  ।
কোনো তুই শালুক ছিলিস,
কোনো তুই চন্দ্রমল্লিকা ছিলিস,
অনেক আগে ।

এদের মাঝে তুই একদিন
শাখা গজালি, আবার কচি পাতা হলো ।
দিনে দিনে বটগাছ হলি,
ফুল হলো না, কিন্তু নরম ছায়া হলো ।
তার তলায় আশ্রয় পেলো
কত না-ফোটা কুঁড়ি ।
তোর তখন সন্ধে ।

আস্তে আস্তে তোর রাত হলো,
সেঁতসেঁতে অন্ধকারে এলো
শেয়াল, কুকুর, পেঁচা
আদিম খিদেয় ঝাঁপিয়ে পড়লো,
ক্ষত বিক্ষত করলো তোকে !
কিন্তু তাদের কুঁড়িদের ছুঁতে ছুঁতে
আমার ঘুম ভেঙে গেলো ।

তোর আর ভোর হলো না !
তোর অজস্র ক্ষতয় পারিজাত ফুটেছিলো ।
আমার কোলে মাথা রেখে
শেষ বার বলেছিলিস --
"আমি গোলাপ, রজনীগন্ধা হতে পারলাম না,
কিন্তু এরা হতে পারে ।"

এই কুঁড়িরা আজ
সুগন্ধি ফুলে ভরা বটগাছ হয়েছে
তাদের ফুলও আছে, ছায়াও ।
আমি আজও মালি ।

--
কৃপা

পুনশ্চ : Rescue and Relief Foundation এর মতো সমাজ কল্যাণে আত্মনিবেদিত সংগঠন এবং তাদের নির্ভীক কর্মীদের জানাই আমার অন্তরের অর্ঘ্য ।

No comments:

Post a Comment